মাছুদুর জামান সুমন \ মাঠে মাঠে আমন উৎসব সোনালী ধান আর পাকা ধানের উচ্ছলতায় মন ভরে উঠেছে কৃষক কৃষানীর। চিরাচরিত নবান্ন উৎসব সময়ের ব্যবধানে আমন উৎসবের রুপ ধারন করেছে। হেমন্তের প্রথম মাস কার্ত্তিক এই মাসে শুরু হয়েছে পাকা ধান কাটার মহাউৎসব। অঘ্রায়নেও চলবে পাকা ধান ঘরে তোলার কর্মযজ্ঞ। সাতক্ষীরার মাঠে মাঠে হেমন্তের মিষ্টি মধুর রোদ্রের সাথে কৃষকরা মনের আনন্দে ধান কেটেই চলেছে। এই জেলা বরাবরই শস্যভান্ডার হিসেবে খ্যাত দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় আমন জেলার কৃষি উৎপাদন তথা ধান উৎপাদনকে সুসংহত করেছে। বার বার ও সময়ে সময়ে প্রকৃতির নিষ্ঠুরতায় কৃষকের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে আবার প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে ধান রোপন করে সোনার ফসল ফলিয়েছে। এবার উঠতি আমন রোপনের সময় গুলোতেও কৃষক কৃষকরা ব্যাপক ভিত্তিক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখিন হয়। অনাবৃষ্টি, এবং বৃষ্টিহীনতা, প্রখর রৌদ্র আমন রোপনকে ব্যাহত আর বিপদসংকুল করে তোলে। কৃষকরা সেচযন্ত্রের মাধ্যমে পানি উত্তোলন পরবর্তি চাষাবাদ তথা আমন রোপন করে। সাতক্ষীরার শত শত একর জমির আমন প্রখর রৌদ্র ও বৃষ্টিহীনতার কারনে ধান গাছ হলুদাভাব হয়ে নষ্ট হয়, এখানেই শেষ নয় আমন চাষের জন্য পা ফেলানো বীজতলা পানির অভাব হেতু নষ্ট হয়। কাঙ্খিত বৃষ্টিপাতের দেখা মেলে শেষ সময়ে যে কারনে কৃষককূল নতুন ভাবে পা ফেলে আমন চাষ করে যা উৎপাদনে খরচ দ্বিগুনে পৌছায়। দীর্ঘ পথ পরিক্রমা ঋন, দেনা, অতিরিক্ত খরচ শেষে বর্তমান সময় কৃষকের জন্য মহেন্দ্রক্ষন, সাতক্ষীরার সোনার কৃষকরা অর্থ কষ্টে, বৃষ্টিতে ভিজে, রৌদ্রে পূড়ে যে সোনার আমন ধান উৎপাদন করেছে সেই স্বপ্নের ধান কেটে বাড়ী নিয়ে যাচ্ছে। মাঠের আমন হাসি আর উৎসব গ্রামে গ্রামে বইছে আনন্দ স্রোত, আনন্দ আয়োজন, কৃষকরা মাঠে ব্যস্ত ও পরিশ্রমী সময় অতিবাহিত করছে কৃষানীরাও কম নয় ধান মাড়ানো, সিদ্ধ, শুকনো সব শেষ মিলে নিয়ে চাল তৈরী সব স্তরেই কৃষানীর মমতা মাখা পরিশ্রম। নতুন ধানের নতুন চালের পিঠা পায়েশ আথিথেয়তা সময় অতি দ্রুততার সাথে ঘনিয়ে আসছে। সাতক্ষীরার বিভিন্ন মাঠে মাঠে ধান কাটার পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ ধান মাড়ানো মেশিনের উপস্থিতি দৃশ্যমান, উক্ত মেশিনের মাধ্যমে ধান মাড়ানো হচ্ছে। এই প্রতিনিধি সরেজমিন একাধিক এলাকার আমন মাঠ পরিদর্শনে দেখেছেন কৃষকের কষ্টের ঘাম, পরিশ্রমের প্রসূতির হাসির বিচ্ছুরন ফুটছে। আশাশুনি এলাকার কৃষক মামুন জানান এবার যথাসময়ে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় একাধিকবার পাতা ফেলা, ক্ষেত প্রস্তুত করা সহ সেচ যন্ত্রের মাধ্যমে পানির সংস্থান অন্যদিকে শ্রমিক মুজুরী বৃদ্ধি সব মিলে উৎপাদন খরচ অনেক বেশী তারপরও সুখের কথা ধানের মূল্য বিগত বছর অপেক্ষা বেশী বিধায় লোকসানের সম্ভাবনা হয়ত নেই। এ প্রতিনিধি আরও প্রত্যক্ষ করলেন মাঠে মেশিনের মাধ্যমে ধান মাড়াই পরবর্তি অনেক কৃষক মাঠেই পাইকার ব্যাপারীর কাছে ধান বিক্রি করছে সেই সাথে বিচুলী ও বিক্রি হচ্ছে। গরু খাদ্য হিসেবে বিচুলীর চাহিদা সা¤প্রতিক সময়ে অনেক বেশী সেটা স্পষ্ট হলো। সাতক্ষীরার সর্বত্র আমন উৎসবের বাতাস, গ্রামীন অর্থনীতিতে সুবাতাস বইছে। নতুন ধানে কৃষক অর্থ পাচ্ছে, ঋন দেনা পরিশোধ করছে। বেকার কৃষি শ্রমিকরা ধান কাটার জন্য অর্থ পাচ্ছে। এক কথায় বলা যায় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির এই সময় গুলোতে গ্রামীন জনপদে অর্থের উপস্থিতি হওয়ায় ভাল দিন যাপন করছে কৃষক সমাজ, দীনমজুর, কৃষি শ্রমিক সহ সংশ্লিষ্টরা। কবি জীবনানন্দ দাসের সেই অমর উক্তি- এই মাঠে এই ঘাসে ফসলা এ ক্ষীরুযে যে গন্ধলেগে আছে।