শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫, ০৬:১৬ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

সাতক্ষীরায় কুল চাষে সাফল্য ঃ অর্থনীতিতে বইছে সুবাতাস

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৯ জানুয়ারী, ২০২৩

মাছুদুর জামান সুমন \ সাতক্ষীরার হাটবাজারে শীতের সবজির উপস্থিতি যেমন মন জুড়াচ্ছে অনুরুপ ভাবে হাট বাজারে বিভিন্ন জাতের কুলের উপস্থিতি জন মানুষের প্রানের সঞ্চার ঘটে। হরেক ধরনের কুল, ভিন্ন স্বাদের ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকের কুল আসা শুরু করেছে। সাতক্ষীরা বরাবরই আমের জন্য বিখ্যাত হাল আমলে আমের সীমান্ত পেরিয়ে কুল অভাবনীয় স্থান দখল করেছে। জেলার বিস্তীর্ন এলাকায় বাণিজ্যিক ভাবে চাষ হচ্ছে কুলের পরিস্থিতি বলেই দিচ্ছে কুল উৎপাদনের বিপ্লব ঘটেছে এই এলাকায়। পৌষের শুরু হতে মধ্য চৈত্র পর্যন্ত চাষীরা কুল সরবরাহ করে থাকে এমনটি জানালেন শহরের কুল ব্যবসায়ী আঃ মজিদ। কুল চাষে ইতিমধ্যে অনেকের ভাগ্য ফিরেছে, স্বাবলম্বী হয়েছে অর্থনীতির বুনিয়াদ সৃষ্টি হয়েছে। গ্রামীন অর্থনীতিতে কুল নির্ভর অর্থনীতির বাতাস বইছে। কুল কেবল রসনা বিলাস নয়, বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে ও কার্যকরিতায় পুষ্টি সমৃদ্ধ ফল। কুলের আগুনের শেষ নেই রক্তশোধন অর্থাৎ রক্ত পরিস্কার হজম শক্তি হিসেবে কাজ করে। পেটে গ্যাস, খাবারের অরুচি দূরীকরন ও করে কুল। সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকায় বাগানের পর বাগানের বাহারী সব কুল গাছ। একাধিক কুলচাষী জানান মধ্য মাঘ থেকে মধ্য চৈত্র এবং মধ্য শ্রাবন থেকে মধ্য ভাদ্র কুল চারা রোপনের উপযুক্ত সময়। চারা রোপনের কিছুদিন পূর্বে চারিদিকে ১ মিটার বা সমপরিমান গর্ত করে নিলে চারা রোপনের উপযুক্ত হয়। সারিবদ্ধ ভাবে কুল গাছ রোপনের ক্ষেত্রে প্রতি গাছ প্রতি ১ মিটার ফাঁকা রাখতে হয়। পরিচর্যা, সার, জৈব সার প্রয়োগ করতে হয়। কুল গাছ পরিচর্যা এবং অধিক পরিমান কুল উৎপাদনের ক্ষেত্রে সর্বাপেক্ষা জরুরী বাগান ছাটাই প্রক্রিয়া, যথাযথ ভাবে এবং যথা নিয়মে ছাটাই না করলে বাগান নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা যেমন থাকে অনুরুপ যথাযথ পরিমান কুল উৎপাদন হয় না। রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থাপনাও অধিক ফলনে সহায়ক। সাতক্ষীরায় বর্তমান সময় বিভিন্ন প্রজাতীর কুল উৎপাদিত হচ্ছে যার মধ্যে দেশী জাম হালকা টক মিষ্টি কুল, বিলেতী কুল, নারিকেল কুল, কাশ্মেরী আপেল কুল, আপেল কুল, বিভিন্ন ধরনের বৈজ্ঞানিক নাম সমৃদ্ধ কুল বারি কুল-১, বারি কুল ২, বারিকুল ৩, আপেল কুল, বাউকুল, প্রভৃতি। উৎপাদন এবং পরিচর্যা ও চাষাবাদ খরচ পরবর্তি লাভবান হচ্ছে কৃষকরা। কুলচাষী আরশাদ আলী জানান আশানুরুপ কুল উৎপাদন হলে বিঘা প্রতি ১১০ হতে ১৩০ মন ফলন পাওয়া যায়, অন্যদিকে বিঘা প্রতি ৩০ হতে ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়। সাতক্ষীরার কুল চাষে যে অসাধারন বিপ্লব ঘটেছে তা একদিনে হইনি, প্রথম দিকে ধান, পাট, সবজি বা অপরাপর কৃষি চাষাবাদ বাদ দিয়ে কুল চাষে আগ্রহ তথা লোকসানের ভয়ে অগ্রসর হতে চাইনি কিন্তু কে কুল চাষে এগিয়ে আসে এবং সফল হয় বর্তমান সময়ে বাস্তবতা অগনিত চাষী কুল চাষে সফল ও লাভবান হচ্ছে। বাগানে বাগানে তারার মত জল জল করছে কুল, কোন কোন বাগানের কুল স্বাদ-হলুদ আবার হলে সোনালী ও হলুদাভাব, দেখলে মন ভরে যাবে যে কারোর। আলোকিত কুল চাষে, ফলনে এবং উৎপাদনে পোকা মাকড়ের উপস্থিতি এবং প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও দুর্বিপাক কুলচাষকে বাঁধাগ্রস্থ করে। সা¤প্রতিক বছর গুলোতে প্রাকৃতিক দূর্যোগ সহ বহুবিধ কারনে কুলচাষীরা কাঙ্খিত ফলন হতে বঞ্চিত হচ্ছে। সাতক্ষীরার কৃষি দপ্তরকে কুল চাষকে এগিয়ে নিতে বিশেষ কার্যকর ভূমিকা পালনের পাশাপাশি প্রশিক্ষন সহ বীজ, সার, চারা সহায়তা দেওয়া জরুরী, সরকারি ভাবে কৃষকদের বিভিন্ন উৎপাদনের সহজশর্তে, বিনা সুদে ঋন দান সহ প্রনোদনার ব্যবস্থা করে থাকে কুল চাষীদের ঋনদান সহ প্রনোদনা দেওয়া জরুরী। সাতক্ষীরার কুল চাষ কেবল সাতক্ষীরার চাহিদা মেটাচ্ছে তা নয় এই জেলার সুস্বাদু পুষ্টিসমৃদ্ধ কুল রাজধানী ঢাকা সহ অন্যান্য বড় বড় বিভাগীয় শহরে যাচ্ছে। যতই দিন যাচ্ছে ততোই সাতক্ষীরার কুলচাষ গতি ফিরছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে সাতক্ষীরার অর্থনীতিতে কুল বিশেষ ভূমিকা রাখবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com