শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৪৯ পূর্বাহ্ন

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে মানুষের আচরণ পরিবর্তনের তাগিদ

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২২

এফএনএস: সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। পঙ্গুত্ব বরণ করে বোঝা হচ্ছে পরিবারের। তারপরও সড়কে ফিরছে না শৃঙ্খলা, সচেতন হচ্ছে না মানুষ। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে শৃঙ্খলা ও সচেতনতার পাশাপাশি মানুষের আচরণ পরিবর্তন জরুরি। গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)- এর ২৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের এই অনুষ্ঠান থেকে সহায়তা করা হয়। বক্তারা বলেন, সড়ক নিরাপত্তায় জাতিসংঘ একটি প্রেসক্রিপশন ও পাঁচটি পিলার দিয়েছে। প্রত্যেকটিতে কিন্তু টার্গেট অনুযায়ী কাজ করতে হবে। সড়কের নিরাপত্তার জন্য প্রতিটি স্টেপই গুরুত্বপূর্ণ। সেই সঙ্গে রোড সেফটি নিয়ে যারা কাজ করছি, আমরা ১১১টি সাজেশন দিয়েছি। প্রতিটি সাজেশনকে পরিকল্পনার মধ্যে ফেলে বাস্তবায়নের জন্য সাজাতে হবে এবং কার্যকর করতে হবে। পাশাপাশি সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮- এর পরিপূর্ণ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। প্রধান অতিথির বক্তব্যে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল­াহ নূরী বলেন, একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না। যার পরিবারে এটি ঘটে, তারা ছাড়া আর কেউ তা বুঝতে পারে না। আমাদের এটি প্রতিরোধ করতে হবে। চালক, গাড়ি, পথচারী, আচরণ, আইনের প্রয়োগের অভাব ও সচেতনতার অভাবে দুর্ঘটনা ঘটছে। এসব বিষয় নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। সড়ক ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, পৃথিবীর গতি বেড়েছে। আমাদের গতি বেড়েছে। সহজেই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সহজে চলে যেতে পারি। সবকিছুর গতি বাড়লেও আমাদের আচরণগত পরিবর্তন হয়নি। নিরাপদ সড়কের জন্য আমাদের সবাইকে নিজ থেকে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। আমিন উল­াহ নূরী বলেন, সরকার ইতোমধ্যে নিরাপদ সড়কের জন্য আইন প্রণয়ন করেছে। আইনের কিছু সংশোধনীও এসেছে। বিধিগুলো পুনরায় করা হচ্ছে। সেখানে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা থাকবে। তবে আমাদেরও ট্রাফিক আইন মেনে চলতে হবে। আমাদের আরও বেশি সচেতন ও সাবধান হতে হবে। সভাপতির বক্তব্যে নিরাপদ সড়ক চাই এর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, আমার স্ত্রী মারা যায় ২২ অক্টোবর। আমি আন্দোলন শুরু করি ১ ডিসেম্বর। এত দেরিতে কেন শুরু করি, কারণ আমি বুঝতে চেয়েছিলাম নিরাপদ সড়কের জন্য কী করতে হবে এবং করতে পারব কি না। আন্দোলন করার মতো উদ্যোগ আমার আছে কি না, ত্যাগ কতটুকু করতে পারব, ধৈর্য কতটুকু ধরতে পারব, দেশের জন্য কতটুকু করতে পারব? এসব ভাবতে গিয়ে ১ মাস ৯ দিন সময় নিয়েছি। সবকিছু চিন্তা করে শুরু করেছিলাম নিরাপদ সড়ক আন্দোলন। তিনি আরও বলেন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন যারা করেন, তাদের কোনো স্বার্থ নেই। তারা দেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবেসে এটি করেন। আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার জন্য মাটির ব্যাংকে টাকা জমাই। সেই টাকা দিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত এবং তাদের পরিবারকে সহায়তা করি। সবাই দেশকে ভালোবাসার কথা বলে। আমি বলি, দেশকে ভালোবাসতে হলে, মুখে যা বলি তা করতে। সবাই সবার জায়গা থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। মানুষের প্রতি দরদ দেখাতে হবে। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে সহায়তা কার্যক্রম বাস্তবায়নের কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে নিসচা। ১ ডিসেম্বর এই কার্যক্রমের সূচনা করা হয়। জানা যায়, নিসচা এবার শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ, বিনামূল্যে চক্ষু ক্যাম্প পরিচালনা, ১০টি গৃহহীন পরিবারকে ঘর ও সেলাই মেশিন বিতরণ এবং সারা দেশে ৩০০ পরিবারের মাঝে ছাগল বিতরণ করবে। নিরাপদ সড়ক চাই এর মহাসচিব লিটন এরশাদের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার। স্বাগত বক্তব্য দেন প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন কমিটির আহŸায়ক কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক ফিরোজ আলম মিলন। আরও উপস্থিত ছিলেন বিআরটিএর সাবেক চেয়ারম্যান আইয়ুবুর রহমান, নিসচার ভাইস চেয়ারম্যান মঞ্জুলি কাজী, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন বাস্তবায়ন কমিটির আহŸায়ক মো. রোকনুজ্জামান রোকন, নিসচার সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম আজাদ হোসেন প্রমুখ।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com