মাছুদুর জামান সুমন \ সুস্বাদু এবং মিষ্টিফল হিসেবে পেয়ারার পরিচিতির শেষ নেই। আমাদের দেশের আবহাওয়া জলবায়ূ ও ভূ-প্রকৃতি পেয়ারা চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। অতি প্রাচীনকাল হতে বাংলাদেশের মাটিতে যে সকল ফলের উপস্থিতি তার মধ্যে পেয়ারা অন্যতম। বর্তমানে আমাদের দেশে পেয়ারার উৎপাদন অতীতের যে কোন সময় অপেক্ষা বৃদ্ধি পেয়েছে। সাতক্ষীরার বাস্তবতায় পেয়ারা চাষ বিশেষ সাফল্যের মুখ দেখেছে। সহনীয় এবং অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে পেয়ারা পাওয়া যায়। জেলার বিভিন্ন এলাকায় উলেখযোগ্য সংখ্যক পেয়ারা বাগানের উপস্থিতি এই চাষকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছে। যতই দিন যাচ্ছে ততোই এক শ্রেনীর পেয়ারা চাষীরা পেয়ারা চাষে আগ্রহী হচ্ছে। কয়েক বছর আগেও চাষীরা অন্যান্য কৃষি কাজ বাদ দিয়ে পেয়ারা চাষ ঝুকি মনে করলেও ক্রমান্বয়ে সেই ভাবনা নেই সকলেই ঝুকছে পেয়ারা চাষে। এক সময় বাড়ীর ভিটেয়, রাস্তার ধারে হাতে গোনা দুই একটি পেয়ারা গাছের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যেত এবং তা দেশী পেয়ারা আকারে ক্ষুদ্রাকৃতির। বর্তমানে হাইব্রিড পদ্ধতিতে পেয়ারার বীজ সরবরাহ করা হয়। আমাদের দেশে বানিজ্যিক ভিত্তিতে যে সকল পেয়ারার চাষ হয় তার মধ্যে কাজি পেয়ারা, থাই পেয়ারা, বারী পেয়ারা উলেখযোগ্য। পেয়ারার অপরাপর জাতগুলোর মধ্যে উলেখযোগ্য পলি পেয়ারা, মুকুন্দপুরী, আঙ্গুর পেয়ারা, স্বরুপ কাঠি প্রভৃতি। পেয়ারা চাষীরা জানান বলা যায় সব ধরনের মাটিতে পেয়ারা চাষ সম্ভব, প্রতিটি গাছ অপর গাছ হতে অন্তত ৭/৮ হাত দূরত্বে রোপন করতে হয়। পেয়ারা বাগানে পানি নিষ্কাষনের পদ্ধতি সহজতর করনের ক্ষেত্রে প্রতিটি গাছের গোড়ায় মাটি উঁচু করে রাখতে হয় যেন সহজেই পানি নিষ্কাষন হয়। জৈব সার এবং পটাশ পেয়ারা বাগানের মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। বানিজ্যিক ভাবে পেয়ারা চাষ সা¤প্রতিক বছর গুলোতে সাতক্ষীরার বিভিন্ন অঞ্চলে এতটুকু প্রসার ঘটেছে যে উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে এবং চাষীরা লাভবান হচ্ছে। সাতক্ষীরার হাটবাজার গুলোতে দুই তিন বছর পূর্বে বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি এলাকা হতে পেয়ারা আসতো কিন্তু বর্তমানের চিত্র জেলার হাটবাজার গুলোতে দেখতে পাওয়া পেয়ারা সাতক্ষীরাতেই উৎপাদিত। পেয়ারা চাষের মাধ্যমে ইতিমধ্যে বহু পরিবারের ভাগ্য ফিরেছে। বিপুল সংখ্যক বেকার মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। বাস্তবতা হলো অর্থনীতিতে চাষীরা স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি পেয়ারা নির্ভর গ্রামীন অর্থনীতির ভিত রচিত হয়েছে। সাতক্ষীরার পেয়ারা জেলার চাহিদা মিটাতে রাজধানী ঢাকা সহ অপরাপর বড় বড় শহরগুলোর চাহিদা মেটাচ্ছে। অত্যন্ত পুষ্টিকর ফল হিসেবে পেয়ারা কেবল মানব দেহের বিশেষ উপকারী তা নয়, সা¤প্রতিক সময় গুলোতে অতিথি আপ্যায়নেও এর ব্যবহার বহু গুনে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদেশী ফল আপেল, কমলালেবুর মুল্য কেজি প্রতি দুইশত টাকার উর্ধে যেখানে পেয়ারা ৫০/৬০ টাকা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে যা ক্রেতাদের জন্য সহনীয়। পেয়ারা চাষে দিনে দিনে গতি ফিরছে, চাষীরা অনেক সময় প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারনে ক্ষতিগ্রস্থ হয় বিধায় কৃষি দপ্তরকে পেয়ারা চাষে বিশেষ সহযোগিতার পাশাপাশি চাষীদের প্রশিক্ষন এর বিকল্প নেই।