স্টাফ রিপোর্টার \ সুন্দরবনে পানি সংকট দেখা দিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সুন্দরবন সংলগ্ন অঞ্চলে বাড়ছে খাবার পানির তীব্র সংকট। সুপেয় পানির অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন সাধারণ মানুষসহ প্রাণীকূল। একই সঙ্গের প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা মিঠা পানির জলাধারগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় বনের প্রাণীদেরও পানির সংকট দেখা দিয়েছে। সরকার নানা উদ্যোগের কথা বললেও বাস্তবে টাকার অভাবে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন চলছে খুবই ধীর গতিতে। এমনই এক পরিস্থিতি ১৪ ফেব্র“য়ারি দেশে পালিত হল সুন্দরবন দিবস। পরিবেশ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সুন্দরবনের পানি সংকট কাটাতে ৮৪টি পুকুর খনন ও পুনঃখনন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, হরিণসহ ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণীর বসবাস। এই প্রকল্পের আওতায় বন্যপ্রাণীর দীর্ঘদিনের সুপেয় মিঠা পানির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বনজীবী ও পর্যটকদের খাবার পানির জন্য ৪টি নতুন পুকুর খনন ও ৮০টি পুকুর পুনঃখনন করার কথা। জলবায়ু ট্রাস্প ফান্ডের অর্থায়নে ৪ কোটি ৯৮ লাখ টাকা ব্যয়ে এসব পুকুরের মধ্যে ৭০টিতে নির্মাণ করার কথা পাকা ঘাট। পুরাতন পুকুরগুলো ঝড়-জলোচ্ছ¡াসে ভরাট হয়ে যাওয়ায় বছরের পর বছর ধরে বাঘ-হরিণসহ বন্যপ্রাণী সাধারণত সুপেয় পানি সংকটের মধ্যে থাকে। এই প্রকল্পের পরিচালক ও বন সংরক্ষক (সিএফ) মিহির কুমার জানান, সুন্দরবনে এ প্রকল্প ৩টির কাজ শেষ হলে ইকোট্যুরিজমের উন্নয়ন ও দীর্ঘদিন ধরে বাঘ-হরিণসহ বন্যপ্রাণীর সুপেয় পানি সমস্যার বহুলাংশের সমাধান হবে। অবকাঠামোগত সমস্যা অনেক কমে আসার পাশাপাশি ম্যানগ্রোভ বনের প্রাণপ্রকৃতি নিয়ে ইকোলজিক্যাল মনিটরিং সিস্টেমের মাধ্যমে গবেষণা করে সমস্যা সমাধান করা সহজতর হবে। প্রকল্পটি চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে শেষ হবার কথা থাকলেও শেষ হবে কিনা তা অনিশ্চিত। কারণ এই প্রকল্পের অর্থ ছাড়ের বিলম্ব হচ্ছে। এখন পর্যন্ত এক চতুর্থতাংশ টাকা ছাড় হয়েছে। এতে বড় জোর ২৫ ভাগ কাজ হতে পারে। এ বিষয়ে মিহির কুমার বলেন, আমাদের ৮০টি পুকুর খনন ও পুনঃখনন কাজের ২৫ ভাগের মতো হয়েছে। এখনও কাজ চলমান। তবে কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে হলে দ্রুত অর্থছাড় প্রয়োজন। এই বিষয়ে জানতে চাইলে বাপার (বাংলাদেশে পরিবেশ আন্দোলন) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, সুন্দরবন বরাবরই অবহেলার জায়গায়। শুধু সুপেয় পানি নয় সবক্ষেত্রেই এর প্রাণ ও প্রতিবেশ রক্ষায় সরকারের নেওয়া বেশিরভাগ প্রকল্পের অবস্থা এমনই। তিনি বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরেই সুন্দরবন বাঁচানোর আন্দোলন করে আসছি। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র্রগুলোর জন্য কয়লা যখন নদী দিয়ে আনা হবে তখনও নদীর পানি দূষণের শিকার হবে। সুন্দরবনকে বাঁচাতে হলে আসলে একটি সমন্বিত পরিকল্পনা করা জরুরি।’ প্রতিটি ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ¡াসে ক্ষতবিক্ষত হয়ে মায়ের মতো উপকূলের কোটি-কোটি মানুষকে নিরাপদে রাখলেও সুন্দরবন এখন নিজেই ভালো নেই। জলবায়ুর পরিবর্তনে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি, পরিবেশ দূষণ, ম্যানগ্রোভ এই বনের জীববৈচিত্র্য ধ্বংসকারী চোরা শিকারি ও কাঠ পাচারকারীদের কারণে এর অস্তিত্ব এখন সংকটে। বনবিভাগ বলছে, তারা আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর স্মার্ট প্যাট্রোলিংসহ সুন্দরবনের প্রাণপ্রকৃতি সুরক্ষায় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে ‘ভালোবাসা দিবসে সুন্দরবনকে ভালোবাসি’ শ্লোগানে সুন্দরবন দিবস উপলক্ষে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার সকাল ১০টায় শহরের নিউমার্কেটস্থ শহীদ স.ম. আলাউদ্দিন চত্ত¡রে উক্ত মানববন্ধন কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন সুব্রত হালদার। সেচ্ছাসেবী সংগঠন ভলেন্টিয়ার ফর বাংলাদেশ (ভিবিডি) সাতক্ষীরার আয়োজনে মানববন্ধনে একাত্মতা ঘোষণা করে জেলার বিভিন্ন সংগঠনের সেচ্ছাসেবীরা অংশগ্রহণ করেন। এসময় বক্তারা ১৪ ফেব্র“য়ারি সুন্দরবনকে জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার আহŸান জানিয়ে বলেন, সুন্দরবনের টিকে থাকার ওপর দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের বেঁচে থাকা, অর্থনৈতিক অগ্রগতি, সমৃদ্ধি বহুলাংশে নির্ভরশীল। সুন্দরবন উপকূলীয় অঞ্চলের প্রাকৃতিক সুরক্ষা কবচ। তাই যেকোনো মূল্যে আমাদের প্রাকৃতিক এই সুরক্ষা দেয়ালকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। সেই সঙ্গে সুন্দরবনের ক্ষতি হয়, এমন যেকোনো কর্মকান্ড থেকে সরে আসার আহŸানও জানান সেচ্ছাসেবীরা।