দৃষ্টিপাত ডেস্ক ॥ দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর তান্ডব আর গণহত্যা থেমে নেই। পুরো গাজা উপত্যকায় দখলদার বাহিনী গত সাত মাসের অধিক সময় যাবৎ পুরো গাজা উপত্যকায় গণহত্যার পাশাপাশি ধ্বংস লিলায় মেতেছে। এমন কোন দিন নেই, এমন কোন সময় নেই যে দিনে বা সময়ে দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর সদস্যরা গাজার বিভিন্ন এলাকাতে বিমান হামলা চালিয়ে নিরীহ ও নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের হত্যা করছে না। দখলদার ইসরাইল বাহিনী গাজায় একদিকে নিষ্ঠুর ধ্বংসলীলা আর হত্যাকান্ডে মেতেছে অন্যদিকে দখলদার ইসরাইল হামাসের সাথে যুদ্ধ বিরতির আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আল আরাবিয়া পত্রিকা জানিয়েছে কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতায় মিশরে চলমান শান্তি ও যুদ্ধ বিরতি আলোচনা অনেকদুর এগিয়েছে। পত্রিকাটি শান্তী আলোচনার সাথে সংশ্লিস্ট মিশরীয় কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে হামাস ইসরাইল যুদ্ধ বিরতি আলোচনা শেষ পর্যায়ে অবস্থান করছে যে কোন সময়ে যুদ্ধ বিরতির আলোচনা বাস্তবে রুপ নিতে পারে। যে কোন সময়ে ইসরাইল এবং হামাসের মধ্যে শান্তী আলোচনা কার্যকর হতে পারে। এদিকে কাতার ভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আল জাজিরা বলছে কাতারের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হামাসকে চাপ প্রয়োগ করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদপত্র গুলো এ বিষয়ে বিস্তারিত খবর জানিয়ে বলেছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ফোনে জানিয়েছে যে, হামাস যদি ইসরাইলের সাথে যুদ্ধ বিরতি ও বন্দী মুক্তিবিষয়ে সমাঝোতায় না আসে তাহলে হামাসকে কাতার ছাড়তে হবে। ইতিপূর্বে যুদ্ধ বিরতি প্রস্তাবও আলোচনা ভেস্তে গেলে হামাসকে কাতার ছাড়তে হচ্ছে এমন খবর প্রকাশ পায় সেই সময় গুলোতে হামাসের পক্ষ হতে বলা হয় হামাস তাদের শর্তানুযায়ী যদি বন্দী মুক্তি বিষয়ে সিদ্ধান্ত না হয় তাহলে হামাস সেই চুক্তিতে পৌছাবে না। পরবর্তিতে কাতারের পক্ষ হতে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয় হামাস নেতৃবৃন্দ অবশ্যই কাতারে অবস্থান করবে। আল জাজিরা টেলিভিশন হামাস নেতাদের বক্তব্য উদ্ধৃতি করে বলেছেন আগামী দিন গুলোতে হামাস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা তার দোসর কোন দেশের চাপে বশ্যতা স্বীকার করে চুক্তিতে পৌছাবে না। হামাসের উপর কাতারের মাধ্যমে চাপ প্রয়োগের যে নীতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গ্রহন করেছে তা বুঝেরাং হবে বলে জানিয়েছে হামাস। ইসরাইলের সাথে যুদ্ধ বিরতি ও বন্দী বিনিময় চুক্তির আলোচনায় অংশ নিতে হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়া বর্তমানে মিশর সফর করছে। হামাসের নিজস্ব টেলিগ্রাফ পোস্টে জানানো হয়েছে গাজা হতে ইসরাইলি সেনাদের পুরোপুরি প্রত্যাহার এবং স্থায়ী যুদ্ধ বিরতির কার্যকরের মাধ্যমে কেবল মাত্র ইসরাইলের সাথে যুদ্ধ বিরতি ও বন্দী বিনিময় চুক্তি হতে পারে। গতকালও দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর সদস্যলা গাজার উত্তরাঞ্চলে ও পশ্চিম গাজায় হামাস যোদ্ধাদের সাথে সহিংসতায় লিপ্ত হয়। রামাল্লা ও খান ইউনিস এর একাধিক এলাকাতে দখলদার বাহিনীর উপর হামলা পরিচালনা করে। হামাসের মুখপাত্র আবু ওবায়দা বলেছে খান ইউনিসের বিভিন্ন সড়কে ও ধ্বংসস্তুপের মাঝে আমাদের যোদ্ধারা অবস্থান নিয়ে দখলদা ইসরাইলি বাহিনীর সদস্যদের উপর হামলা চালিয়েছে। আন্তর্জাতিক বিশ্বে হামাস ইসরাইল যুদ্ধের মতোই আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ছাত্র বিক্ষোভ। গতকালও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত বিয়াল্লিশটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র বিক্ষোভ হয়েছে। মার্কিন পুলিশ বিক্ষোভরত ছাত্রদেরকে গ্রেফতার ও নির্যাতন চালিয়েও আন্দোলন থামাতে পারছে না। অন্তত বিশটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভরত ছাত্ররা বিশালাকৃতির তাবু তৈরী করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছে। অস্ট্রেলিয়া, ফ্যান্স, জাপান সহ অপরাপর দেশগুলোতে ও ছড়িয়ে বিক্ষোভ। এদিকে হামাসের পক্ষ হতে আবারও হুশিয়ারী উচ্চারন করে বলা হয়েছে ইসরাইলি সেনারা যদি রাফা অভিযান পরিচালনা করে তাহলে কোন অবস্থাতেই হামাস দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর সাথে সমঝোতায় পৌছাবে না। হামাসকে যুদ্ধ বিরতি ও বন্দী বিনিময় চুক্তি করার ক্ষেত্রে দখলদার ইসরাইল বিভিন্ন মুখি চাপ প্রয়োগ করে হামাস তাদের অবস্থানে অটল। এদিকে ইসরাইলের কারাগারে আটক ফিলিস্তিনি চিকিৎসকের মৃত্যুর খবরে গোটা ফিলিস্তিনি সহ আরব বিশ্বে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। হামাসের পক্ষ হতে বলা হয়েছে তাদের চিকিৎসকের হত্যা বদলা অবশ্যই নেবে হামাস। ইসরাইলের কারাগারে আটক ফিলিস্তিনি বন্দীদের উপর শারিরীক, মানসিক এবং যৌন নির্যাতন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে হামাস, দখলদার বাহিনীর সদস্যরা গতকাল ধ্বংস হওয়া খান ইউনিসের অরক্ষিত বসতবাড়ী হতে ফিলিস্তিনিদের রেখে যাওয়া ধন সম্পদ লুণ্ঠন করছে। হামাস নিয়ন্ত্রীত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় গতকাল পর্যন্ত পয়ত্রিশ হাজারের অধিক ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে এবং গাজার সত্তর শতাংশ বসতবাড়ী দখলদার সেনারা ধ্বংস করেছে। হিজবুল্লাহ ও হুতি যোদ্ধারা আবারও হামলা চালিয়েছে। হুতিরা তাদের পূর্বের অঙ্গীকার আবারও ব্যক্ত করে বলেছে যতদিন পর্যন্ত ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের উপর হামলা পরিচালনা করবে ততোদিন পর্যন্ত হুতির লড়াই চলবে। দুর্ভিক্ষের শেষ প্রান্তেগাজা, ফিলিস্তিনিরা খাদ্য অভাবে মৃত্যুবরন করছে। পৃথিবীর একমাত্র জনবসতি যে খানের অধিবাসিরা খেতে না পেরে এবং যথাযথ চিকিৎসা সেবা না পেয়ে মৃত্যুবরন করছে আর সেই অঞ্চল হলো গাজা, ফিলিস্তিনিদের জন্য বিশ্বের শতশত কোটি মানুষ চোখের পানি ফেলছে।