দৃষ্টিপাত রিপোর্ট \ উৎপাদনে গতিশীলতা, জীবন, যৌবন সবই ছিল সাতক্ষীরার সুন্দরবন বস্ত্র কলের, দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে মিলটির সুনাম আর সুখ্যাতি। স্বমহিমায় জাগরন ঘটে মিলটি। চকচকে, ঝকঝকে, ধবধবে বহুবিধ মেশিনের সমারোহ, শত শত শ্রমিকের উপস্থিতি আর একাগ্রচিত্তে উৎপাদনে নিবেদিত থাকা মিলটি যেন ক্রমান্বয়ে চালিকা শক্তি, প্রাণভোমরা হারাতে বসে। ১৯৮২ সালের শুভ সকালে সাতক্ষীরার আকাশে সুন্দরবন বস্ত্রকল (সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলস) নামের যে সূর্য উদিত হয় এবং বছরের পর পর যে সূর্যের আলোয় আলোকিত হতে থাকে সাতক্ষীরা সেই শুভ আলোকউজ্জ্বল সূর্য ডুবতে শুরু করে, কিন্তু কেন? এক শ্রেনির কর্মকর্তা কর্মচারির অনিয়ম, দুর্নীতি, সেই সাথে শ্রমিকদের মধ্যে দলাদলি, বিভাজন, কাজের প্রতি অনাগ্রহ, ফুল টাইম কাজনা করে ফুল টাইমের মুজুরী গ্রহন আর এ ক্ষেত্রে কর্মকর্তা কর্মচারীদের একটি অংশের নেশায় সব মিলে অনিয়মের ভুত চেপে বসে মিলটিতে। সর্বাপেক্ষা যে বিষয়টি অনুপস্থিতি পরিলক্ষিত হয় তা হলো অব্যবস্থাপনা। স্বজন প্রীতি, গ্র“পিং সেই সাথে অপরাজনীতির ছায়া মিলটিকে ক্ষয়িষ্ণুতার দিকে ধাবিত করে, যে মহান লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য নিয়ে সাতক্ষীরার মাটিতে বস্ত্রকল প্রতিষ্ঠিত হয় সেই লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য পুরনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার বীজ রোপন করতে তাকে মিলের সাথে সংশ্লিষ্টরা। বিগত দিনে মিলের সাথে সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের অনেকের সাথে মিলটির বিষয়ে খোজ নিলে তাদের মাঝে হতাশার ক্ষত চিহৃ যেমন পরিলক্ষিত হয়েছে অনুরুপ ভাবে অনিয়ম মিলটির প্রতিটি শাখায় প্রবেশ করে বলে অভিযোগ করেছে, অনুসন্ধানে জানাগেছে মিলটির উৎপাদনের কাঁচা মাল ক্রয় হতে উৎপাদিত সুতা সামগ্রী বেঁচা কেনায় ছিল অস্বচ্ছতায় ভরা, সরকারি প্রতিষ্ঠান আর তাই যে যার মত করে অনিয়ম করেছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায় পৌছায় যে কারোর প্রতি কারোর দায়বদ্ধতা ছিল না। সরকার কতদিন লোকসানের বোঝা গুনবে? ২৯.৪৭ একর জমির বিশালাকৃতির আয়তনের সুন্দরবন বস্ত্রকলের অভ্যন্তরে যে প্রানের সঞ্চার ঘটে, প্রতিনিয়ত দূর দূরান্ত হতে শ্রমিক সহ শ্রমজীবী পরিবার আসতো, সেই মিল এক সময় উৎপাদনহীনতায় পর্যবসিত হয়। সুন্দরবন বস্ত্রকলের সুতা আর থান কাপড় কেবল দেশের অন্যান্য উৎপাদন প্রতিষ্ঠানের চাহিদা মিটাতো না, সুন্দরবন বস্ত্র কলের সুখ্যাতি দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডল স্পর্শ করে। ২০০৭ সালে লোকসানের ভারে জর্জরিত মিলটির উৎপাদন বন্ধ ঘোষনা করা হয়, সেই হতে মিলটি নিরব, নিথর মৃতপ্রায়।