দৃষ্টিপাত ডেস্ক ॥ দখলদার ইসরাইল বাহিনী খান ইউনিসকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়ে এবার রাফায় শুরু করেছে গণহত্যা। দলে দলে, ঝাকে ঝাকে রাফা ত্যাগ করছে ফিলিস্তিনিরা। ইসরাইলি বাহিনীর বিমান হামলা হতে কোন অবস্থাতেই পরিত্রান পাচ্ছে না ফিলিস্তিনিরা। দীর্ঘ এক মাসের অধিক সময় যাবৎ দখলদার বাহিনীর সদস্যরা খান ইউনিসের নিয়ন্ত্রন নিতে বারবার মুহুর মুহুর বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী বিমান হামলার পাশাপাশি স্থল অভিযান ও পরিচালনা করে যাই ইউনিসে। তবে বাস্তবতা হলো এক খান ইউনিসে হামাস যোদ্ধাদের নির্মূল করতে গত এক মাসে প্রতিদিনই অন্তত পাঁচটি বিমান খান ইউনিসের আকাশে উড়তে থাকে সেই সাথে হামলা, তাদের বর্বর আর অমানবিক হামালা হতে রক্ষা পাইনি নারী ও শিশুরা। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌছায় যে দখলদার বাহিনী খান ইউনিসের ছায়ার সাথে ও যুদ্ধ করেছে। হামাস যোদ্ধারা নিজেদের উৎপাদিত ও সংগৃহীত অস্ত্রের মাধ্যমে দখলদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করেছে। এই খান ইউনিস যুদ্ধ দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর জন্য ছিল বিভিষিকাময়। হামাস যোদ্ধাদের প্রতিরোধ হামলায় ত্রিশ জনের অধিক ইসরাইলি সেনার মৃত্যু ঘটে। কাতার ভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আর জাজিরা জানিয়েছে রাফার চারিদিকে অন্তত বিশ হাজারের অধিক ইসরাইলি সেনা ঘেরাও করে রেখেছে। এর পূর্বে রাফার বসতবাড়ী গুলোতে বিমান হামলা চালিয়ে ক্ষত বিক্ষত করেছে। ইসরাইলিদের বিমান হামলায় রাফার হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করা হয়েছে। মিশর সীমান্ত সংলগ্ন হওয়ায় হাজার হাজার ফিলিস্তিনিরা বাঁচতে, প্রাণ রক্ষা করতে মিশরের দিকে ছুটছে কিন্তু মিশর সীমান্ত উন্মুক্ত না থাকায় আতঙ্কিত, প্রাণে বাঁচার প্রাণন্তকর প্রচেষ্টারত ফিলিস্তিনিরা মিশরে প্রবেশ করতে পারছে না। এদিকে ইসরাইল মিশরের সাথে সীমান্ত চুক্তির আগ্রহ প্রকাশ করেছে। পশ্চিমা মিডিয়ার খবরে বলা হয়েছে যে কোন সময়ে মিশর ও ইসরাইল সীমান্ত চুক্তি করতে পারে। আর ইসরাইল সীমান্ত চুক্তি করার কারন হিসেবে পশ্চিমা মিডিয়ায় বিশ্লেষন এমন চুক্তি সম্পন্ন হলে মিশরের সীমান্তে দিয়ে ফিলিস্তিনিরা মিশরে প্রবেশ করতে পারবে না। যার সুফল ভোগ করবে ইসরাইল, জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয় কার্যালয়ের মুখপাত্র জেনস লায়েক গতকাল জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন খান ইউনিসে যেহেতু মানবিক বিপর্যয় বিরাজ করতে সেখান হতে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি রাফায় আশ্রয় নিয়েছে বর্তমানে ইসরাইল সেনারা রাফায় গোলা নিক্ষেপ সহ বিমান হামলা পরিচালনা করছে বিধায় রাফায় যে চরম মানবিক সংকট তৈরী হবে তাতে সন্দেহ নেই। ইতিমধ্যে রাফায় হত্যাযজ্ঞ চলছে। রাফায় রত ডোর ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় দুই শতাধিক ফিলিস্তিনি নিতে হয়েছে। সব মিলে গত সাত অক্টোবর হতে বর্তমান সময় পর্যন্ত ইসরাইলি হামলায় সাতাশ হাজার একশত একুত্রিশ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এদিকে গাজা সিটি হতে ইসরাইলি বাহিনী প্রত্যাহার করায় গাজার স্বাভাবিক জীবন যাত্রা শুরু হয়েছে। গাজার যে সকল এলাকা হতে ইসরাইলি বাহিনীকে প্রত্যাহার করা হয়েছে সেই সকল এলাকাগুলো ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস আবার ফিরে এসেছে। এবং ঐ সকল এলাকাতে তাদের নিজস্ব প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করেছে। আল জাজিরা জানিয়েছে পুলিশ অফিসার নিয়োগ ও বেসামরিক কর্মিদের আংশিক বেতন প্রদান শুরু করেছে। দখলদার ইসরাইলি বাহিনী গাজার যে সকল এলাকাগুলো হতে হামাস যোদ্ধাদের নির্মূলের দাবী করেছিল সে সকল এলাকাতে হামাস যোদ্ধারা ফিরে এসেছে। হামাস এর শক্তি এবং সক্ষমতা যে অনেক অনেক বেশী সে বিষয়টি ইসরাইরি বাহিনী অনুমান করতে পারেনি। পশ্চিমা মিডিয়ার খবরে বলা হয়েছে গাজার যে সকল এলাকাগুলোতে হামাস সদস্যরা অবস্থান নিয়েছে এবং প্রশাসন পরিচালনা করছে সেই সকল এলাকাগুলোতে আবারও হামলা শুরু করেছে ইসরাইলি বাহিনীর সদস্যরা। আল জাজিরা টেলিভিশন জানিয়েছে গতকাল গাজা শহরের বিভিন্ন এলাকাতে পোশাক পরা পুলিশ সদস্যরা দায়ত্ব পালন করেছে। একই সাথে ইসরাইলি বাহিনীর বিমান হামলা ও প্রত্যক্ষ করেছে। হামাসের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক শাখা তাদের নিজস্ব টেলিগ্রাম বার্তায় বলেছে যে সকল এলাকা হতে ইসরাইলি বাহিনী প্রত্যাহার করা হয়েছে সেই সকল এলাকাতে আমরা আমাদের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছি। ব্যক্তিমালিকানার ঘরবাড়ী, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যেন অরক্ষিত না থাকে এবং চুরি না হয় সে বিষয়ে ফিলিস্তিনি পুলিশ দায়িত্ব পালন শুরু করেছে। এবং বেসামরিক প্রশাসনের কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা গাজা পুনঃগঠনের কাজ করছে। এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের একাধিক স্থাপনায় হামলা পরিচালনার প্রতিশোধ হিসেবে ইরান সমর্থিত যোদ্ধারা জর্দানের মার্কিন ঘাটিতে পাল্টা হামলা চালানোর রেশ কাটতে না কাটতেই শুক্রবার গভীর রাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য যৌথ ভাবে ইয়েমেনের হুতি স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ হতে বলা হয়েছে অন্তত ছত্রিশটি স্থাপনায় যৌথ বাহিনী সফল হামলা চালিয়েছে। হুতিদের অবস্থান, অস্ত্রাগার, ভূগর্ভস্থ অস্ত্রাগার, ক্ষেপনাস্ত্র উৎ ক্ষেপন সথান সহ সম্ভাব্য সব স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে। হুতিদের পক্ষ হতে আবারও ঘোষনা দিয়ে বলা হয়েছে দখলদার ইসরাইরি বাহিনী যতক্ষন না পর্যন্ত আমাদের অবস্থানকে নিরাপদ না করবে ততোক্ষন পর্যন্ত আমাদের হামলা অব্যাহত থাকবে। অর্থাৎ গাজাকে নিরাপদ না রাখলে আমাদের হামলা চলবেই।