দৃষ্টিপাত রিপোর্ট \ ছাগল আমাদের দেশের অতি পরিচিত এবং গুরুত্বপূর্ণ পশু সম্পদ। গৃহপালিত প্রাণি হিসেবে ছাগল পালন এবং লালন গ্রাম বাংলার চিরায়ত চিত্র। এক সময় দরিদ্র জনগোষ্ঠির একটি অংশ আর্থিক স্বচ্ছলতার কারনে ছাগল পালন (পোষা) করলেও সময়ের ব্যবধানে আর বাস্তবতার নিরিখে বানিজ্যিক ভাবে ছাগল পালন হচ্ছে। সাতক্ষীরার বাস্তবতায় বৃহৎ জনগোষ্ঠী ছাগল পালনে নিজেদেরকে নিয়োজিত করেছেন, বানিজ্যিক ভাবে গড়ে উঠেছে ফার্ম। জেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘরে ঘরে ছাগল পালন না হলেও পাড়ায় পাড়ায় ছাগল পালন, রীতিমত উৎসবের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। ছাগল পালনে আর্থিক ভাবে স্বচ্ছলতার ক্ষেত্র যেমন নিশ্চিত হচ্ছে অনুরুপ ভাবে সাফল্য দেখছেন ছাগল পালনকারীরা। সাতক্ষীরায় ছাগল পালন বর্তমান সময়ে আলোচিত আর সাফল্যজনক মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এক সময় মহিলাদের মাঝে এই প্রানি লালন পালনের বিষয়টি বিশেষ ভাবে পরিলক্ষিত হলেও বর্তমান সময় গুলোতে বেকার যুবকদের মাঝে ছাগল পালনের ক্ষেত্র বিস্তৃত হয়েছে। বানিজ্যিক ভিত্তিতে খামারে পঞ্চাশ হতে শতাধিক ছাগল পালন করা হলেও গ্রামীন জনপদে উলেখযোগ্য সংখ্যক বাসাবাড়ীতে ৫টি, ৭টি আবার কারোর কারোর বাড়ীতে ১টি ২টি ছাগল। অতি দ্রুতবর্ধনশীল ও বংশ বিস্তার কারী এই প্রানি লালন পালনে অপেক্ষাকৃত খরচ অনেক কম এবং লাভ বেশী। রোগ বালাই এর ঘটনাও অনেকাংশে কম। ছাগল ক্রয়ে অনেক বেশী অর্থের প্রয়োজন হয় না। খাদ্য ও কম, প্রাকৃতিক উপায়ের খাবার ঘাসই বেশী পছন্দের একই সাথে সুঠাম, স্বাস্থ্যবান ছাগলের জন্য কাচা ঘাস অতি প্রয়োজনীয়। জেলার দেবহাটার পারুলিয়ার ছাগল পালনকারী রমিছা খাতুন জানান সে গত দুই বছর পূর্বে তিন হাজার টাকা দিয়ে একটি বকরি ছাগল ক্রয় করেন একটি ছাগল নিয়েই তার ছাগল পালন শুরু বর্তমানে ১৫টি ছাগলের মালিক তিনি, ছাগলের বংশ বিস্তরের বিষয়ে তিনি বলেন বছরে দুই বার ছয় মাস পর পর ছাগল বাচ্চা প্রসব করে। দুইটা হতে তিনটি পর্যন্ত বাচ্চা দিয়ে থাকে ছাগল। অনেকে ছাগল পালনে এগিয়ে আসছে আগ্রহী হচ্ছে। ছাগলের অর্থনৈতিক মূল্য দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে ছাগলের মাংস, কালো ছাগলের চামড়া অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলছে। ছাগলের দুধের চাহিদার শেষ নেই। য²া ও হাঁপানী রোগের মহাষৌধ হিসেবে ছাগলের দুধের সুখ্যাতির শেষ নেই। সাধারনত ১২ হতে পনের মাসের মধ্যে ছাগল প্রথম বাচ্চা দিয়ে থাকে। কোন কোন ক্ষেত্রে ৯/১০ মাসেও ছাগল গর্ভবতি হয়ে থাকে। বর্তমান বাজার ব্যবস্থায় ছাগলের মাংস (খাসি) কেজি প্রতি এক হাজার টাকা কোন কোন ক্ষেত্রে কম বেশী, বিধায় ছাগলের বংশ বিস্তার যেমন দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে অনুরুপ ভাবে মাংস ব্যবসায়ীরা গ্রামে গ্রামে ঘুরে ছাগল ক্রয় করছে। সাতক্ষীরার পারুলিয়া গরুহাট, আবাদের হাট বারোমাইল হাট, মৌতলা হাট সহ অন্যান্য হাটগুলোতে শত সহস্র ছাগলের উপস্থিতি চোখে পড়ার মত। সাতক্ষীরা হতে প্রতিনিয়ত পিকআপ ভর্তি ছাগল রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে। সা¤প্রতিক সময় গুলোতে ছাগলের এক ধরনের সংক্রমক ব্যাধি, চর্মরোগ, চক্ষুরোগ, যৌন রোগ সহ বহুবিধ রোগ দেখা দিচ্ছে। সাতক্ষীরা জেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তর সহ প্রতিটি উপজেলায় ছাগলের রোগ বালাই দুরীকরনে ও মুক্ত রাখতে বিভিন্ন ধরনের ভ্যাকসিন ও ঔষধ সরবরাহ করা হয়। অনেকে জানে না তবে বেশীর ভাগ ছাগল পালনকারীরা এ বিষয়ে অবগত ও ভ্যাকসিন পেয়ে থাকে। প্রাণি সম্পদ দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের গ্রামে গ্রামে যেয়ে চিকিৎসা ও খামারে যেয়ে চিকিৎসা প্রদানের পরিবর্তে রোগাক্রান্ত ছাগলকে অফিসে আনার তাগিদ দেওয়ার অভিযোগ ও করেছেন অনেকে। সাতক্ষীরার প্রাণি সম্পদ দপ্তর ছাগল পালনে যথাযথ তদারকি, খামারী ও পালনকারীদের প্রাপ্ত সেবা প্রদান করলে আগামীতে সাতক্ষীরার অর্থনীতিতে ছাগল অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।