এফএনএস বিদেশ : রাতভর ব্যাপক বিমান হামলায় হামা শহরের কাছ থেকে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে সিরিয়ার বিদ্রোহীরা। বিদ্রোহী ও সরকারি উভয় পক্ষ থেকে গতকাল বুধবার এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে। গত সপ্তাহে বিদ্রোহীরা সিরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর আলেপ্পো ও এর আশপাশের বেশিরভাগ এলাকা দখল করে দ্রুত অগ্রসর হয়। গত মঙ্গলবার তারা হামার মাত্র কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে পেঁৗছে যায়। হামা শহরটি বিদ্রোহীদের দখলে গেলে প্রেসিডেন্ট বাশার আল—আসাদের ওপর চাপ আরও বেড়ে যাবে। বিদ্রোহীদের এই অগ্রযাত্রায় আসাদের মিত্রদের উদ্বেগ বেড়েছে। ইরান মঙ্গলবার জানায়, প্রয়োজন হলে তারা সিরিয়ায় সেনা পাঠানোর বিষয়টি বিবেচনা করবে। রাশিয়া একে ‘সন্ত্রাসী আগ্রাসন’ আখ্যা দিয়ে দ্রুত এর অবসান দাবি করেছে। ইরানের সমর্থিত ইরাকি যোদ্ধারা আসাদের পক্ষে লড়াই করতে সিরিয়ায় প্রবেশ করেছে। অন্যদিকে, আসাদ সরকার নতুন করে সেনাবাহিনীতে সদস্য নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। দামেস্ক ও পূর্ব দেইর আল—জোরে চেকপয়েন্ট স্থাপন করে তরুণদের সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে বলে বাসিন্দারা জানিয়েছেন। সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ও মানবাধিকার পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, হামা শহরের ৫ কিলোমিটার উত্তর পূর্বে জাবাল জাইন আল—আবিদিন এলাকায় তীব্র সংঘর্ষ হয়েছে। এটি শহরের প্রধান সড়কের ওপর কৌশলগত নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে পারে। স্থানীয় বিদ্রোহী কমান্ডার আবু আল—কাকা বলেছেন, ব্যাপক বিমান হামলার কারণে আমরা পিছু হটতে বাধ্য হয়েছি। বিদ্রোহীদের পক্ষ থেকে আরেক ব্যক্তি জানান, জাবাল জাইন আল—আবিদিন দখলে ব্যর্থ হওয়ায় তাদের অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। হামার ফ্রন্টলাইনে ইরান সমর্থিত মিলিশিয়ারা সরকারি বাহিনীকে সহায়তা করছে। বিদ্রোহী ও সরকারি সূত্রে জানা গেছে, আলেপ্পো হারানোর পর সেখানে সেনাবাহিনী পুনরায় সংগঠিত হয়েছে। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম মঙ্গলবার জানায়, নতুন সেনা বহর সেখানে পেঁৗছেছে। গত কয়েক দিনে বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে বোমা বর্ষণ বাড়িয়েছে রাশিয়া ও সরকারি বাহিনী। আলেপ্পো ও ইদলিবের আবাসিক এলাকা এবং চিকিৎসাকেন্দ্রগুলো লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দা ও উদ্ধারকর্মীরা রয়টার্সকে জানিয়েছেন। এবিষয়ে বক্তব্য জানতে তাৎক্ষণিকভাবে সিরীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি রয়টার্স। তবে দামেস্ক সাধারণত এ ধরনের অভিযোগে মন্তব্য করে না। অতীতেও তারা দাবি করেছে, বেসামরিকদের লক্ষ্যবস্তু করা হয় না। এসব অভিযোগ সিরিয়ার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ। উত্তরপশ্চিমাঞ্চলের দুই বাসিন্দা জানান, সরকারপন্থি অভিযানের কারণে পালিয়ে যাওয়া পরিবারগুলো প্রাথমিকভাবে ফিরে এসেছিল। তবে আবার বিমান হামলার মুখে সরে যেতে বাধ্য হয়েছে তারা। সিরিয়ায় ২০১১ সাল থেকে সংঘাতের শুরু। যুদ্ধ এখন যে পথে চলছে তা পুরো অঞ্চলে আরও অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে। ফলে গাজা ও লেবানন ইস্যুতে ইতোমধ্যেই উত্তাল মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে। ২০২০ সালে রাশিয়া, ইরান ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার আগেই সিরিয়ার লক্ষাধিক মানুষ নিহত ও লক্ষ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। অনেকে শরণার্থী হয়ে বিদেশে আশ্রয় নেন। বর্তমানে দেশটি বিভক্ত অবস্থায় রয়েছে। রুশ বিমানবাহিনী ও ইরান সমর্থিত মিলিশিয়াদের সহায়তায় আসাদ অধিকাংশ অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করছেন। বিদ্রোহীরা উত্তর পশ্চিমে একটি বৃহৎ এলাকা ধরে রেখেছে। এদিকে উত্তর সীমান্তে তুরস্কের সেনারা অবস্থান করছে আর উত্তর পূর্বে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত কুর্দি নেতৃত্বাধীন বাহিনী সক্রিয়।