এফএনএস: প্রতি বছরই হজের মৌসুমে আলোচনায় থাকে হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া। অভিযোগ আছে, বাংলাদেশ থেকে শুধু বিমান বাংলাদেশ ও সৌদি এয়ারলাইন্স হজযাত্রী পরিবহন করায় এয়ারলাইন্স দুটি ভাড়াও নির্ধারণ করে নিজেদের ইচ্ছেমতো। আর ভাড়া কমানোর দাবিতে আন্দোলন করেন হজযাত্রী ও হজ এজেন্সিগুলো। এ বছর এই দুই এয়ারলাইন্সের ‘একচেটিয়া ব্যবসা’ বন্ধ করে ‘প্রতিযোগিতামূলক ভাড়ার পরিবেশ সৃষ্টি করতে’ অন্যান্য এয়ারলাইন্সকে হজ যাত্রী পরিবহনের সুযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে হজ এজেন্সিগুলো। হজ এজেন্সি মালিকদের সংগঠন-হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)-এর সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেছেন, হজ পালন করতে একজন হজযাত্রীর যে খরচ হয়, তার বড় অংশ চলে যায় বিমান ভাড়ায়। স্বাভাবিক সময়ে সৌদি আরব যাওয়া-আসার বিমান ভাড়া ৮৮ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার মধ্যেই থাকে। কিন্তু হজের সময়ে এসে এই ভাড়া আরও বাড়ানো হয়। পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘২০১৯ সালে হজের সময় বিমান ভাড়া ছিল ১ লাখ ২৮ হাজার টাকা। ২০২০ সালে সেটি বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। প্রতি বছরই অযৌক্তিকভাবে ভাড়া বাড়ানো হয়। দুটি এয়ারলাইনের পরিবর্তে অন্য আরও এয়ারলাইন হজ যাত্রী পরিবহন করলে একচেটিয়া ভাড়ার পরিবর্তে প্রতিযোগিতামূলক ভাড়া নির্ধারণ হবে।’ আগেও বাংলাদেশ থেকে অনেকগুলো এয়ারলাইন্স হজ ফ্লাইট পরিচালনা করতো উলেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘তখন ভাড়া নিয়ে অসন্তোষ ছিল না। জাতীয় হজ ও ওমরাহ নীতি-২০১৯ এর ১০.১.১ ধারায় থার্ড ক্যারিয়ার চালু করার বিষয়েও স্পষ্ট বিধান রয়েছে।’ থার্ড ক্যারিয়ার উন্মুক্ত করতে আন্দোলন, আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে হাব। এ বছর এই দাবিতে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে দিয়েছে সংগঠনটি। হাবের মহাসচিব ফারুক আহমদ সরদারের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, আগে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও সৌদি এয়ারলাইন্সসহ অন্যান্য থার্ড ক্যারিয়ার হজযাত্রী পরিবহন করতো। সে সময়ে হজযাত্রী পরিবহন নিয়ে কোনও সংকট হতো না। কিন্তু ২০১৩ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত হজের ফ্লাইটের শেষ সময়ে এসে প্রতিবছরই হজযাত্রী পরিবহনে আসন সংকট তৈরি হয়। শুধু দুটি এয়ারলাইন্সের ওপর নির্ভরশীলতার কারণেই হজযাত্রী পরিবহনে সংকট হচ্ছে। সরকার যেমন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ছে, অন্যদিকে হজযাত্রীদেরও অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। হাব বলছে, থার্ড ক্যারিয়ার চালু করার যথেষ্ট যুক্তি থাকায় হাবের পক্ষ থেকে ২০১৩ সালে হাইকোর্টে থার্ড ক্যারিয়ার চালু করার জন্য রিট পিটিশন রুজু করা হয়। দীর্ঘ শুনানি শেষে রায় ঘোষণা করে হাইকোর্ট। রায়ে বলা হয়, সরকার শুধু দুটি এয়ারলাইন্সের মাধ্যমে হজযাত্রী পরিবহনের সুযোগে দেওয়ায় প্রতিযোগিতা সীমিত করেছে; যা সম্পূর্ণ বেআইনি। হাইকোর্ট এ রায়ে থার্ড ক্যারিয়ার চালু করার নির্দেশনা প্রদান করে। হাইকোর্টের রায় কার্যকর না করে সরকার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে হাইকোর্টের রায় স্থগিতের আবেদন করে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিষয়টি শুনানি হয় এবং দীর্ঘ শুনানি শেষে আপিল বিভাগও ২০১৬ সালের ৮ ডিসেম্বর হজযাত্রী পরিবহনে থার্ড ক্যারিয়ার চালু করার নির্দেশনা প্রদান করে। সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার স্বার্থে এবং হজ ব্যবস্থাপনায় কাক্সিক্ষত সাফল্য অর্জনে এবং সর্বোপরি দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের প্রেক্ষাপটে থার্ড ক্যারিয়ার উন্মুক্ত করার জন্য দুই মন্ত্রণালয়কে এ চিঠি দিয়েছে হাব। এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, ‘এ বছরই আমরা এ দাবি প্রথম করছি এমন নয়। হজ যাত্রীর সুষ্ঠু পরিবহন ও যৌক্তিক ভাড়ার জন্য আমরা এ বিষয়ে দাবি জানিয়ে আসছি। একইসঙ্গে হাইকোর্টের রায়ও আছে। ফলে এবার আমরা আশা করি, থার্ড ক্যারিয়ার চালু হবে। ভাড়া যৌক্তিক পর্যায়ে থাকবে। একই সঙ্গে হজ যাত্রী পরিবহন সংক্রান্ত জটিলতা দূর হবে।’ এদিকে সৌদি আরব জানিয়েছে, গেল দুই বছরের করোনার প্রকোপ কমে আসায় এবার হজে সারা বিশ্বের ১০ লাখ মুসলি অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন। হজযাত্রীর এই সংখ্যা কোটা অনুযায়ী বিভিন্ন দেশের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হবে। সে অনুযায়ী এ বছর বাংলাদেশ থেকে ৫৭ হাজার ৮৫৬ জন সৌদি আরবে হজে যাওয়ার সুযোগ পাবেন বলে জানিয়েছেন ধর্ম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান। ধর্মবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান বলেন, ‘হজের অনেকগুলো বিষয় সৌদি আরবের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল। কোনও সমস্যা থাকলে আমরা সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে সমাধান করবো।’