মঙ্গলবার, ১১ মার্চ ২০২৫, ১১:৪৭ অপরাহ্ন

সার্বিয়ার পার্লামেন্টে স্মোক গ্রেনেড নিক্ষেপ, স্ট্রোকে আক্রান্ত আইনপ্রণেতা

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় বুধবার, ৫ মার্চ, ২০২৫

এফএনএস আন্তজার্তিক ডেস্ক: সার্বিয়ার পার্লামেন্টে গত মঙ্গলবার এক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে। বিরোধী দলের আইনপ্রণেতারা সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে এবং চলমান শিক্ষার্থী আন্দোলনের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করতে পার্লামেন্টের অধিবেশনকক্ষে স্মোক গ্রেনেড ও পিপার সে্প্র ছুড়ে মারেন। এই ঘটনায় বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে এবং ক্ষমতাসীন দলের একজন আইনপ্রণেতা স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হন। দেশটির রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
পার্লামেন্টের অধিবেশন চলাকালে ক্ষমতাসীন সার্বিয়ান প্রগ্রেসিভ পার্টি (এসএনএস) তাদের এজেন্ডা অনুমোদন করলে বিরোধী দলের আইনপ্রণেতারা প্রতিবাদে ফেটে পড়েন। কিছু আইনপ্রণেতা তাদের আসন ছেড়ে স্পিকারের দিকে ছুটে যান এবং নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় অন্য কয়েকজন আইনপ্রণেতা স্মোক গ্রেনেড ও পিপার সে্প্র ছুড়ে মারেন, যা পার্লামেন্টের ভেতরে কালো ও গোলাপি ধোঁয়া ছড়িয়ে দেয়। টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত দৃশ্যগুলোতে দেখা যায়, অধিবেশনকক্ষে উত্তপ্ত অবস্থা তৈরি হয়েছে।
এই ঘটনায় ক্ষমতাসীন দলের আইনপ্রণেতা জেসমিনা ওব্রাদোভিচ স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। তাকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জ্লাতিবর লোনচার জানান, ওব্রাদোভিচের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ ছাড়া আরও তিন আইনপ্রণেতা আহত হয়েছেন বলে পার্লামেন্ট স্পিকার আনা ব্রনাবিচ জানিয়েছেন।
এই ঘটনার পেছনে সার্বিয়ায় চলমান শিক্ষার্থী আন্দোলন ও সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক ক্ষোভ কাজ করছে। গত নভেম্বরে সার্বিয়ার নোভি সাদ শহরে একটি রেলস্টেশনের ছাদ ধসে ১৫ জন নিহত হওয়ার পর থেকে দেশজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে আন্দোলন দানা বাঁধে, যা পরে শিক্ষক, কৃষক ও বিভিন্ন পেশার মানুষকে আকর্ষণ করে। বিক্ষোভকারীরা সরকারের ব্যাপক দুর্নীতি ও অদক্ষতার বিরুদ্ধে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
এই আন্দোলন প্রেসিডেন্ট আলেকসান্দার ভুচিচের এক দশকের শাসনের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত ২৮ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী মিলোস ভুচেভিচ পদত্যাগ করলেও বিক্ষোভ থামেনি। বিক্ষোভকারীরা সরকারের পতন ও দুর্নীতির অবসান চাইছেন।
ঘটনার পর প্রেসিডেন্ট আলেকসান্দার ভুচিচ এই ঘটনাকে ‘গুন্ডামি’ বলে আখ্যা দেন এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেন। তিনি বলেন, “এই ধরনের আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। যারা এই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
১৯৯০ সালে সার্বিয়ায় বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু হওয়ার পর থেকে পার্লামেন্টে এ ধরনের হট্টগোলের ঘটনা বিরল। এই ঘটনায় দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিরোধী দলের আইনপ্রণেতারা তাদের প্রতিবাদে ‘সাধারণ ধর্মঘট’ ও ‘হত্যার জন্য ন্যায়বিচার’ লেখা প্ল্যাকার্ড উঁচিয়ে ধরেন। পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে বিক্ষোভকারীরা নিহতদের স্মরণে নীরব অবস্থান পালন করেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com