দৃষ্টিপাত রিপোর্ট \ সাতক্ষীরা চিংড়ী চাষের সারথি আর অবলম্বন হিসেবেই পরিচিত ছিল, কিন্তু সময় আর পরিবেশে পরিবর্তন ঘটিয়েছে মাছ চাষের ভিন্নতায়, নতুনত্বে আর কর্মপরিধিতে। জেলা গ্রামে গ্রামে সাফল্য গাঁথা সাদা মাছ চাষের অবিরাম পথ পরিক্রমা শুরু হয়েছে। চাষীরা হাসছেন সাফল্যের হাসি। বানিজ্যিক ভাবে উৎপাদিত মাছ চাষে চাষীরা দৃশ্যতঃ লাভবান হচ্ছে, বেকার যুবকদের আগ্রহের ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে সাদা প্রজাতির মাছ চাষ। কয়েক বছর আগেও সাদা মাছ বলতে বাড়ী সংলগ্ন, ভিটের আশপাশের পুকুরে পরিবারের চাহিদা মেটানোর জন্য সাদা মাছের পোনা অবমুক্ত করা হতো। কিন্তু বর্তমানের চিত্র ভিন্ন হতে ভিন্নতায় পরিনত হয়েছে। ছোট, মাঝারি, বড় সব ধরনের পুকুরে বানিজ্যিক ভিত্তিতে মাছ চাষ হচ্ছে এখানেই শেস কথা নয়, চিংড়ী চাষের জন্য যেভাবে পাঁচ/দশ বিঘা জমি ভেড়ি বাঁধ দিয়ে ঘিরে পোনা অবমুক্ত করা হয়। অনুরুপ ভাবে বিভিন্ন প্রজাতির সাদা মাছ চাষের জন্য বিঘা বিঘা জমিজমা ভেঁড়িবাঁধ দিয়ে ঘিরে চাষ করা হচ্ছে পার্থক্য এতটুকু যে চিংড়ী চাষে লবনাস্ত পানি আর সাদা মাছ চাষে মিঠা পানি, সাদা মাছ চাষীদের সাথে কথা বলে জানাগেছে জেলার কলারোয়া উপজেলা ও যশোর জেলা হতে মাছের ডিম এবং রেনু পোনা সংগ্রহ করে তা জলাশয়ে অবমুক্ত করে চাষাবাদ করে। কলারোয়া দীর্ঘদিন যাবৎ সাদা মাছ উৎপাদনে বিশেষ করে ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা উৎপাদনে অগ্রগামী, কলারোয়ার উদ্ভাবনী প্রযুক্তি আর শক্তি জেলার অপরাপর উপজেলায় চলছে। দেবহাটা, আশাশুনি, কালিগঞ্জ সহ অন্যান্য এলাকার চাষীরা নিজেরাই ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা (রেনু) ফোটাচ্ছে। গত কয়েক দিনে সরেজমিনে সাদা মাছ চাষ প্রক্রিয়া পরিদর্শনে দেখা গেছে জলাশয়ে বা নিজ এলাকা পতিত থাকছে না। ধান ক্ষেত্রেও সাদা মাছ চাষ হচ্ছে জেলার অন্যতম সাদা মাছ চাষী জসিম উদ্দীন দৃষ্টিপাতকে জানান ধানক্ষেতে মাছ চাষেও ব্যাপক সফল হয়েছি। ধানক্ষেতে পানি প্রবাহ থাকে একদিকে ধান উৎপাদন একই সময়ে ধান ক্ষেতে মাছ চাষ, মাছের বিচরন। চলমান ইরিবরো ধান কাটা হচ্ছে এরই মাঝে (জমিতে) মাছ বিচরন করছে। মিঠা পানির পাশাপাশি লবনাক্ত পানির চিংড়ী ঘেরেও সাদা মাছ চাষ হচ্ছে। এক্ষেত্রে লবনাক্ত পানির চিংড়ী ঘেরগুলোতে আষাঢ়, শ্রাবন মাসে বৃষ্টির পানির কল্যানে ঘেরের লবনাক্ত পানি দুধলবন অর্থাৎ (অধিকতর লবনাক্ত নয়) এমন পরিবেশে চাষীরা ঘেরে বিভিন্ন ধরনের সাদা প্রজাতির মাছ অবমুক্ত করে, এক্ষেত্রে পাঁচটা, দশটা কেজির রুই, মৃগেল, কাতলা, চিতল মাছ অবমুক্ত করে যা ডিসেম্বর জানুয়ারী মাসে ঘের ছেচা মারার সময় প্রতিটি মাছ কেজি কেজি বা কেজির অধিক ওজন হয়, চাষীরা ডিসেম্বর জানুয়ারী মাসে এক কেজি বা তার অপেক্ষা কম ওজনের মাছ ছাড়ে এবং বর্তমান সময় এপ্রিল মে মাসে উক্ত মাছ তিন কেজি পর্যন্ত হয়। ক্ষুদ্রাকৃত্তির রেনু ত্রিশ, বিশ টায় কেজি হলে সে সময় চাষের উপযুক্ত হয় এবং অবমুক্ত করে। চাষীরা জানান ডিম হতে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ে সাদা মাছ চাষের জন্য পৃথক পৃথক ভাবে নির্ধারিত করা হয়। সাতক্ষীরার চাষীরা তাদের উৎপাদিত সাদা মাছ রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করে আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছে। বর্তমানে প্রতি কেজি রুই কাতলা, মৃগেল মাছ দুইশত টাকা এবং পাঁচ কেজি বা সমমানের ওজনের মাছ চারশত টাকা কেজি প্রতিি বিক্রি হচ্ছে। যতই দিন যাচ্ছে ততোই সাদা মাছ চাষে চাষীরা আগ্রহী হচ্ছে। চাষীরা জানান সা¤প্রতিক সময়ে তাপদাহে মাছ চাষে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জেলার মৎস্য বিভাগ সাদা মাছ চাষীদের প্রশিক্ষন এবং প্রনোদনার ব্যবস্থা করলে সাদা মাছ চাষ আরও সাফল্যের শিখরে পৌছাবে। সাদা মাছ চাষ এমন পরিস্থিতির অবতরনা ঘটিয়েছে অলসের হাত সমৃদ্ধির হাতে পরিনত হয়েছে।