এফএনএস এক্সক্লুসিভ: বাজারে চাল—ডাল—তেলসহ নিত্যপণ্যর ঊর্ধ্বমূল্যের কারণে মানুষের এখন নাভিশ^াস অবস্থা। এর থেকে কিছুতেই মুক্তি মিলছে না। কারণ দেশে জালের মতো ছড়িয়ে থাকা অসাধু সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না সরকার। বরং সর্বত্রই সিন্ডিকেট সক্রিয়। নিত্যপণ্যের বাজার, পরিবহন সেক্টর, প্রশাসনে ওই চক্রের কোনো হেরফের হয়নি। শুধু হাতবদল হয়ে ওসব সিন্ডিকেট দিব্যি কার্যক্রম চালাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেই। সিন্ডিকেটের সক্রিয়তা বিষয়টি বর্তমান সরকারের উপদেষ্টারাও স্বীকার করেছেন। ফলে বর্তমানে বিশ^ বাজারে চালের দাম কমা সত্ত্বেও আমনের ভরা মৌসুমেও দেশে বাড়ছে চালের দাম। বিশ^ বাজারে চিনির দামও কমেছে। কিন্তু দেশের বাজারে তার কোনো প্রভাব নেই। বরং চিনির সাথে সংশ্লিষ্ট সকল খাদ্যপণ্যের দামও বাড়তি। তাছাড়া বিশ^ বাজারে মৎস্য ও পোলি্ট্র খাদ্যের দাম কমলেও সিন্ডিকেটের কারণে আগের মতই আছে দেশের বাজার। ফলে ডিম, মুরগী ও মাছের দাম কমছে না। বাজার সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এখন বিভিন্ন সিন্ডিকেটের সদস্য হয়েছে নতুন মাফিয়ারা। এখনো বিভিন্ন দলের নেতা—কর্মীরা চাঁদাবাজি করছে। পরিবহন সেক্টরে আগের মতই নৈরাজ্য—চাঁদাবাজি চলছে। বাজার সিন্ডিকেটও আগের মতই সক্রিয়। কিন্তু এর বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের যে কঠিন ও কঠোর ভূমিকা নিতে পারছে না। ফলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তিও কমছে না। ফলে বাজার, পরিবহনসহ সবখানে এখনো চাঁদাবাজি চলছে। সূত্র জানায়, বাজারকে সিন্ডিকেট মুক্ত করতে ভোক্তা অধিদপ্তর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ৫৮ জন কর্মকর্তার নেতৃত্বে দেশব্যাপী অভিযান শুরু করেছে। কিন্তু তাতেও বাজারে তেমন কোনো ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে না। কারণ নানা সিন্ডিকেট ও মধ্যস্বত্বভোগীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। বরং সিন্ডিকেট সদস্যরা বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়িয়ে মুনাফা করছে। মূলত সিন্ডিকেট ও মধ্যস্বত্বভোগীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় পণ্যের দাম বেঁধে দিয়েও ইতিবাচক ফল মিলছে না। প্রতিযোগিতা কমিশনের তথ্যানুযায়ী এ পর্যন্ত সাধারণ চাল ও কর্পোরেট চালে ২০টি, ভোজ্য তেলে ৯টি, ডিম নিয়ে কারসাজি করায় ১৭টি, মুরগী সিন্ডিকেট ৯টি, পেঁয়াজ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে একটিসহ বিভিন্ন সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ১২০টি মামলা করেছে। কিন্তু তারপরও কমছে না সিন্ডিকেটের কারসাজি। সূত্র আরো জানায়, বাজারের সিন্ডিকেট এখনো সক্রিয়। বাজার ব্যবস্থাপনা আগের মতই রয়েছে। কৃষক তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না। সব মধ্যস্বত্বভোগীরা ভোগ করছে। বর্তমানে শীতকালীন সবজি ফুলকপি, বাঁধাকপি কৃষকরা ২ টাকা থেকে ৩ টাকা পিস বিক্রি করছে। অথচ ঢাকায় সব সবজি এখনো প্রতি পিস ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ কৃষক পর্যায় থেকে ভোক্তা পর্যায়ে ওসব সবজির দাম তিনশ গুণ পর্যন্ত বেড়ে যাচ্ছে। বাজারের এই অব্যবস্থাপনা ও সিন্ডিকেটের কারণে প্রান্তিক খামারিরা ডিম, মুরগী, দুধসহ বিভিন্ন পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না। অথচ সিন্ডিকেট ও কর্পোরেট ব্যবসায়ীরা ওসব পণ্যের মধ্যেও দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ পর্যন্ত লাভ করছে। সিন্ডিকেটের সদস্যদের সরকার চিনলেও নিশ্চিুপ। বরং তাদের স্বার্থেই ক’দিন আগে ভোজ্য তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। সিন্ডিকেটের কাছে সরকার এই নতি স্বীকার করায় তেলের দাম রাতারাতি লিটারে ৮ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে তারা। তাছাড়া গত নভেম্বরে ডিমের ডজন ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা হয়েছিল। একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ভারত থেকে ডিম আমদানি করা হয়। অভিযানও চালানো হয়। ন্যায্য মূল্যে ডিম বিতরণ করা হয়। তারপর ডিমের ডজন বর্তমানে কিছুটা নেমে এসেছে। ডিমের ও মুরগীর দাম আরো কমানো সম্ভব বলে মনে করেন খামারিরা। তাদের মতে, পোলি্ট্র ফিডের মূল্য কমানো হলে ডিম ও মুরগীর দাম আরো কমবে। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) একটি সমীক্ষা মতে, একদিন বয়সী মুরগীর বাচ্চা, মুরগীর খাবার ও ডিমের দাম ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশে বেশি। বাংলাদেশে মুরগীর বাচ্চার গড় দাম ভারতের চেয়ে ৪২ এবং পাকিস্তানের চেয়ে ১০৫ শতাংশ বেশি। একশ্রেণীর ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট কারসাজির মাধ্যমে এভাবে অধিক মুনাফা অর্জন করছে। এদিকে বাজার সিন্ডিকেট বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা—অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান জানান, ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যে ওই সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িতদের এক অংশকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। অন্যদিকে বর্তমান সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার সিন্ডিকেট সক্রিয় থাকার বিষয়টি স্বীকার করে সম্প্রতি রাজধানীর খামার বাড়িতে এক অনুষ্ঠানে বলেন, বাজারের সিন্ডিকেট এখনো আছে। হাত বদলের মাধ্যমে দাম বাড়ছে, আমরা তা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে যাচ্ছি।