বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৭ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
লক্ষ টাকার ৮ দলীয় নলতা শরীফ কাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট ১ম রাউন্ডের ২য় খেলায় হাজিরপুর জয়ী আশাশুনি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানে আটক ২ বুধহাটায় বেওয়ারিশ অসহায় বৃদ্ধর মৃত্যু তালার প্রকৌশলী ও ঠিকাদার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ! সাতক্ষীরায় জামায়াতের বার্ষিক পরিকল্পনা ওরিয়েন্টেশন গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে খুলনার বিভাগীয় কমিশনারের মতবিনিময় বুধহাটা এবিসি কেজি স্কুলে বার্ষিক ফল প্রকাশ প্রতাপনগরে অগ্নিকাণ্ডে ৩টি ঘর ভস্মীভূত \ শতাধিক হাঁস মুরগীর মৃত্যু নূরনগরে অবৈধ বালি উত্তোলনের চেষ্টা, প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বন্ধ আশাশুনির বড়দলে বিনা চাষে সরিষা আবাদে সাফল্য

স্বর্ণ আমদানি লাইসেন্সের আবেদন করছে না কেউ

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় বুধবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৪

এফএনএস এক্সক্লুসিভ: প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্বর্ণ আমদানিতে কেউ আবেদন করছে না। ফলে দেশে স্বর্ণ আমদানি শতভাগই অপ্রাতিষ্ঠানিক হয়ে পড়ার শঙ্কা বাড়ছে। বৈধ পথে দেশে স্বর্ণ আমদানি করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিগত ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে একটি ব্যাংকসহ ১৯ প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দিয়েছিল। তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সার্কুলারে বলা হয়েছিলো, লাইসেন্সের মেয়াদ হবে দুই বছর। পরে ২০২১ সালের ১ জুলাইয়ের আরেকটি সার্কুলারে বলা হয়, অনুমতি প্রদানের তারিখ থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত লাইসেন্সের মেয়াদ বলবৎ থাকবে। তবে মেয়াদোত্তীর্ণের তিন মাস আগেই বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে লাইসেন্স নবায়নের জন্য আবেদনপত্র জমা দিতে হবে। ওই অনুযায়ী আগামী মাসেই ১৯টি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউই নতুন করে লাইসেন্স নবায়নের জন্য আবেদন করেনি। বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বৈধভাবে স্বর্ণ আমদানির লাইসেন্সগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কয়েকটির উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারী রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে পলাতক রয়েছে। কেউ কেউ গ্রেফতারও হয়েছে। বাকিগুলোর পক্ষ থেকেও লাইসেন্স নবায়নের কোনো উদ্যোগ এখনো নেয়া হয়নি। মূলত অবৈধ পথে স্বর্ণ বাণিজ্য ঠেকাতে ২০১৯ সালের ১৯ মার্চ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্বর্ণের আমদানিকারক ডিলার হিসেবে নিয়োগ পেতে আবেদন করার সুযোগ দিয়েছিলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই সময়ে ৪৭টি প্রতিষ্ঠান আবেদন করে, যার মধ্যে ১৯ প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেয়া হয়। লাইসেন্স নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হলো চতুর্থ প্রজন্মের মধুমতি ব্যাংক, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড, জুয়েলারি হাউজ, রত্না গোল্ড, অরোসা গোল্ড করপোরেশন, আমিন জুয়েলার্স, স্রেজা গোল্ড প্যালেস, জরোয়া হাউজ লিমিটেড, মিলন বাজার, এসকিউ ট্রেডিং, এমকে ইন্টারন্যাশনাল, বুরাক কমোডিটিস এক্সচেঞ্জ, গোল্ডেন ওয়ার্ল্ড জুয়েলার্স, রিয়া জুয়েলার্স, লক্ষ্মী জুয়েলার্স, বিডেক্স গোল্ড অ্যান্ড ডায়মন্ড, ডি ডামাস দি আর্ট অব গ্যালারি ও প্রিন্সেস গোল্ড অ্যান্ড ডায়মন্ড কটেজ লিমিটেড। ওসব প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হলেও লাইসেন্স নবায়নের জন্য কেউ এখনো আবেদন করেননি। লাইসেন্সের মেয়াদ গণনার শুরু ২০১৯ সাল থেকেই প্রযোজ্য হবে। ওই হিসেবে লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হওয়ার বিষয়টি সব প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত লাইসেন্সগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানগুলো খুবই অল্প পরিমাণে স্বর্ণ আমদানি করেছে। বরং শুরু থেকেই ওসব প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তাসহ জুয়েলারি খাতসংশ্লিষ্টরা আমদানি কার্যক্রমে আরোপিত কর কাঠামো নিয়ে আপত্তি তুলেছে। তাদের মতে, স্বর্ণ নীতিমালা—২০১৮—তে মূল্যবান ধাতুটি আমদানিতে যে কর কাঠামো দাঁড় করানো হয়েছে, তা সংশ্লিষ্ট শিল্পের বিকাশের অনুকূল নয়। ফলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য এটি অনুসরণ করে স্বর্ণ আমদানি করা বেশ মুশকিল। যে কারণে দেশে স্বর্ণের বাজার অননুমোদিত বা অপ্রাতিষ্ঠানিক পন্থায় আমদানির ওপর থেকে নির্ভরতা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। বরং মূল্যবান ধাতুটির বাজারে চোরাচালান, অর্থ পাচার ও কালো টাকার বিস্তার বেড়েছে। আবার ব্যক্তি পর্যায়ে বিদেশ থেকে স্বর্ণ আনায় প্রচলিত ব্যাগেজ রুল নিয়েও বাজুসসহ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের আপত্তি রয়েছে। এ অবস্থায় লাইসেন্স নিয়ে যারা সামান্য পরিমাণে কিছু আমদানি করছিলেন, তারা বন্ধ করে দিলে দেশের স্বর্ণ আমদানির বাজার পুরোপুরি অপ্রাতিষ্ঠানিক হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সূত্র আরো জানায়, দেশে স্বর্ণ আমদানি নীতিমালা গেজেট আকারে ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর জারি হয়। ওই নীতিমালার মধ্য দিয়ে স্বর্ণ আমদানির পদ্ধতি এবং এজন্য কাদের লাইসেন্স দেয়া হবে তা নির্ধারণের দায়িত্ব পায় বাংলাদেশ ব্যাংক। নীতিমালার আওতায় লাইসেন্স গ্রহণের পর থেকে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো খুবই সামান্য পরিমাণে স্বর্ণ আমদানি করেছে। লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম জুয়েলারি হাউজের মালিক এবং বাজুস ভাইস প্রেসিডেন্ট ও স্ট্যান্ডিং কমিটি অন অ্যান্টি—স্মাগলিং অ্যান্ড ল এনফোর্সমেন্টের চেয়ারম্যান রিপনুল হাছান শুধু একবার আড়াই কেজি স্বর্ণ আমদানি করেছে। এশবার লাইসেন্স নবায়নও করেছে। সামাইরা গ্রুপের প্রতিষ্ঠান প্রিন্সেস গোল্ড অ্যান্ড ডায়মন্ড কটেজ লিমিটেড লাইসেন্স পাওয়ার পর শুধু একবার এক কেজি স্বর্ণ আমদানি করেছে। কিন্তু শুল্ক—কর বেশি হওয়ায় পরে আর আমদানি করেনি। ডি ডামাস দি আর্ট অব গ্যালারির মালিক শিবাস রয় অপু ও বিডেক্স গোল্ড অ্যান্ড ডায়মন্ডের স্বত্বাধিকারী রুকনুজ্জামান খান লাইসেন্স পাওয়ার পরও কোনো স্বর্ণ আমদানি করেনি। এদিকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আমদানীকৃত স্বর্ণ দেশের যেকোনো বিমানবন্দর দিয়ে কাস্টম হাউজ হয়ে খালাস নিতে হয়। তবে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়েই বেশির ভাগ স্বর্ণ খালাস হয়। এগুলো এয়ারফ্রেইটে আসে। এছাড়া অন্য পথে দেশে আসা স্বর্ণ চোরাচালান হিসেবে গণ্য হয়। ঢাকা কাস্টম হাউজ দিয়ে সর্বশেষ ৩ নভেম্বর ৫ কেজি ৮৩২ গ্রাম স্বর্ণ আমদানি করেছে রিয়া জুয়েলার্স। অভিযোগ রয়েছে স্বর্ণ আমদানিতে লাইসেন্স নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর বড় একটি অংশই রাজনৈতিক বিবেচনায় তা পেয়েছিল। সেগুলোর কয়েকটির মালিক বা বিনিয়োগকারী বিগত সরকারের আমলে প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাদের কয়েকজন এখন হয় পলাতক, নয় আটক রয়েছেন। পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন করে লাইসেন্স গ্রহণ বা লাইসেন্স গ্রহণের সময় বাড়ানোর আবেদন করবে কিনা সে বিষয়েও সংশয় রয়েছে। বিদ্যমান অবস্থায় প্রাতিষ্ঠানিক আমদানি কমে যাওয়ায় স্বর্ণের বাজার থেকে কাক্সিক্ষত মাত্রায় রাজস্ব আহরণ করতে পারছে না জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। অথছ আমদানি তথ্যানুযায়ী স্বর্ণের পরিমাণ কম হলেও দেশের জুয়েলারিগুলোয় টন টন স্বর্ণ রয়েছে। বাজারে স্বণের্র কোনো অভাব নেই। কিন্তু আমদানি তথ্য কম। এতো স্বর্ণ কীভাবে কোথা থেকে আসে, কেউ জানতে চাইলে কোনো জবাব নেই। দেশে যে পরিমাণ স্বর্ণ আছে, তার সঙ্গে আমদানি হিসাবের মিল নেই। ফলে যেসব এয়ারক্রাফটে স্বর্ণ চোরাচালান হয়, আলাদা মেকানিজম করে, সেসব এয়ারক্রাফট নিষিদ্ধ করা হবে। পারমিট দেয়া হবে না। প্রয়োজনে ব্যাগেজ রুলসও আরো কঠোর করা হবে। অন্যদিকে এ বিষয়ে বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির (বাজুস) স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড মনিটরিংয়ের চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান জানান, হাতে গোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের আমদানি কার্যক্রম রয়েছে। বাকিগুলোকে কেন লাইসেন্স দেয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকই ভালো জানে। অথচ ৪৭টি প্রতিষ্ঠান লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছিল ধাপে ধাপে আরো প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেবে। কিন্তু আর দেয়নি।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com