মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ১২:০৩ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

সুষ্ঠু ভোটের জন্য নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কারের পক্ষে ইসি

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৪ মে, ২০২২

# সংসদ নির্বাচন: বিশিষ্ট নাগরিকদের মতামত গুরুত্ব পাচ্ছে # বাইরে থেকে ভোটকেন্দ্রের অভ্যন্তরের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে থাকতে পারে সিসিটিভি # নিরপেক্ষ অবস্থান ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে নিয়ন্ত্রনে রাখার চেষ্টা # কেন্দ্রে অবাধ প্রবেশের সুযোগ থাকবে সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকের ## রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ জুনে শুরু
জি এম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে \ আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনে নির্বাচনী ব্যবস্থায় সংস্কারের পক্ষে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ জন্য যত ধরণের পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব সেগুলোও নিতে প্রস্তুত রয়েছে সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানটি। সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত ইসির সংলাপে উভয়ের মতামতের খসড়া নথি পর্যালোচনায় এমন তথ্য পাওয়া গেছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে কমিশনের প্রধান অংশীজন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে পাওয়া প্রস্তাবগুলোর পর। শিঘ্রই সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপে বসবে ইসি। তাই বেশকিছু বিষয়ে সুলীশ অংশীজনদের সঙ্গে মতামতকে অগ্রাধিকার দিলেও স্পর্শকাতর বিষয়ে রাজনৈতিক দলসহ অন্যদের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেবে ইসি। সংলাপে নথি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ভোটের সময় ভোটকেন্দ্রে ভোট কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য অনুমোদিত সাংবাদিকদের এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের অবাধ সুযোগ প্রদান নিশ্চিতে সচেষ্ট থাকবে ইসি। স্বচ্ছতার জন্য ভোটকেন্দ্রে গোপন ক্যামেরা (সিসি ক্যামেরা) প্রতিস্থাপন করে ভোটকেন্দ্রের অভ্যন্তরভাগের দৃশ্য বাহির থেকে পর্যবেক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি করার বিষয়টি কমিশন সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করবে। ইসি সূত্রমতে, এর আগে কোনো কমিশন সংসদ নির্বাচনে কেন্দ্রের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য সিসি ক্যামেরা বসানোর বিষয়ে কোন চিন্তা করেনি; প্রাথমিক প্রস্তাবনায় রাখা ইসির এ সিদ্ধান্ত নির্বাচনে সব প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীর জন্য লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির ক্ষেত্রে ইতিবাচক বলেও মনে করছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। আর নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক সদস্য রাজনৈতিক কর্মীর মতো আচরণ করে একটি পক্ষে অবস্থান নিয়ে থাকে। কিন্তু বিগত কোন কমিশন তাদের একটা জবাবদিহিতার জায়গায় নিতে নূন্যতম উদ্যোগ নেয়ার চিন্তা করেনি। কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষনার আগে নির্বাচনে নিরাপত্তা বাহিনীর নিয়ন্ত্রনে রাখা নিয়ে ভাবছে এটা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ইতিবাচক বলে মনে করছেন অভিজ্ঞমহল। খসড়ায় বলা হয়েছে, নির্বাচনে কারো পক্ষে পক্ষপাতিত্বে যাতে জড়িয়ে না পড়েন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা – সেজন্য তাদের নিরপেক্ষ অবস্থান ও নিয়ন্ত্রনে রাখতে চেষ্টা থাকবে ইসি। নির্বাচনে অর্থশক্তি ও পেশীশক্তির প্রভাব প্রতিরোধেও কার্যকর পদক্ষেপ নিতেও আগ্রহী কমিশন। সেখানে প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি প্রতিদ্ব›দ্বী রাজনৈতিক দলসমূহ ও প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীগণকেও সজাগ দৃষ্টি রেখে প্রত্যাশিত ভূমিকা রাখতে হবে। রাজনৈতিক সদিচ্ছা, মতৈক্য ও সমঝোতা এহেন সমস্যা নিরসনে প্রভূত ভূমিকা রাখতে পারে। আর ভোটকেন্দ্রে ও ভোটাধিকার প্রয়োগে অর্থশক্তি ও পেশিশক্তির প্রভাব প্রতিরোধ করতে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করবে কমিশন। নির্বাচনে আলোচিত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার নিয়ে ইতিমধ্যে সংলাপে অংশ নেওয়া অংশীজনরা চরম বিরোধীতা করলেও এ বিষয়ে কৌশলী অবস্থানে রয়েছে বর্তমান কমিশন। তাদের প্রস্তাবনায় দেখা গেছে, ইভিএম এর শুদ্ধতা ও অপপ্রয়োগ রোধ নিশ্চিত করতে কমিশন ইতিমধ্যে কয়েকটি সভা করেছে। পরীক্ষা ও পর্যালোচনা অব্যাহত রয়েছে। অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার নিমিত্তে আগামীতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ বিশিষ্টজনদের অংশগ্রহণে আরো পর্যালোচনা সভা আয়োজন করা হবে। অত:পর কমিশন আগামীয় জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার বা ব্যবহারের পরিধি ও বিস্তৃতি বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহগণ করবে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিনশ সংসদীয় আসনে ইভিএমে নির্বাচন করার বিষয়ে ইসিকে উদ্যোগ নিতে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। পরে এ নিয়ে তুমুল শোরগোল শুরু হয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনার আগে ইভিএমে নির্বাচন করবে কি করবে না এ বিষয়ে ইসি কিছুটা নমনীয় থাকলেও ওই ঘোষনার পর কৌশলী পথে এগোচ্ছে কমিশন। এদিকে, সংলাপে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সিনিয়র সাংবাদিক ও বরেণ্য শিক্ষাবিদরা গ্রহণযোগ্য সংসদ নির্বাচন আয়োজনে বেশকিছু পরামর্শ ও মতামত দিয়েছিল ইসি। এর মধ্যে উলে­খযোগ্য হচ্ছে, – নির্বাচন কমিশনকে গৃহীত শপথের প্রতি অনুগত থেকে সৎ, নিরপেক্ষ ও সাহসী হয়ে সংবিধান ও আইন অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করতে হবে। প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সকল সদস্যকে ভোটের সময় নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন নিশ্চিত করা এবং নির্বাচনে এসব সদস্য সংখ্যা অপ্রতুল হলে নির্বাচন একাধিন দিনে কয়েকটি ভাটে অনুষ্ঠান করা যেতে পারে। সংসদ নির্বাচনে বেশির ভাগ আসনে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটানিং কর্মকর্তা নিয়োগ করে নির্বাচন পরিচালনার সুপারিশ জানান। ইসি সূত্রমতে, আগামী জুন মাসে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসবে ইসি। এ সংলাপ ঈদুল আযহা পরবর্তী গড়াতে পারে। কারণ ইসির প্রধান এই অংশীজনদের মতামতকে অধিক গুরুত্ব দিতে চায়। তাদের সঙ্গে সংলাপের পর আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষনা করবে কমিশন। বর্তমান কমিশন আরপিওসহ নির্বাচনের খুঁটিনাটি বিষয়গুলোকে অধিক প্রাধান্য দিচ্ছে বলে ইসির নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com