সোনাবাড়িয়া (কলারোয়া) প্রতিনিধি \ সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার সোনাবাড়ীয়ায় অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা না পাওয়ার টেনশনে হার্ট অ্যাটাক করে মাজেদা খাতুন নামে এক বৃদ্ধা কর্মচারীর মৃত্যু হয়েছে। ১৭ ডিসেম্বর (শনিবার) আনুমানিক বেলা সাড়ে ১১টার সময় চিকিৎসাধীন অবস্থায় যশোর সদর হাসপাতালের আইসিইউ’তে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। সূত্রে জানা যায়, মৃত মাজেদা খাতুন সোনাবাড়ীয়া সম্মিলিত মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে গত ৯ জুলাই (২০২২) তারিখে অবসর গ্রহণ করেন। অবসরের টাকা উত্তোলনের জন্য রেজুলেশন সহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করে সভাপতির ফরওয়াডিং-এ স্বাক্ষর নিতে স্কুলের সভাপতি আমজাদ হোসেনের বাড়িতে গেলে তিনি স্বাক্ষর না করে অপমানসূচক উচ্চবাক্য ব্যবহার করে ফিরিয়ে দেন। এরপর থেকে দুঃশ্চিন্তায় পড়েন ভুক্তভোগী পরিবার। সোনাবাড়ীয়া সম্মিলিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী মোকলেছুর রহমান বলেন, সভাপতি দীর্ঘদিন ধরে স্কুলে আসেন না। গত ২১ নভেম্বর-২০২২ তারিখে আমি সহ সিনিয়র শিক্ষক স্বপন কুমার চৌধুরী, আঃ জব্বার, রুহুল কুদ্দুস, কামাল হোসেনকে নিয়ে সভাপতির বাড়িতে গেলে তিনি কাগজপত্রে স্বাক্ষর করেননি। পরবর্তীতে ৫ ডিসেম্বর-২০২২ তারিখে আমি ও সিনিয়র শিক্ষক স্বপন কুমার চৌধুরী, রুহুল কুদ্দুসকে নিয়ে নভেম্বরের বেতন বিল, চেক ও চেক রেজিঃ, চেক বহি, ম্যানেজিং কমিটির সভা আহবানের চিঠি, মাজেদা খাতুনের অবসরের কাগজপত্র সভাপতির কাছে নিয়ে গেলে তিনি বেতন বিল ছাড়া অন্য কোনো কাগজপত্রে স্বাক্ষর করেননি। আমি উনাকে বারবার অনুরোধ করি অন্তত মাজেদা খালার অবসরের কাগজটিতে স্বাক্ষর করে দেন। কিন্তু সভাপতি সাহেব স্বাক্ষর না করে আমাদের ফিরিয়ে দেন। মাজেদা খাতুনের ছোট ছেলে আব্দুল গফফার বলেন, আমার মায়ের মৃত্যুর জন্য সভাপতি-ই দায়ী। মা নিজে একদিন সভাপতির বাড়ি গেছে, আমি দুইদিন গেছি, তবুও সভাপতি অবসরের কাগজপত্রে স্বাক্ষর করেনি। সভাপতিকে বলেছি আমার মা প্রেসারের রোগী, উনি খুব টেনশন করছেন। একটু দয়া করে অবসরের কাগজটিতে স্বাক্ষর দেন। তখন সভাপতি বলেন এসব ভেল (অভিনয়), আমি সব বুঝি। এছাড়াও আরও অনেক অকাট্য ভাষায় আমাকে অপমান করেন। এরপর একদিন আমার অসুস্থ মা নিজে যান সভাপতির বাড়িতে। তবুও সেদিন স্বাক্ষর না করে মাকে ফিরিয়ে দেন এবং অপমান করেন। এসব নিয়ে দুঃশ্চিন্তা আর অপমানে মা বাড়ি ফেরার পথে রাস্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। ম্যানেজিং কমিটির সদস্য নূরুল ইসলাম, আনারুল ইসলাম ও নবীছদ্দীন বলেন, বর্তমান সভাপতি স্কুলের জন্য এক ভয়ংকর কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ তিনি এর আগে স্কুলের শিক্ষকদের বেতন বিলে স্বাক্ষর না করে বেতন আটকে দেন। কয়েক দিন আগে মাজেদা খালা নিজে তার অবসরের কাগজ পত্র নিয়ে সভাপতির বাড়িতে গেলে তিনি তার সাথে খুব খারাপ আচারণ করেন এবং কাগজে স্বাক্ষর না করে ফিরিয়ে দেন। মাজেদা খালা বাড়ি ফেরার পথে রাস্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর তাকে যশোর সদর হাসপাতলের আইসিইউ’তে ভর্তি করা হয়। মাজেদা খালার মৃত্যুর জন্য বর্তমান কমিটির সভাপতি দায়ী বলে আমরা মনে করি। সভাপতি কেন স্কুলে আসেন না, আর কেন তিনি কাগজপত্রে স্বাক্ষর করছেন না-এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য নূরুল ইসলাম বলেন, ইতোমধ্যে স্কুলে ৫ জন কর্মচারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এরপর সভাপতি এসব নিয়োগ নিয়ে রমরমা বাণিজ্যের পায়তারা চালায়, আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যরা এর বিরোধীতা করলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে যান। তারপর থেকে তিনি সব রাগ স্কুলের প্রতি দেখাতে শুরু করেন। প্রধান শিক্ষক আখতার আসাদুজ্জামান (চান্দু) বলেন, সভাপতি দীর্ঘদিন ধরে স্কুলে আসেন না। বিভিন্ন সময়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র স্বাক্ষর করাতে সভাপতির কাছে পাঠানো হলে তিনি স্বাক্ষর না করে ফিরিয়ে দেন। এতে করে স্কুলের স্বাভাবিক কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী মাজেদা খাতুনের অবসরের ফরওয়াডিং-এ স্বাক্ষর করাতে অফিস সহকারী সহ সিনিয়র শিক্ষকদের ৩ দিন পাঠানো হলেও সভাপতি স্বাক্ষর করেননি। এ ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয় সূধীমহল বলেন, আমজাদ হোসেন সভাপতি হওয়ার পর তিনি নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য মরিয়া। নিয়োগ বাণিজ্য ছিল তার মূল টার্গেট। কোনো কারণে সেটি বাস্তবায়ন করতে না পারায় তিনি এখন সরাসরি স্কুলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। স্কুলের বৃহৎ স্বার্থে সভাপতির বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। অভিযোগে বিষয়ে জানতে স্কুলের সভাপতি মোঃ আমজাদ হোসেনের (০১৭১৮-০০২৬৭৬) এই নম্বরের মুঠোফোনে বারবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুলী বিশ্বাস বলেন, বিষয়টি আমি জানিনা। কেউ এখনো অভিযোগ করেনি। তবে, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি।