দৃষ্টিপাত রিপোর্ট \ সাতক্ষীরা জেলার সর্বত্র ভাঙ্গারী ব্যবসার জমজমাট ক্ষেত্র তৈরী হয়েছে। অব্যাহত এবং পুরাতন গৃহস্থালী সামগ্রী বর্তমান সময়ে আর মুল্যহীন নয় এবং পরিবেশের জন্য হুমকিও নয়, দুয়ারে দুয়ারে প্রতিদিনই ভাঙ্গারী ব্যবসায়ীরা পুরাতন সামগ্রী ক্রয় করে চলেছে। এ পেশায় শত শত বেকার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। ব্যবহার অনুপোযোগী কাচের সামগ্রী, প্যালাষ্টিক পন্য, তামা, কাসা, লোহা, ইলেকট্রিক ফ্যান, খাতা, কাগজ, বই, জুতা, জামা কাপড়, রড, টিন, স্টিল, এক কথায় ব্যবহার পরবর্তি ফেলে দেওয়া সামগ্রীই ভাঙ্গারী হিসেবে পরিচিত, জেলার বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ভাঙ্গারী ব্যবসা দৃশ্যতঃ ব্যাপক ভাবে পরিচিতি পেয়েছে। পুরাতন পণ্য সামগ্রী অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে ক্রয় করে তা ভাঙ্গারী আড়তে বিক্রির মাধ্যমে জীবন জীবিকা নির্বাহ করা সহ সুখেই আছে। সাতক্ষীরার ভাঙ্গারী ব্যবসার অতি উজ্জ্বল ক্ষেত্রে কিছু কিছু বিষয় এই ব্যবসার সাথে জড়িতদের কারোকারো সাথে অপরাধিদের যোগসূত্র সৃষ্টি হয়েছে এমন অভিযোগ প্রায় সময় ভাঙ্গারী ব্যবসায়ীদের আইনের মুখোমুখি হতে হয়। এক শ্রেনির অপরাধ চক্র, চোর সিন্ডিকেট বাসা বাড়ীর মোটর বৈদ্যুতিক ও পানি সামগ্রী ব্যবহৃত পন্য সামগ্রী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মালামাল চুরি করে তা ভাঙ্গারী ব্যবসায়ীদের সরবরাহ করে থাকে। এমনও ঘটনার অবতরনা হয় যে মাদক সেবীরা বাসা বাড়ীর ব্যবহার যোগ্র সামগ্রী ও ভাঙ্গারীদের কাছে বিক্রি করার চেষ্টা করে। জেলার অন্যতম ভাঙ্গারী ব্যবসায়ী ও আড়ৎদার সখিপুরের গোলাম মোস্তফা দৃষ্টিপাতকে জানান গ্রামে গ্রামে ঘুরে অব্যবহৃত সামগ্রী সংগ্রহকারীরা তাদের মালামাল সরবরাহ করে আমরা ট্রাক ভরে তথা রাজধানী ঢাকার মিনফোর্ড সহ অপরাপর পাইকারী বাজারে সরবরাহ করি, তিনি আরও জানান কোন ভাঙ্গারী যদি নতুন কোন সামগ্রী আনেন আমরা তা গ্রহন করি না, অনেকে সরাসরি আড়তে এসে বিক্রি করে এক্ষেত্রে নতুন মালামাল হলে অভিভাবক এবং পরিবারের অপরাপর সদস্যদের শরনাপন্ন হই। ভাঙ্গারী ব্যবসায় শিশু শ্রমিকদের ব্যবহারের বিষয়টি দীর্ঘদিন যাবৎ অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। শিশু শ্রম নিষিদ্ধ থাকলেও এক্ষেত্রে কেউ কেউ তা মানছে না। তথ্যানুসন্ধানে জানাগেছে সাতক্ষীরার ভাঙ্গারী ব্যবসায়ীরা মালামাল কেবল ট্রাক ভর্তি করে রাজধানী ঢাকায় পাঠায় তা নয়, ঘর গৃহস্তের প্রয়োজনীয় সামগ্রী অনেকে বাসা বাড়ীতে ব্যবহারের জন্য কমমূল্যে ভাঙ্গারী আড়ৎ হতে ক্রয় করে চলেছে যে কারনে অর্থের সাশ্রয় ঘটছে। গত কয়েকদিন ভাঙ্গারী আড়ৎগুলোতে ঘুরে দেখা গেছে পুরাতন টিন, বই, খাতা, ইলেকট্রিক ফ্যান, রড, চেয়ার টেবিল বাসা বাড়ীতে ব্যবহারের জন্য ক্রয় করছে। পুরাতন রড ভাঙ্গারী ও টিন ভাঙ্গারী হতে ক্রয় করে বাড়ী নির্মানে ব্যবহার করা হচ্ছে। ভাঙ্গারী আড়ৎ সূত্রে জানা যায় সাতক্ষীরা হতে ট্রাকভর্তি ভাঙ্গারী ঢাকার পাইকারী বাজারে পৌছানোর পর সেখান হতে শ্রেনি ভেদে পুরাতন মালামাল স্ব স্ব কোম্পানীতে সরবরাহ করা হয়। উদাহরন হিসেবে বলা যায় পেলাষ্টিক সামগ্রী, জুতা, স্টিল স্ব স্ব কোম্পানীতে যায় এবং কোম্পানী গুলো উক্ত ভাঙ্গারী সামগ্রী তাদের নতুন মালামালের উপকরন হিসেবে ব্যবহার করে। সাতক্ষীরা হতে প্রতিট্রাক ২৫/৩০ হাজার টাকায় ভাড়ার মাল সহ ঢাকায় যায়। প্রতিদিনই ট্রাক কি ট্রাক ভাঙ্গারী মালামাল পৌছে যাচ্ছে। জীবন জীবিকার মাধ্যম হিসেবে ভাঙ্গারী যেমন বিশেষ আলোকিত অবস্থান সৃষ্টি করেছে অনুরুপ ভাবে ব্যবহার অনুপোযোগী সামগ্রী বিক্রয়ের মাধ্যমে অনেকে অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন, জসিম উদ্দীন নামের এক গৃহস্বামী দৃষ্টিপাতকে জানান কয়েকদিন পূর্বে আমার বাসা বাড়ীর অব্যবহৃত সামগ্রী ভাঙ্গারীর কাছে বিক্রি করে ১৫০০ টাকা পেয়েছি। ভাঙ্গারীদের কাছে বিক্রি না করলে উক্ত মালামাল ফেলে দিতে হতো। দেশের শিল্প ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিতে ও ভাঙ্গারী কাঙ্খিত ভূমিকা রাখছে। এই ব্যবসার অতি আলোক উজ্জ্বল সময় গুলোতে চোর সিন্ডিকেট, মাদক সেবীদের বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরী একই সাথে শিশু শ্রম যেন ভাঙ্গারী ব্যবসাকে অনাকাঙ্খিত পর্যায়ে নিতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। পরিবেশ রক্ষায় যথাযথ ভূমিকা পালন কারী এই ব্যবসায় জড়িতরাই ভাঙ্গারী ব্যবসাকে সব ধরনের শঙ্কা মুক্ত রাখতে পারেন।