## অর্ধলাখের বেশি সুযোগ পাবেন হজের ## দ্বিপাক্ষিক চুক্তি আগামী সপ্তাহের মধ্যে
জি এম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে \ হজ গমনের দ্বার উন্মুক্ত করলো সৌদি সরকার। প্রাণ-সংহারী নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি। সৌদি আরবের বাইরে থেকে ১০ লাখ মানুষকে এ বছর হজ করার সুযোগ রেখে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এ ঘোষণায় বাংলাদেশ থেকে ৬০ হাজার লোক হজে যেতে পারবেন। এ লক্ষ্যে প্রস্তুতি শুরু করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। আগামী সপ্তাহের মধ্যে দেশটির সঙ্গে হজ কার্যক্রমের অনুষ্ঠানিক চুক্তি সম্পন্ন সাপেক্ষে পুরো কর্মসূচি ঘোষনা করবে ধর্ম মন্ত্রণালয়। তবে, শর্তের বেড়াজালে ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সীরা বঞ্চিত হবেন হজ থেকে। সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্ত ও শর্ত শিথিল করার জন্য বাংলাদেশ সরকার থেকে চিঠি দেওয়া হতে পারে। তবে, হজ কার্যক্রম সীমিত ও হাজীর সংখ্যা কমানোর কারণে এ বছর হজ করতে ইচ্ছুকদের ব্যয় বাড়তে পারে। সর্বশেষ সাড়ে ৩ লাখ টাকায় হজ করার সুযোগ পেলেও এ তা বেড়ে সাড়ে ৫ লাখ টাকা নির্ধারিত হতে পারে। এ ছাড়া করোনার টিকা ছাড়া কেউ হজে যাওয়ার সুযোগ পাবেন না। খবর ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিস্ট সূত্রের। হজ সংক্রান্ত বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশ করে কেউই মন্তব্য করতে রাজি হননি। আর মন্ত্রণালয়ের সচিব ফোন রিসিভ না করায় ওনার মন্তব্য নেওয়া যায়নি। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে হজ কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। সর্বশেষ ২০২০ সালের পর এখন পর্যন্ত নিবন্ধিত হজ আগ্রহীর সংখ্যা ৫৪ হাজার জন। এ ছাড়া প্রাক-প্রাথমিক নিবন্ধিত নাগরিক রয়েছে ২ লাখ ৫ হাজার। কিন্তু সৌদি সরকার চলতি বছর হজ কার্যক্রম সীমিত করে বিভিন্ন দেশ থেকে ১০ লাখ মানুষকে পবিত্র এ কার্যক্রম সম্পন্নের সুযোগ দিয়েছে। বিভিন্ন দেশের রেশিও হিসাব করলে বাংলাদেশ থেকে ৬০ হাজার লোক এ বছর হজে যেতে পারবেন। করোনা পরিস্থিতির আগে সর্বশেষ বাংলাদেশ থেকে হজে গিয়েছিল ১ লাখ ২৭ হাজার জন নাগরিক। এবার অর্ধেক লোক হজে যেতে পারবেন। অন্য এক কর্মকর্তা বলেন, এটি এখনিই বলা যাচ্ছে না। কারণ সৌদি সরকারের সঙ্গে হজ সংক্রান্ত বিষয়ে একটি সমঝোতা চুক্তি হবে। আশা করা হচ্ছে, আগামী সপ্তাহের মধ্যে এ কার্যক্রম সম্পন্ন হতে পারে। এর পর নিবন্ধনের জন্য সুযোগ দেওয়া হবে। এদিকে, ৫৪ হাজার নিবন্ধিত ব্যক্তির মধ্যে ৬৫ বছর বা তার বেশি কয়জন নাগরিক আছে, – সে তালিকা চিহ্নিত করার জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ ব্যবস্থাপনা শাখা থেকে নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে। বেশি বয়সী নাগরিকদের বাদ দিয়ে প্রাক-নিবন্ধন থেকে হজ শর্তের মধ্যে থেকে নিবন্ধনের ক্রমানুসারে তালিকার্ভুক্ত করা হবে। মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, হজ এর প্রস্তুতির অংশ হিসেবে একটি প্রাথমিক গাইডলাইন জারি করা হয়েছে। এর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক হজ চুক্তি স্বাক্ষর ও হজ যাত্রীদের সংখ্যা নির্ধারণ, হজ প্যাকেজের প্রস্তুতি, ব্যাংক হিসাব খোলা সংক্রান্ত কার্যাদী, হজ যাত্রীদের বাড়িভাড়া, ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জমাদি সংগ্রহকরণ এবং সৌদি আরবে প্রেরণ, এজেন্সির তালিকা, আকাইভকরণ, ফ্লাইট সিডিউল, আইবিএএন এর মাধ্যমে অর্থ প্রেরণ, টিকা সংক্রান্ত কার্যক্রম, মৌসুমী হজ অফিসার নিয়োগ ও সৌদিতে প্রেরণ ও প্রশিক্ষণ। এ ছাড়া হাজীদের আনা-নেওয়ার জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও সৌদি এরাবিয়ারন এয়ারলাইন্স এর ফ্লাইট চূড়ান্তকরণ। এদিকে, হজের জন্য যে বিষয়গুলো বাধ্যতামূলক থাকতে পারে ১. আভ্যন্তরীণ ও বিদেশি মিলে শুধু ১০ লাখ ব্যক্তিকে হজের অনুমতি দেবে। ২. হজ পালনকারীদের বয়স ১৮-৬৫ এর মধ্যে হতে হবে। ৩. হজ পালনকারীকে অবশ্যই সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হবে। ৪. হজ পালনকারীদের এ বিষয়টি প্রমাণপত্রসহ নিশ্চিত করতে হবে যে, হজের আগের ৬ মাস কোনো অসুস্থতায় হাসপাতালে ছিলেন না। ৫. হজে যাওয়ার আগে অবশ্যই করোনা ভাইরাসের টিকার দুটি ডোজ সম্পন্ন করার প্রমাণপত্র সংগ্রহের রাখতে হবে। ৬. গ্রহণ করা টিকা সৌদি আরবের স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় কর্তৃক স্বীকৃত হতে হবে। ৭. বিদেশিদের হজে আসার সঙ্গে সঙ্গে ৩ দিন কোয়ারেন্টাইন করতে হবে। ৮. টিকার প্রথম ডোজ অবশ্য ঈদুল ফিতরের আগে নিতে হবে। এবং দ্বিতীয় ডোজ সৌদিতে পৌঁছার ১৪ দিন আগে নিতে হবে। ৯. পাশাপাশি করোনা সংক্রমণ রোধে সামাজিক দূরত্ব ও মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করাসহ সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি সর্বাত্মকভাবে অনুসরণ করতে হবে। উলেখ্য, – করোনা পরিস্থিতির আগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ২৫ লাখ নাগরিক হজ করার সুযোগ পেতেন।