অনেকেরই অভিমত দক্ষিণে সমুদ্র, বিশাল লবনাক্ত জলরাশি বঙ্গোপসাগর। আর সেই বিশাল সমুদ্র তট জুড়ে লবনাক্ত পানিতে জাত ম্যানগ্রোভ বন। তাই এর এক নাম সমুদ্র বন অর্থাৎ সমুদ্র উপকুলীয় বন। চতুর্থতঃ আভিধানিক অর্থে সুনদ+অরন=সুন্দরবন। সুনদ অর্থ শোভা পাওয়া, সুন্দর, মনোহর সুশ্রী, সুরুপ, সুদর্শন, সুদৃশ্য। আর অরন অর্থ অরণ্য বা বন। এই অর্থে সুনদ+অরন=শোভা পাওয়া অরণ্য বা সমুদ্র উপকুলবর্তী সুন্দর সুশ্রী সুদৃশ্য শোভাময় বন থেকে সুন্দরবন নামের উৎপত্তি। সমুদ্রও প্রকৃতি জাত। তার উপকুলবর্তী বিশাল লবনাক্ত জলে বিস্তীর্ণ ভূখন্ড ব্যাপী জাত বনও প্রকৃতি জাত। তাই উভয় প্রকৃতি জাত সমুদ্র তটের স্থল ভাগে সমুদ্রের জল দ্বারা সিঞ্চিত বনরাজি সুন্দরবন নামে পরিচিত একথা উপেক্ষা করা যায় না। এক কথায় সমুদ্র এবং তৎকুলবর্তী বন উভয়ের সমন্বয়ে সুন্দরবন নামকরণ অন্যান্য অভিমত অপেক্ষা অধিক যুক্তিগ্রাহ্য। উলেখ্য যে এই বনাঞ্চল শুধু খুলনা জেলার সুন্দরবন নামে খ্যাত নয়। পটুয়াখালি বাখরগঞ্জ, হাতিয়া স›িদ্বপ হয়ে সুদুর দক্ষিণে চট্টগ্রামের চকরিয়া-মহেশখালি পর্যন্ত এই উপকূলীয় সুন্দরবন নামে খ্যাত। পশ্চিমবঙ্গের হুগলী নদীর মোহনা পর্যন্ত এই বন বিস্তৃত। অতএব কোন জেলার একক নাম নদী, জাতি বা ক্ষুদ্র রাজ্যের নামে এই নাম হতে পারে না। এ ধরনের সাধারণ নামের জন্য সর্বত্র সাধারণ বৈশিষ্ট্য প্রয়োজন। খুলনা জেলা- নূরুল ইসলাম ৬৯পৃঃ, আঃ জলীল সাহেব ইংরেজ আমলের প্রথম দিকে পর্যটকদের ঔঁহমষব ড়ভ ংঁহফধৎু ঃৎববং অনুসারে ংঁহফধৎু থেকে সুন্দরবনের সিদ্ধান্ত করেছেন। কিন্তু সুন্দরবনের সৃষ্টি আরও অনেক আগের। ংঁহফধৎু থেকে সুন্দরবন নয়- এ সিদ্ধান্ত যুক্তিগ্রাহ্য। তবে বঙ্গোপসাগর বা সমুদ্র আদিকাল থেকে ছিল এখনও আছে তাই সমুদ্রের উপকূলীয় সমুদ্র বন থেকে সুন্দরবন নামকরণ বিচিত্র নয় কারণ কবডাক থেকে কপোতাক্ষ নদ, কল্পতুয়া থেকে খোলপেটুয়া এরুপ নামকরণ হলে সমুদ্র বন থেকে সুন্দরবন নাম হতেই পারে। আর সমুদ্র আদিকাল থেকে এখনও প্রবাহমান; সুন্দরী বৃক্ষ ও সুন্দরবনও আদিকাল থেকে এখনও বর্তমান আছে। বন কেট আবাদি জমি করার ফলেও জনবসতি গড়ে ওঠার ফলে তার দৈর্ঘ্য প্রস্থের অনেকটা বিস্তৃতি কমেছে মাত্র।