বেড়েছে অর্থনৈতিক মূল্য ঃ চাষে আগ্রহী হচ্ছে চাষীরা
দৃষ্টিপাত রিপোর্ট \ বাঙ্গালীর অন্যতম পছন্দের সবজি হিসেবে ওলের পরিচিতির শেষ নেই। যে কোন মাটিতে ওল চাষ সম্ভব। তবে যে স্থানে পানি জমে না বা জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় না সেই সকল জমিতে ওল চাষ এবং উৎপাদন যথাযথ হয়। সাধারনত চৈত্র, বৈশাখ মাস ওল চাষের মোখ্যম সময় হিসেবে বিবেচনা করা হলেও অধিক ফলন এবং লাভজনক করতে সা¤প্রতিক বছর গুলোতে চাষীরা আগাম চাষ শুরু করছে এবং মাঘ ফাল্গুন মাসে ওলের ক্ষেত প্রস্তুত সহ ওল চাকি রোপন করছে। সাতক্ষীরার বাস্তবতায় ওল চাষে সাফল্য আসায় গত কয়েক বছর যাবৎ সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকাতে বানিজ্যিকভাবে ওল চাষ হচ্ছে। ওল চাষীদের সাথে কথা বলে জানাগেছে ওল চাষ এতটুকু লাভজনক এবং উৎপাদন বর্ধক যে বিষয়টি এমন যে এক টাকার বিনিয়োগ অনায়াসে দশ, পনের টাকায় পৌছায়। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই সময় উপযোগী চাষ এবং নিবিড় পরিচর্যার বিকল্প নেই। সাতক্ষীরার সদর উপজেলার আলিপুর, বুইচানা, আবাদের হাট, রইসপুর সহ আশপাশের এলাকা কলারোয়া, তালা এবং পাটকেলঘাটার বিস্তীর্ন এলাকায় গত কয়েক বছর যাবৎ ওল চাষ হচ্ছে। দেবহাটার কামটা, মাটকোমরা এলাকাতে বানিজ্যিক ভাবে চাষ হচ্ছে ওলের। পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক সার, জৈব সার এবং সা¤প্রতিক সময়গুলোতে পল্ট্রি বর্জ ওল চাষে ব্যবহৃত হচ্ছে। সাতক্ষীরার উৎপাদিত ওল জেলার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকা সহ দেশের অপরাপর বাজারের চাহিদা পূরন করছে। বর্তমানে ওল কেজি প্রতি খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০/৬৫ টাকায়। সপ্তাহ পূর্বেও কেজি প্রতি ওলের মূল্য ছিল ৭০/৮০ টাকায়। জেলায় উৎপাদিত ওল ক্ষেত্র বিশেষ ১০/১২ কেজি পর্যন্ত হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে প্রতিটি ওল ৪/৫ কেজি ওজনের। একদা বসতবাড়ীর আনাচে কানাচে, রান্নাঘরের দুয়ারে ওল বীজ রোপন করা হতো, যা পরিবারের সবজির চাহিদা মেটাতে, এ ক্ষেত্রে ওলের চিরচারিত গলা চুলকানোর বিষয়টি সামনে থাকতো। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে আর বাস্তবতার নিরিখে বর্তমান সময় গুলোতে ওল বানিজ্যিক ভাবে চাষাবাদ হচ্ছে এবং অর্থনৈতিক গুরুত্ব বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। সাতক্ষীরার সদর উপজেলার রইসপুর গ্রামের চাষী আমিরুল ইসলাম জানান, তিনি গত দুই বছর যাবৎ ওল চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। ইতিমধ্যে বেকার যুবকরাও অর্থনৈতিক স্বাবলম্বীতাকে সামনে রেখে ওল চাষে আগ্রহী হচ্ছে। ওলের বানিজ্যিক এবং কুটনৈতিক মূল্যের পাশাপাশি ঔষধী গুনে পরিপূর্ণ, ওল এমন এক সবজি যা বুকে জমে থাকা কফ দূরীকরনে বিশেষ ভূমিকা রাখে। মুখের অরুচি রোধে, কোষ্ঠ কাঠিন্য দূরীকরনের ওলের গুনের শেষ নেই। ওল পুড়িয়ে এবং তা লবন দিয়ে মেখে খেলে অশ্বরোগ ভাল হয়। ওলে আছে প্রচুর পরিমান ফসফরাস, আয়রন এবং ভিটামিন এ যা শরীরের প্রদাহ রোধ করে, ওল পা ফোলা এবং দাঁতের জন্য অতি কার্যকর, ওল ভর্তা, ওলের কোমরা, মোরব্বা অতি স্বুসাদু, ওলের ডাটা ও সবজি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সাতক্ষীরা জেলা কৃষি দপ্তর ওল চাষীদের নিয়ে উঠান বৈঠক, চাষাবাদ উপযোগী সার বীজ সরবরাহের মাধ্যমে জেলায় ওল চাষের বিপ্লব ঘটাতে পারে।