বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:০৭ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
জয়নগরে মন্দির ভিত্তিক স্কুলের সমাপনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের সাথে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী নেতৃবৃন্দের মতবিনিময় শ্যামনগরে বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবির কর্মি টি এস অনুষ্ঠিত তালায় আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস ও জাতীয় প্রবাসী দিবস পালিত সাতক্ষীরায় বিজয় দিবসে সদর উপজেলা বিএনপির র্যালি কলারোয়ায় টালি মালিক সমিতির নব—কমিটি গঠন সভাপতি গোষ্ট পাল ও সাধারণ সম্পাদক তুহিন সাতক্ষীরায় আন্তর্জাতিক অভিবাসী ও জাতীয় প্রবাসী দিবস পালিত আশাশুনি রিপোর্টার্স ক্লাব ও আশাশুনি থানার বিজয় দিবস প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচ নুসরাতের নৃশংস হত্যাকারী জনির ফাঁসির দাবীতে মানববন্ধন আশাশুনি আশার উদ্যোগে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প

স্বাধীনতার ৫০বছর পর সংবিধান নির্দেশিত নির্বাচন কমিশন \ গঠন আইন পাস, সার্চ কমিটির একজন সদস্য হবেন নারী

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০২২

জি এম শাহনেওয়াজ, ঢাকা থেকে \ স্বাধীনতার ৫০ বছর পর জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে সংবিধান নির্দেশিত ও বহুল আলোচিত ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল-২০২২’। পাসের আগে ওই বিলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও নির্বাচন কমিশনার (ইসি) নিয়োগের জন্য গঠিত সার্চ কমিটিতে রাষ্ট্রপতির মনোনীত দুই বিশিষ্ট নাগরিকের মধ্যে একজন নারী রাখার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া সার্চ কমিটির কাজ ১০ দিনের স্থলে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে শেষ করার বিধান রাখা হয়েছে। এই দু’টিসহ বিলে সংসদ সদস্যদের মোট ২২টি সংশোধনী প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া অধিবেশনে বিলটি সংসদে পাসের প্রস্তাব করেন আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। এরপর প্রায় তিন ঘন্টার আলোচনা শেষে কণ্ঠভোটে বিলটি পাস হয়। এর আগে বিলের ওপর দেওয়া জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও বিএনপি’র সংসদ সদস্যরা। তবে তাদের সেই প্রস্তাব কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। পরে বিলের ওপর সংশোধনী প্রস্তাব উত্থাপন করেন জাতীয় পার্টি, বিএনপি, জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির সংসদ সদস্যরা। যার মধ্য থেকে ২২টি প্রস্তাব গৃহীত হয়। অধিবেশনে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন সার্চ কমিটিতে দুই জন বিশিষ্ট নাগরিকের মধ্যে একজন নারী রাখার প্রস্তাব দেন। আইনমন্ত্রী সেই প্রস্তাব গ্রহণে সায় দিলে, সংসদ তা ভোটে গ্রহণ করে। সংসদে উত্থাপিত বিলে বলা হয়েছিলো, রাষ্ট্রপতি ছয় সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি গঠন করবেন, যার সভাপতি হবেন প্রধান বিচারপতি মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারক। সদস্য হিসেবে থাকবেন প্রধান বিচারপতির মনোনীত হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারক, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, সরকারি কমিশনের চেয়ারম্যান এবং রাষ্ট্রপতি মনোনীত দুই জন বিশিষ্ট নাগরিক। এখন রাষ্ট্রপতির মনোনীত ওই দুজন বিশিষ্ট নাগরিকের মধ্যে একজন নারী রাখার বিধান যুক্ত হয়েছে। সংসদে পাস হওয়া বিলটি সংসদ সচিবালয় থেকে পাঠানো হবে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে। রাষ্ট্রপতি সই করার পর গেজেট আকারে প্রকাশ হলেই প্রথমবারের মত প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে আইন পাবে বাংলাদেশ। এরআগে গত রবিবার আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক ওই বিলটি সংসদে উত্থাপনের পর তা অধিকতর পরীক্ষার জন্য সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে বিলের দু’টি ধারায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনসহ পাসের সুপারিশ করে গত বুধবার সংসদে প্রতিবেদন জমা দেয় আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। বিল পাস নিয়ে বিরোধী দলের বক্তব্যের জবাবে আইন মন্ত্রী ঃ সংসদে পাস হওয়া ইসি গঠন আইনে কাউকে ইনডেমনিটি দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ইনডেমনিটির ওই পথে হাটে না। ইনডেমনিটি কথা শুনলেই আওয়ামী লীগের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। বিএনপি ইনডেমনিটি দিয়ে আমাদের রক্ত ক্ষরণ করিয়েছে। এই আইনে লিগ্যাল কাভারেজ দেওয়া হয়েছে। এই আইনের মধ্যে কেউ অন্যায় করে থাকলে তাকে প্রকেটশন দেওয়া হয়নি। আইনে সার্চ কমিটি গঠনের প্রস্তাবনা প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, ইসি গঠনে সার্চ কমিটি গঠনের বিষয়ে ২০১২ সালে রাজনৈতিক দলগুলো সম্মত হয়েছিলো। তখন থেকেই এই সার্চ কমিটির ধারণা এসেছে। এটা কল্পনা থেকেও আসেনি আকাশ থেকেও পড়েনি। এটা তো নতুন আবিষ্কার নয়। সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠিত দুই কমিশন হয়েছে। যার কারণে এটা গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। ফলে জনমত যাচাই তো দশ বছর ধরে হয়ে গেছে। বিষয়টি হলো তালগাছটি না পেলে অনেক কমপ্লেইন থাকে। তিনি বলেন, দুইজন বিশিষ্ট নাগরিক কারা হবে, সেটা নিয়ে কথা হচ্ছে। আমরা তো আইনে কোথাও বলিনি, সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে তাদের নিযোগ দেওয়া যাবে না। বিশিষ্ট নাগরিকের ক্রাইটেরিয়া তো বলে দেওয়া হয়নি। আমরা কেবল রাষ্ট্রপতিকে এই সুযোগটি দিয়েছি। বিএনপির এমপিদের তত্ত¡াবধায়ক সরকারের দাবির জবাবে মন্ত্রী বলেন, উনারা তো তালগাছ চান। উনারা কিছুই মানেন না যতক্ষণ তালগাছটা উনাদের না হয়। বিলের উপর আলোচনায় বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যরা ঃ বিলে উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপির সংসদীয় দলের নেতা মো. হারুনুর রশীদ আইনটি পাসকে সরকারের ক‚টকৌশল আখ্যা দিয়ে বলেন, ২০১৪ সালে বিনা ভোটের নির্বাচন হয়েছে, ২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতে হয়েছে। এই আইনের মাধ্যমে আগামীতে দিনের বেলা নতুন কৌশলে নির্বাচন করবে কি না, তা নিয়ে মানুষের প্রশ্ন আছে। রুমিন ফারহানা বলেন, ইসি গঠনে সংবিধানে আইন করার কথা বলা আছে কিন্তু অংশীজনের সাথে কথা না বলে তাড়াহুড়া করে আইন করা আইওয়াশ ছাড়া কিছুই নয়। এই আইনটি কেবল বিএনপি নয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজ প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা কঠোর সমালোচনা করেছেন। এটাকে ইসি গঠনের আইন না বলে অনুসন্ধান কমিটি গঠনের আইন বলা যেতে পারে। তিনি আরো বলেন, সার্চ কমিটিতে সরকারি দল, সংসদের প্রধান বিরোধী দল ও তৃতীয় বৃহত্তম দলের একজন করে প্রতিনিধি থাকলে স্বচ্ছতা থাকতো। কিন্তু প্রস্তাবিত আইনে কেবল সরকারের ইচ্ছায় ইসি গঠন হবে। ওই কমিশন স্বাধীন হবে না, হবে সরকারের নির্বাচন বিষয়ক মন্ত্রণালয়। জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম বলেন, সংবিধানের ৪৮ অনুচ্ছেদ সংশোধন না করে এই আইন করা হলে তা সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক হবে। এই আইনে প্রস্তাবিত সার্চ কমিটির সদস্য নির্বাচনের সংসদ সদস্যদের ভূমিকা রাখার বিধান যুক্ত করার দাবি করেন তিনি। বর্তমান নির্বাচন কমিশন শতভাগ আমলা নির্ভর উলে­খ করে জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, বাংলাদেশে কী বিচারপতি ও আমলা ছাড়া বিশ্বাস করার মত কেউ নেই? রাজনীতিবিদ বা সংসদ সদস্যদের কী বিশ্বাস করা যায় না? আওয়ামী লীগ এত বড় রাজনৈতিক দল, বলেন আপনাদের জন্ম ক্যান্টনমেন্টে জন্ম হয়নি তাহলে আপনারাও কেন বিচারপতি ও আমলার ওপর নির্ভর করবেন? সাবেক সিইসি এটিএম শামসুল হুদার বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, যে আমলা এরশাদ, বিএনপি, আওয়ামী লীগ সব সরকারের আমলে আরামে চাকরি করেছেন, পরে চাকরি শেষে আবার পঁচ বছরের জন্য সিইসি হয়েছেন। তারা ওপরেরটা খান নিচেরটাও খান। স্পিকারের মাধ্যমে মনোনয়নে দুইজন সংসদ সদস্যকে সার্চ কমিটির সদস্য হিসেবে রাখার প্রস্তাব করেন তিনি। গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থার ওপর জনগণের আস্থা নেই। এই ইসির সুবিধাভোগী ছাড়া সকলেই বলবে তারা ব্যর্থ। সরকারের আকাঙ্খার বাইরে কিছু করতে পারে না কমিশন। তিনি বলেন, আমরা রাষ্ট্রপতির সাথে সংলাপে গিয়ে যে আইন গঠনের প্রস্তাব দিয়েছি, এই আইনে তার প্রতিফলন ঘটেনি। আইনটিতে বঙ্গবন্ধুর আকাঙ্খার সঙ্গে মিল নেই।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com