দৃষ্টিপাত রিপোর্ট \ ঐ নতুনের কেতন ওড়ে, কাল বৈশাখীর ঝড়। তোরা সব জয়ধ্বনি কর! তোরা সব জয়ধ্বনী কর। হ্যাঁ বাংলাদেশ নতুন পথে, নব গতিতে, দুর্বার দুর্দান্ত সৃষ্টি সুখের উলাসে। আজ সেই ঐতিহাসিক দিন, আজ সেই মহেন্দ্রক্ষন। যে দিনটিতে, যে ক্ষনে, মুহুর্তে বাংলাদেশ জানান দিচ্ছে বাংলাদেশ পারে এবং পেরেছে। যে পদ্মা সেতু ছিল স্বপ্নের, অধরা অথবা অসম্ভব ব্যাপার। সেই পদ্মা সেতু আজ দৃশ্যমান। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সম্মান সক্ষমতা আর নির্ভরতার প্রতিক পদ্মা সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। প্রস্তুত পদ্মা সেতু, প্রস্তুত দেশবাসি। গভীর আগ্রহ নিয়ে বিশ্বের শত শত কোটি মানুষের অপেক্ষার দিন শেষ হচ্ছে। স্বাধীন বাংলাদেশ এর অভ্যুদ্বয়ের পর এই প্রথম এমন দৃষ্টিনন্দন নির্মানশৈলী। এই প্রথম পদ্মা সেতু কেবলমাত্র একটি সেতু নয়, পদ্মা সেতু অর্থনীতির চাকা দুর্বার গতিতে ঘূর্ণায়মানের নাম। পদ্মা সেতু বাংলাদেশকে বিশ্বসভায় স্বনির্ভর, স্বাবলম্বী, আত্মনির্ভরশীল দেশ হিসেবে পরিচিতি করার মাধ্যম। এই সেতু বাংলাদেশের গর্ব, মর্যাদা, সক্ষমতা, গৌরবের প্রতিমুখ। বিশ্ববাসি অবাক বিস্ময়ে কেবল দেখছে যে বাংলাদেশের অমর সৃষ্টি পদ্মা সেতু। দেশের সতের কোটি মানুষ আজ আবেগে, প্রাপ্তিতে, অর্জনে বিমোহিত। সর্বত্র এক আওয়াজ, একই কথকথা পদ্মা সেতু আমাদের পদ্মা সেতু। গোটা জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ উৎসবে, উচ্ছ¡াসে আনন্দ স্রোতের জয়গানে। সর্বত্র আজ খুশির আমেজ। দিকে দিকে আনন্দ আয়োজন। সব কিছুই অসম্ভব আর স্বপ্নের পদ্মা সেতুর বাস্তবরূপ। পদ্মা সেতু শুধুমাত্র সেতু নয় নানান ধরনের ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত আর অসম্মানেরও প্রতিবাদ। বিশ্ব ব্যাংক পদ্মা সেতুতে অর্থায়নের চুক্তি বাতিল পূর্বে নানা ধরনের অসম্মানজনক শর্ত আরোপ করলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেদিন দৃঢ়চিত্তে অসম্মানজনক শর্তকে প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন আমরা আমাদের অর্থেই পদ্মা সেতু নির্মান করবো। পদ্মা সেতু সেই দৃঢ়তা এবং প্রতিশ্র“তির সফল বাস্তবায়ন। পদ্মা সেতু কেবল পাথর, সিমেন্ট, কংক্রিট, ইস্পাত লোহার স্থাপনা বা সেতু নয় এই সেতু দেশের দুই প্রান্তকে একাকার করার সুমহান সংযোগ মাধ্যম। খরস্রোত, আগ্রাসী পদ্মার পানির সাথে যুদ্ধ করে অনন্য অসাধারন ইঞ্জিনিয়ারিং এর সফল সংস্করন পদ্মা সেতু। বাংলাদেশের যাতায়াত যোগাযোগ ব্যবস্থা সেতুবন্ধন, সহজ সমীকরন সেই সাথে অর্থনীতির মহাক্ষেত্র স¤প্রসারনের নাম পদ্মা সেতু। দেশের দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলে সাতক্ষীরা সহ ২১ জেলার সাথে রাজধানী ঢাকার সরাসরি যোগাযোগের মহা মাধ্যম এর নাম পদ্মা সেতু। ব্যবসা বাণিজ্যে আশানুরূপ বিপ্লব ঘটাবে এই সেতু। সাতক্ষীরাকে বিশেষ ভাবে সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি এই জেলার অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে। সাতক্ষীরা হতে রাজধানী ঢাকার দুরত্ব ১২৫ কিলোমিটার কম হতে চলেছে। সাতক্ষীরার একজন ব্যবসায়ী পণ্য সামগ্রী নিয়ে দিনে রাজধানীতে পৌছে ব্যবসা শেষে রাতেই বাড়ী ফিরতে পারবে। ছয় কিলোমিটারের অধিক দীর্ঘ, পদ্মা সেতু দিয়ে মাত্র কয়েক মিনিটে ১২৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়ার অসাধারন কীর্তি পদ্মা সেতু। অপার সম্ভাবনাময় জেলা সাতক্ষীরার অনন্য অসাধারন পর্যটন কেন্দ্র সুন্দরবন। সড়ক পথে সুন্দরবন ভ্রমনের মহাসুযোগ সৃষ্টি করেছে পদ্মা সেতু। আর তাই বলতেই হয় এই সেতু সাতক্ষীরার পর্যটন শিল্পকে সুরক্ষিত ও সমৃদ্ধ করবে। চিংড়ী শিল্প বিশ্ব বাজারে কোন কোন সময় চাহিদা হ্রাস পাচ্ছে বা পায় যে কারনে দেশীয় বাজারে চিংড়ী শিল্পের বাজার সৃষ্টিতে এই সেতু নিয়ামক ভূমিকা পালন করতে পারে। বিশেষ ভাবে রাজধানী ঢাকায় চিংড়ী বাজার সৃষ্টিতে সহায়ক হবে পদ্মা সেতু। শুধুমাত্র চিংড়ী শিল্প নয় অন্যান্য সাদা প্রজাতির মাছ, রবিশষ্য, সবজি সহ উৎপাদিত কৃষি পণ্য, ভোমরা বন্দর অবারিত সম্ভাবনায় পৌছাবে। মাত্র ছয় ঘন্টায় কোলকাতা হতে ভোমরা বন্দর হয়ে পণ্য সামগ্রী রাজধানী ঢাকায় পৌছাবে। পশ্চিম বাংলার জনমানুষ সহ ব্যবসায়ীদের মাঝেও তাই ব্যবসা সফল পদ্মা সেতুর জন্য উদ্ভাস বইছে। ভোমরা বন্দর জমজমাট হবে। দুর দুরান্ত হতে ব্যবসায়ীরা ভোমরা বন্দরে ঝুকবে। অবশ্য বেনাপোল বন্দর, মোংলা ও পায়রা বন্দরেও উন্নয়ন ঘটবে। ব্যবসায়ীদের ঠকানো, পণ্য পরিবহনে অধিক অর্থ সেই সাথে মধ্যস্বত্ত¡ভোগীদের দৌরাত্ব কমাবে সক্ষমতার পদ্মা সেতু। পদ্মা পারের মহাআয়োজনে আনন্দ উৎসবে, পদ্মা কন্যার সাজসজ্জায় সাতক্ষীরার বিশ লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতি আয়োজন ঘটবে আজ। আনন্দঘন আয়োজনে সাতক্ষীরার প্রতিটি এলাকা হতে উচ্ছ¡াসিত, জনমানুষের যাত্রা প্রমান করছে সাতক্ষীরাবাসির জন্য কতটুকু আশীর্বাদ তা সহজেই অনুমেয়। পদ্মা পারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান এবং উদ্বোধক পদ্মা সেতুর রূপকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিহাসের অংশে পরিনত হবেন। বাংলাদেশ নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে। নতুন এক ইতিহাসের ধারায় লাল সবুজের বাংলাদেশ।