এফএনএস: যশোরের বেনাপোল—শার্শা সীমান্তের ইছামতী নদীর পাড় থেকে একদিনেই তিন যুবকের লাশ উদ্ধার নিয়ে ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। তাদের মধ্যে একজনের লাশ নদীতে ভাসমান অবস্থায় এবং দুজনের লাশ নদীর তীর থেকে উদ্ধার করা হয়। গত বুধবার ৬ ঘণ্টার ব্যবধানে লাশ তিনটি উদ্ধার করা হয়। ঘটনার তিনদিন পার হলেও এখনো জানা যায়নি কীভাবে তাদের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশও কিছু জানাতে পারেনি। তবে নিহতদের পরিবারের দাবি ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফের নির্যাতনে তাদের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের লাশ বৃহস্পতিবার যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে আত্মীয়স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। দুইজনকে বেনাপোলে ও একজনকে চৌগাছার শাহাজাদপুরে দাফন করা হয়েছে। জানা যায়, বুধবার বিকেলে শার্শা উপজেলার অগ্রভুলোট সীমান্তের ইছামতী নদী থেকে ভাসমান অবস্থায় একটি লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশটি বেনাপোল পোর্ট থানার চৌগাছার শাহাজাদপুরের জামিলুর রহমানের ছেলে সাকিবুর রহমানের (২২)। তিনি বেনাপোলের দিঘীরপাড় গ্রামের নানা বাড়িতে থাকতের। এর আগে সকালে একই এলাকার আরিফুল ইসলামের ছেলে সাবু হোসেন (৩৫) ও কাগজপুকুর গ্রামের ইউনুস আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের (৩০) লাশ সীমান্তের পাঁচভুলোট ও পুটখালী থেকে উদ্ধার করা হয়। সাকিবুরের মামা আজগার আলি বলেন, সাকিবুর ট্রাকের হেলপারি করতো। মঙ্গলবার দুপুরে ট্রাকে কাজের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। পরে তার আর কোনো খেঁাজ পাওয়া যায়নি। বুধবার বিকেলে লোকমুখে খবর পেয়ে শার্শার অগ্রভুলোট সীমান্তের ইছামতি নদীর পাড়ে গিয়ে তার লাশ শনাক্ত করি। পরে জানতে পারি লোভে পড়ে স্থানীয় কিছু চোরাকারবারির সঙ্গে সে মঙ্গলবার রাতে চোরাচালানের পণ্য আনতে ভারতে গিয়েছিল। কীভাবে মৃত্যু হলো, সে বিষয়ে পরিবার এখনো কিছুই জানতে পারেনি। সাবু হোসেনের স্ত্রী হাসি বেগম জানান, সকালে লোকমুখে খবর পান পুটখালী সীমান্তের ইছামতী নদী পাড়ে তার স্বামী আহত অবস্থায় পড়ে আছেন। পরে তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার করে নিয়ে আসার পথেই সাবু মারা যান। পরে পুলিশ এসে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যায়। মাঝে মাঝে সাবু মালামাল আনতে ভারতে যেতেন। বিএসএফের নির্যাতনে তার স্বামী মারা গেছেন বলে দাবি করেন তিনি। অপরদিকে জাহাঙ্গীরের ভাই আলমগীর জানান, তার ভাই দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ভারতে থাকেন। তিনি ভারতীয় একটি মেয়েকে বিয়ে করে সেখানে বসবাস করতেন। বর্তমানে ভারতীয় ভিসা বন্ধ থাকায় জাহাঙ্গীর অবৈধ পথে কয়েকদিন আগে ভারত থেকে বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। গত মঙ্গলবার রাতে ভারতে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হন। পরে সকালে লোকমুখে খবর পান, জাহাঙ্গীরের লাশ পাঁচভুলোট সীমান্তের ইছামতী নদীর পাড়ে পড়ে আছে। পরে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে নিয়ে যায়। সীমান্তের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, যে তিনজনের লাশ পাওয়া গেছে তাদের ৫—৭ জনের একটি দল আছে। তারা ভারত থেকে ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদক এবং চোরাচালানি পণ্য পাচার করে এনে দেশে সরবরাহ করে। বিএসএফের হাতে তারা আটক হয়। বিএসএফ আটকদের বেদম মারপিট করে। মৃত্যু নিশ্চিত করে রাতের অঁাধারে সীমান্তের ইছামতি নদীর পাড়ে ফেলে রেখে যায়। স্থানীয় লোকজন লাশ ভাসতে দেখে পুলিশ ও বিজিবিকে খবর দেয়। পরে সকালে দুইটি ও বিকেলে একটি লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ। উদ্ধারকৃত লাশগুলোর শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। অপর একটি সূত্র জানায়, ওই এলাকার স্থানীয়দের সঙ্গে লেনদেনের ঝামেলায় অথবা বিএসএফের নির্যাতনের শিকার হয়ে তাদের মৃত্যু হতে পারে। বেনাপোল পোর্ট থানার ওসি রাসেল মিয়া জানান, লাশ সীমান্তের ইছামতি নদীর পাড়ে পড়ে আছে খবর পেয়ে শার্শা থানা ও বেনাপোল পোর্ট থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে লাশগুলো উদ্ধার করে। উদ্ধারকৃত মরদেহে শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। ময়নাতদন্তের পর নিহতদের লাশ বৃহস্পতিবার নিজ নিজ এলাকায় দাফন করা হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও কোনো মামলা হয়নি। তবে পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি পৃথক মামলা করেছে। কীভাবে লাশগুলো সীমান্তে নদীর পাড়ে এলো এবং কীভাবে এ ঘটনা ঘটেছে, সে বিষয়ে তদন্ত চলছে বলেও জানান তিনি। খুলনা—২১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল খুরশিদ আনোয়ার জানান, পাঁচভুলোট, অগ্রভুলাট ও পুটখালী সীমান্তের ইছামতী নদীর পাড় থেকে বুধবার সকালে ও বিকেলে পৃথক পৃথক স্থান থেকে লাশগুলো পাওয়া যায়। পরে পুলিশ সেগুলো উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যায়। বিএসএফের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা কিছু জানে না বলে জানিয়েছে। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে এ ঘটনা ঘটতে পারে বলে মনে হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে কারণ জানা যাবে।