এফএনএস আন্তজার্তিক ডেস্ক: দুই দেশের মধ্যকার বহুল আলোচিত সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিত করার পর ভারত এবার কাশ্মীরে দুটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে কার্যক্রম জোরদার করেছে। জম্মু ও কাশ্মীরের সালাল ও বাগলিহার জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে জলাধারের ধারণক্ষমতা বাড়াতে এবং টারবাইন রক্ষণাবেক্ষণের লক্ষ্যে ‘ফ্লাশিং’ প্রক্রিয়া শুরু করেছে ভারত, যা এই প্রকল্পগুলোর ইতিহাসে প্রথম।
গত ১ মে থেকে তিন দিনব্যাপী চালানো এই কার্যক্রমে চেনাব নদীর তলদেশ থেকে পলি সরাতে জলাধার প্রায় খালি করে দেওয়া হয়। এতে নদীর পানিপ্রবাহ হঠাৎ বেড়ে গিয়ে পরবর্তীতে আবার কমে আসে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, এই সময় বন্যার আশঙ্কার মতো পরিস্থিতিও তৈরি হয়েছিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া বিভিন্ন ভিডিওতে নদীর প্রবল প্রবাহ ও পলিতে ভরাট চিত্র দেখা গেছে।
এ বিষয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, “এই কার্যক্রম প্রকল্পগুলোর উৎপাদনক্ষমতা বাড়াবে এবং টারবাইনগুলোর ক্ষয় রোধ করবে। এখন আমরা পূর্বের চুক্তির সীমাবদ্ধতা ছাড়াই কাজ করতে পারছি।”
এই পদক্ষেপ পাকিস্তানের নজরে এসেছে অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে। তারা একে ‘যুদ্ধের সমান পদক্ষেপ’ বলে অভিহিত করেছে। পাকিস্তান সতর্ক করে জানিয়েছে, ভারতের পক্ষ থেকে যদি তাদের পানিপ্রবাহ বন্ধ বা অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়, তবে সেটি যুদ্ধ ঘোষণার মতোই বিবেচিত হবে। একইসঙ্গে ইসলামাবাদ আন্তর্জাতিক আইনি ব্যবস্থার আশ্রয় নেওয়ার কথাও বলেছে।
উল্লেখযোগ্য যে, ১৯৬০ সালের সিন্ধু চুক্তি অনুযায়ী ভারত ও পাকিস্তান সিন্ধু অববাহিকার ছয়টি নদীর পানি বণ্টনে সম্মত হয়েছিল। ভারত তিনটি পূর্বাঞ্চলীয় নদীর উপর নিয়ন্ত্রণ রাখে এবং পাকিস্তান নিয়ন্ত্রণ করে তিনটি পশ্চিমাঞ্চলীয় নদীÑযার মধ্যে চেনাব অন্যতম। এতদিন ভারত এই চুক্তির সীমারেখার মধ্যেই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো পরিচালনা করছিল।
কিন্তু সম্প্রতি কাশ্মীরের পেহেলগামে এক প্রাণঘাতী হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে নয়াদিল্লি একতরফাভাবে চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দেয়। এরপরই শুরু হয় জলাধার ফ্লাশিং ও ধারণক্ষমতা বাড়ানোর মতো উদ্যোগ।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত বিদ্যুৎ সংস্থা এনএইচপিসি লিমিটেড ও জম্মু—কাশ্মীর প্রশাসন প্রকল্পটির বিষয়ে পাকিস্তানকে কোনো পূর্ব—নোটিশ দেয়নি। প্রকল্প দুটিÑসালাল (নির্মিত ১৯৮৭) ও বাগলিহার (নির্মিত ২০০৮/০৯)Ñএতদিন আন্তর্জাতিক চুক্তির কারণে নানা সীমাবদ্ধতায় পরিচালিত হতো। এখন সেই প্রতিবন্ধকতা দূর হওয়ার পর ভারত আগ্রাসীভাবে এগোচ্ছে বলে মনে করছে পাকিস্তান।
বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি নদীর প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ এখন দক্ষিণ এশিয়ায় একটি কৌশলগত অস্ত্র হয়ে উঠেছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। পাকিস্তান, যার ৮০ শতাংশ পানির উৎস ভারতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদী, এই পরিস্থিতিতে নিজেদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি হুমকি দেখছে।
কাশ্মীর নিয়ে অতীতে তিনটি যুদ্ধের পাশাপাশি বহুবার সীমান্ত সংঘাতে জড়িয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। এতদিন এই অঞ্চলে পানিচুক্তিটি ছিল একটি স্থিতিশীলতার প্রতীক। কিন্তু সেটিও এখন ভেঙে পড়ছে। এতে দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন করে পানি যুদ্ধের শঙ্কা জোরালো হচ্ছে।