দৃষ্টিপাত ডেস্ক ॥ হামাসের পক্ষ হতে হামলা বন্ধ না হলে ইসরাইলের সাথে কোন ধরনের যুদ্ধ বিরতি বা বন্দী বিনিময় চুক্তি হবে বলে জানিয়ে দেওয়ার পর থেকে দখলদার ইসরাইল বাহিনী গাজায় হামলা তীব্রতা ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধি করেছে। অন্যদিকে হামাস ও প্রতিরোধ হামলা জোরদার করেছে। গতকাল হামাসের হামলায় আর এগার দখলদার সেনার নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। হামাসের সশস্ত্র শাখা কাসেম বিগ্রেড এর হামলায় এগার ইসরাইলি সেনার নিহত হওয়ার ঘটনায় ইসরাইলি বাহিনীর মাঝে নতুন ভাবে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এর পূর্বে গত বুধবার হামাসের হামলায় পঁচিশ ইসরাইলি সেনার নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। এক দিনের ব্যবধানে আবারও এগার সেনার নিহত হওয়ার ঘটনা গাজায় ইসরাইলি বাহিনী যে বিপর্যয়কর সময় অতিক্রম করছে তা আবারও প্রমানিত হলো। বৃহস্পতিবার মিশরে হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়া সংশ্লিষ্ট পক্ষ গুলোকে জানান দেয় যে ইসরাইল গাজায় হামলা বন্ধ না করলে এবং স্থায়ী যুদ্ধ বিরতিতে না আসলে হামাস বন্দী বিনিময় চুক্তিতে যাবে না। গতকাল মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ্যান্টনি বলেছেন গাজায় হামলা বন্ধ হওয়ার একমাত্র উন্মুক্ত পথ হলো হামাস সদস্যদেরকে আত্মসমর্পন করা। তিনি ওয়াশিংটনে এক সংবাদ ব্রিফিং এ বলেছেন বিশ্বময় গাজায় ইসরাইলের হামলা বন্ধের আহবান জানালেও কোন দেশ বলছে না যে, হামাস সন্ত্রাসীরা আত্মসমর্পন করুক। দৃশ্যতঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর এমন বক্তব্য নিশ্চিত গাজায় ইসরাইল হামলা ও গণহত্যাকে সমর্থন প্রদান করা। গতকাল দিনব্যাপী গাজার উত্তরঞ্চলের আল-তুয়ম এলাকায় হামাস যোদ্ধারা দখলদার ইসরাইল বাহিনীর সাথে তুমুল যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এ সময় হামাস যোদ্ধারা মেশিনগান সহ অপরাপর বড় ধরনের অস্ত্রের ব্যবহার ঘটায়। এ সময় ইসরাইলের স্পেশাল ফোর্সের এগার সেনা ঘটনাস্থলে নিহত হয় বলে জানিয়েছে পশ্চিমা মিডিয়াগুলো, ইসরাইলি বাহিনী গাজায় স্থল অভিযানের নামে নিরীহ ফিলিস্তীনিদেরকে গণহারে গ্রেফতার করছে। এবং ইসরাইলের কারাগারে আটক ফিলিস্তীনিদের উপর নির্মম নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে দখলদার ইসরাইলি বাহিনী। গত অক্টোবর মাসের সাত তারিখে হামাস ইসরাইলের অভ্যন্তর ভাগে হামলার পর থেকে এ পর্য’ন্ত ইসরাইল বাহিনীর হামলায় বিশ হাজারের অধিক নিরিহ ফিলিস্তীনিকে হত্যার পাশাপাশি তাদের হামলায় অন্তত ত্রিশ হাজারের অধিক ফিলিস্তীনি আহত হয়ে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুমুখে পতিত, এই আড়াই মাসের ব্যবধানে ইসরাইল সেনারা প্রায় তিন হাজার ফিলিস্তীনিকে গ্রেফতার করেছে। গাজায় সাময়িক যুদ্ধ বিরতির সময়গুলোতে যাদেরকে মুক্তি দেওয়া হয় যুদ্ধ বিরতির পরে তাদের অধিকাংশকে আবারও দখলদার বাহিনী গ্রেফতার করে ইসরাইলের কারাগারে বন্দী রেখেছে। গাজায় তীব্র খাদ্য সংকটের কারনে অচিরেই দুর্ভিক্ষের মুখে পড়তে যাচ্ছে তেইশ লক্ষ অধ্যুষিত এই জনপথটি, বিশেষজ্ঞরা বলছেন গাজা দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি পর্যায়ে পৌছেছে। একদিকে মৃত্যু ভয় বিনা চিকিৎসা অন্যদিকে মহামারী দেখা দিয়েছে। দক্ষিন ও পশ্চিম গাজায় ছড়িয়ে পড়েছে মহামারী। সুপেয় পানির অভাবে গাজার বিস্তীর্ণ জনপদে হাহাকার ছড়িয়ে পড়েছে। গাজার হাটবাজার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ, ঘরে ঘরে থাকা খাবার ফুরিয়ে গেছে। দেশগুলোতে কোন দিনের খাদ্য নেই। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসুচির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে গাজায় অন্তত পাঁচলক্ষ সত্তর হাজার মানুষ ক্ষুধার সাথে বসবাস করছে। ইসরাইলি বাহিনীর বিমান হামলা এবং চাহিদানুযায়ী পর্যাপ্ত খাবার গাজায় প্রবেশ করতে দিচ্ছে না ইসরাইলি বাহিনী আর এ কারনে গাজার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে ক্ষুধা। এদিকে দখলদার ইসরাইল বাহিনীর পক্ষ হতে গাজায় তাদের সাফল্য দাবী করা হলে দৃশ্যতঃ তা অন্তঃসার শুন্য। ইসরাইল দাবী করেছে যে তারা আট হাজার হামাস সদস্য কে হত্যা করেছে কিন্তু ইসরাইল এর স্বপক্ষে কোন প্রমান দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে হামাসের যুদ্ধ বন্দী বিনিময় ও যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখানের পর ইসরাইল সরকার ও সেনা বাহিনী চরত চাপের মুখে পড়েছে। সাধারন ইসরাইলিরা হামাসের ভয়ে যেমন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছ অনুরুপ ভাবে হামাস সদস্য একের পর এক সফল হামলা চালিয়ে ইসরাইলি সেনাদের হত্যা করছে। কাতার ভিত্তিক অত্যন্ত জনপ্রিয় টেলিভিশন চ্যানেল আল জাজিরা বলেছে গাজায় ইসরাইল বাহিনী সামরিক সাফল্যের যে সব দাবী করছে তা দৃশ্যতঃ নিজ সেনা বাহিনীর মনোবল বৃদ্ধি করা এবং আন্তর্জাতিক বিশ্বে ইসরাইলের সক্ষমতা প্রমান করা, আল জাজিরা টেলিভিশনের খবরে আরও বলা হয়েছে যেহেতু ইসরাইল এখনও পর্যন্ত হামাসের হাতে বন্দী ইসরাইলি নাগরিকদের উদ্ধার করতে পারেনি, বরঞ্চ ইসরাইলি বাহিনীর সদস্যরা প্রতিনিয়ত হামাসের হামলায় নিহত ও আহত হচ্ছে, এবং তাদের ট্রাঙ্ক সহ সাজোয়া যান ধ্বংস হচ্ছে। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু আবারও বলেছে তাদের এই মুহুর্তে প্রত্যাশা হামাসকে নির্মূল করা, যতক্ষন না হামাস সন্ত্রাসীরা নির্মূল হচ্ছে ততোক্ষন পর্যন্ত তারা হামলা পরিচালনা করবে। ইসরাইলের প্রধান মন্ত্রী এমন বক্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে হামাসের সশস্ত্র শাখা কামে ব্রিগেড বলেছে হামাসকে নির্মূলের ইসরাইলের চেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। হামাস মৃত্যুকে গ্রহন করবে অথবা দখলদারদের কে হত্যা করবে। এক কথায় হয় মারবে নতুবা মরবে। হামাসের পক্ষ হতে আরও বলা হয়েছে ইসরাইলের আগ্রাসন, হামলা আর হত্যাকান্ড কোন অবস্থাতেই ইসরাইলের বন্দীদেরকে তাদের হাতে ফিরিয়ে দেবে না। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো আবারও ইসরাইলের বিরুদ্ধে অভিযোগের তীর ছুড়ে বলেছে ইসরাইল গাজা উপত্যকায় গণহত্যার মাধ্যমে কেবল মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে তা নয়, তারা দৃশ্যত গাজায় যুদ্ধাপরাধ এর মত জঘন্য অপরাধ করে চলেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে দশ দেশ লোহিত সাগরে ইসরাইল মুখি জাহাজ চলাচলের ক্ষেত্র প্রস্তুত করনে ও হুতিদের নির্মুলের যে ঘোষনা দিয়ছে তা কার্যকর হইনি। হুতিযোদ্ধাদের লোহিত সাগর ও ভূ-মধ্য সাগরের কর্তৃত্ব সামান্যতম খর্ব হইনি। বরঞ্চ বহু জাহাজ কোম্পানী জাহাজ চলাচলের রুট পরিবর্তন করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর গাজায় যুদ্ধ বিরতি অনুমোদন দিয়েছে বলে জানাগেছে, হামাস ও মিশবে সফরের সময় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী, কাতারের প্রধানমন্ত্রী, মিশরের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সহ যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের পক্ষে অবস্থান গ্রহনকারী দেশগুলোর নেতৃবৃন্দের সাথে সাক্ষাত করেছেন।