দৃষ্টিপাত রিপোর্ট ॥ এক সময় বাঙ্গালীর ঐতিহ্য ছিল গোলাভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু আর পুকুর ভরা মাছ। সময়ের ব্যবধানে দিনে দিনে তা ফিকে হতে শুরু করলেও মাছ যেন আবারও ঘুরে দাঁড়িয়েছে। দেশের মৎস্য সম্পদের উৎপাদন, ক্ষেত্র এবং পরিধি ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। একদা কেবলমাত্র পুকুরেই মাছ থাকতো, পারিবারীক প্রয়োজনে পুকুরে মাছ ছাড়তো সেই মাছ অতিথি আপ্যায়ন সহ ঘর বাইরের প্রয়োজনে ব্যবহৃত হতো। কিন্তু সাম্প্রতিক বছর গুলোতে মাছ চাষ হচ্ছে। বানিজ্যিক ভাবে উৎপাদন করা হচ্ছে মাছ। সাতক্ষীরার বাস্তবতায় জেলার অর্থনীতির অন্যতম মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে সাদা প্রজাতির মাছ। কয়েক বছর পূর্বেও জেলার মাছ চাষ বলতে বাগদা ও গলদা চিংড়ীকে বুঝানো হতো। সাদা প্রজাতির মাছ চাষের খুব বেশী প্রচলন ছিল না। সাতক্ষীরার কলারোয়ার সাদা প্রজাতির বিভিন্ন ধরনের মাছের ডিম ও রেনু পোনার উৎস্য হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় বছর ১০/১৫ পূর্বে কলারোয়া উপজেলা কেন্দ্রীক সাদা প্রজাতি মাছের রেনু উৎপাদনের পাশাপাশি উন্মুক্ত জলাশয়ে সাদা মাছ চাষ শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে ডিম ও রেনু উৎপাদন সেই সাথে বানিজ্যিক ভিত্তিতে জেলার বিভিন্ন এলাকাতে সাদা প্রজাতির মাছ চাষ শুরু হয়। বর্তমানে সাতক্ষীরায় সাদা মাছ উৎপাদনে বিপ্লব ঘটেছে। অর্থনীতিতে যেমন গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে অনুরুপ ভাবে সাতক্ষীরার অর্থনীতি মৎস্য কেন্দ্রীক হয়ে উঠেছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ছোট ছোট আকৃতির দুই/তিন/পাঁচ বিঘার সাদা মাছের ঘেরে ব্যাপক ভিত্তিক মাছ উৎপাদন হচ্ছে। একাধিক চাষীর সাথে কথা বলে জানাগেছে একই ঘেরে একই মাছে তিন ধরনের ব্যবসা হচ্ছে এবং চাষীরা লাভবান হচ্ছেন। প্রাথমিক পর্যায়ে রেনুপোনা অবমুক্ত করন, প্রতিটি পোনা কেজি প্রতি ১০০/১৫০ পিস হলে প্রাথমিক পর্যায়ে বিক্রয়, পবর্তিতে ১০/১৫ পিস আকারে বিক্রি সর্বশেষ কেজি কেজি এবং কেজির বেশি ওজনে বিক্রি, মাছ মাছ চাষে অধিকতর লাভ হওয়ায় দিনে দিনে এই চাষে ঝুকছে সাতক্ষীরার চাষীরা। এই জেলার রুই, কাতলা, মৃগেল, ফলুই, চিতল, ট্যাবলেট সহ অপরাপর মাছ অধিক পরিমানে উৎপাদন হওয়ায় জেলার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, সিনেট সহ অপরাপর শহরের চাহিদা মিটাচ্ছে এবং অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হচ্ছে। সাতক্ষীরায় সাদা মাছ চাষে ও উৎপাদনে বিপ্লব হওয়ার ক্ষেত্রে চিংড়ী ঘেরগুলো কাঙ্খিত ভূমিকা পালন করছে। জেলায় ছোট বড় সহস্রাধীক এর অধিক চিংড়ী ঘেরের অস্তিত্ব বিদ্যমান, লবনাক্ত পানি সাদা প্রজাতির মাছ উৎপাদনের জন্য যথাযথ নয়, আর প্রতিটি চিংড়ী ঘেরে, লবনাক্ত পানি পরিপূর্ণ। বর্তমান বর্ষা মৌসুমই চিংড়ী ঘের গুলোতে সাদা প্রজাতির মাছ চাষের উপযুক্ত সময়। বৃষ্টির পানির কল্যানে লবনাক্ত পানির লবনাক্ততা হ্রাস পায় এ ক্ষেত্রে ঘেরের পানি দুধ লবন হয় যা সাদা প্রজাতির মাছ উৎপাদনের সহনীয় ক্ষেত্র হিসেবে পরিগনিত হয়। গত কয়েকদিন যাবৎ সাতক্ষীরার চিংড়ী ঘের গুলোতে চালাই মাছ অবমুক্ত করনের রিতিমত প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। চাষীরা চাহিদা মত মাছ অবমুক্ত করছে। সাতক্ষীরার অতীত বিভিন্ন ধরনের মিঠা তথা দেশী মাছের ঐতিহ্য। কিন্তু লবনাক্ততার ও নির্বিচারে রেনু মাছ নিধনের অতি পরিচিত চ্যাং, শোল, কই, মাগুর, জেল, পুটি, মায়া মাছ হারিয়ে যেতে বসেছে। সাতক্ষীরার মৎস্য চাষের এই সুদিন আর বিপ্লবের সময় গুলোতে অবশ্যই দেশী প্রজাতির মাছ সংরক্ষনে আন্তরিক হতে হবে এ ক্ষেত্রে জেলা উপজেলা মৎস্য বিভাগ যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারে।