দৃষ্টিপাত ডেস্ক ॥ ইসরাইলের সেনারা হামাস যোদ্ধাদের চরম প্রতিরোধের মুখে পড়েছে। গত চারদিনের দখলদার বাহিনীর বিশ সেনাকে হত্যার পাশাপাশি অন্তত একান্নটি সামরিক যান ধ্বংস অথবা আংশিক ধ্বংস করেছে। হামাসের সশস্ত্র শাখা কাসেম ব্রিগেডের পক্ষ হতে বলা হয়েছে দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর সেনারা বর্তমানে তাদের জীবন নিয়ে পিছু হাটতে বাধ্য হয়েছে। ইসরাইলের বিমান বাহিনীর বিমান গুলো গতকাল ও গাজায় বিভিন্ন এলাকাতে নির্বাচনের বিমান হামলা চালিয়ে অন্তত শতাধিক ফিলিস্তীনিকে হতাহত করেছে। গাজার কয়েকটি আশ্রয় শিবিরে ও হামলা চালিয়েছে দখলদার বাহিনী। জাতিসংঘের সার্বিক তত্ত্ববধানে গাজায় ত্রান তৎপরতা পরিচালিত হলেও দৃশ্যতঃ ত্রানের অপ্রতুলতার কারন হেতু ফিলিস্তিিনদের একটি বড় অংশ ত্রান হতে বঞ্চিত থাকছে এবং ক্ষুধার সাথে বসবাস করছে। গাজাবাসি সুপেয় পানি পাচ্ছে না, অনেকে সাগরের লবনাক্ত পানি পান করে নানান ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। হাসপাতাল গুলোর অধিকাংশ বন্ধ হওয়ায় আহতদের পাশাপাশি সাধারন ফিলিস্তীনিরাও চিকিৎসা সেবা হতে বঞ্চিত হচ্ছে। হাসপাতাল গুলোর মর্গে দিনের পর দিন লাশ পড়ে থাকলেও সে সকল লাশের দাফন হচ্ছে না। সড়কে সড়কে পড়ে থাকা বিকৃত এবং দুর্গন্ধ লাশ রেডক্রসের সদস্যরা কুড়িয়ে গন কবরে সমাহিত করছে। আশ্রয় শিবিরগুলোতে হামলা পরবর্তি নিহতদের সাথে আহতরাও তাদের চিকিৎসা সেবা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে গাজার অধিবাসিরা। গত কয়েকদিন যাবৎ ইসরাইলের হামলায় গাজার সামগ্রীক পরিস্থিতি ও পরিবেশের যে অবনতি ঘটেছে তা কোন ভাবেই বর্ণনা করা সম্ভব নয়। এদিকে লোহিত সাগরে ইরান তার যুদ্ধ জাহাজ মোতায়েন করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপনাস্ত্র হামলায় দশ হুতি সদস্যের নিহত হওয়ার ঘটনার পরের দিন ইরান লোহিত সাগরে তার যুদ্ধ জাহাজ মোতায়েন করলো। ধারনা করা হচ্ছে জাহাজ মোতায়েন করেছে উল্লেখ্য অতি সম্প্রতি ইরানের পক্ষ হতে বলা হচ্ছিল প্রয়োজনে লোহিত সাগরে ইসরাইল সহ পশ্চিমাদের জাহাজে চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হবে। লোহিত ও ভুমধ্যসাগরে পশ্চিমা জাহাজ চলাচল বন্ধ আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন দশ দেশের জোট প্রমান করেছে যে তারা হুতি যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনে চরম ভাবে ব্যর্থ আর এই ব্যর্থতার কারন হেতু পশ্চিমা জাহাজ গুলো লোহিত সাগরের প্রবেশ পথ থেকে অন্য পথে যাতায়াত করছে। গতকাল কাতার ভিত্তিক টেলিভিশন আল জাজিরা একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাদের প্রচারিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে এবং সচিত্র প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে গাজা হতে ইসরাইলের সহস্রাধীক সেনা সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আল জাজিরা টেলিভিশন এর কল্যানে বিশ্বের শত শত কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে সৈন্যদের ফিরিয়ে আনার দৃশ্য। গত কয়েকদিন যাবৎ ইসরাইলের সেনা বাহিনীর অবস্থান পরিবর্তন তথা গাজা ছেড়ে আসার বিষয়ে গতকাল প্রথম ইসরাইলের পক্ষ হতে বলা হয়েছে যে কৌশলগত কারনে ইসরাইলি সেনাদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে এখানেই শেষ নয় ইসরাইলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ হতে আরও বলা হয়েছে সেনাদের একটি বড় অংশ ছুটি নিয়েছে এবং ছুটিতে যাচ্ছে। বিশেষ করে শিক্ষানবিশ সেনারা স্ব স্ব কাজে ফিরছে। গাজায় দখলদার ইসরাইলি বাহিনী কতটুকু বিপদজনক পরিস্থিতির মুখে আছে এটিই তার বড় প্রমান, পশ্চিমা মিডিয়াগুলোও ইসরাইলের সেনাদের সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। পশ্চিমা মিডিয়ার খবরে বলা হয়েছে অন্তত পাঁচ ব্রিগেড সেনা সরিয়ে নিয়েছে ইসরাইল কর্তৃপক্ষ। ইসরাইলের অভ্যন্তরে গতকাল ও হামাসের হাতে থাকা ইসরাইলী নাগরিক বন্দীদের মুক্ত করতে ব্যর্থ হওয়ায় এবং মুক্ত করনের দাবীতে বিক্ষোভ হয়েছে। অন্তত গত একমাস যাবৎ ইসরাইলের বিভিন্ন এলাকাতে চলছে বিক্ষোভ। বিক্ষোভ কারীদের চাওয়া অবিলম্বে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে পদত্যাগ করতে হবে। এখানেই শেষ নয় ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে এক হাত দেখিয়ে দিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রীম কোর্ট। ইসরাইলের সংবিধানিক আইন সরকারের যে কোন সিদ্ধান্ত বাতিল করতে পারে, দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। নেতানিয়াহু সরকার উক্ত আইনটি রদ করার প্রস্তাব করলে দেশটির সুপ্রীম কোর্ট তা নাকচ করেছে। হুতি যোদ্ধাদের মত কঠোর অবস্থানে অবস্থান নিয়েছে হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা। গতকাল ইসরাইলের ভূ-খন্ডে হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা একাধিক ক্ষেপনাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। হামাস যোদ্ধারাও গত দুই দিন যাবৎ ইসরাইলের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে রকেট হামলা অব্যাহত রেখেছে। হামাসের সশস্ত্র শাখা কাসেম ব্রিগেড জানিয়েছে খান ইউনিসে দখলদার বাহিনীর জন্য করুন পরিনতি অপেক্ষা করছে কোন ভাবেই খান ইউনিসের নিয়ন্ত্রন ইসরাইল বাহিনী নিতে পারবে না। গাজায় অবশেষে শিশুদের টিকার চালান প্রবেশ করেছে। কিন্তু অধিকাংশ ফিলিস্তীনিরা বাস্তচুত হওয়ায় শিশুদের টিকা প্রদান কর্মসূচি প্রতিবন্ধকতা পড়বে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। হতাশ ইসরাইলি বাহিনী। বারবার নিজেদের ব্যর্থতায় অবশেষে ইসরাইলের প্রতিবেশ মন্ত্রণালয় গতকাল জানিয়েছে যে গাজার এক এক এলাকা ভিন্ন ধরনের বিধায় গাজা যুদ্ধ শেষ করতে পুরো চব্বিশ সাল অতিবাহিত হতে পারে।