দৃষ্টিপাত ডেস্ক ॥ বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দেশ ইসরাইলের সাথে লড়াই করে চলেছে ফিলিস্তীনি মুক্তি সংস্থা হামাস। কখনও সম্মুখ যুদ্ধে আবার কখনও বা গোরিলা পদ্ধতিতে। দখলদার বাহিনী অত্যাধুনিক সব অস্ত্রের মুখে বীর বিক্রমে লড়াইরত হামাসের সক্ষমতার বিস্তিত ইসরাইলী। গত দুই মাসে প্রতিদিনই হামাসের লক্ষ্যস্থানে শক্তিশালী বোমার বিস্ফরন ঘটাচ্ছে দখলদার বাহিনী কিন্তু ধ্বংস করতে বা নিশ্চিহৃ করতে পারছে না হামাস কে। উল্টা প্রতিনিয়ত ইসরাইলি বাহিনী হামাসের দ্বারা হামলার শিকার হচ্ছে। গতকাল পর্যন্ত হামাসের বর্বর হামলায় অন্তত আঠার হাজারের অধিক নিরস্ত্র, নিরীহ ফিলিস্তীনি নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে। প্রতিদিনই হত্যাকান্ডের শিকার হচ্ছে ফিলিস্তীনিরা তাদেরকে কুকুরের মত হত্যা করা হচ্ছে। মানুষ হত্যা যেন দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর জন্য ছেলেখেলা। বিশ্বাসঘাতক ইসরাইলিকে সমর্থন ও সহযোগিতা করছে বিশ্বমানবাধিকারের জনক বা ধারক বাহক হিসেবে পরিচিত পশ্চিমা বিশ্ব। ফিলিস্তীনিদের একের পর এক হত্যা চালিয়ে ও স্বস্তিতে নেই বর্বর ইহুদীরা তারাও হত্যাকান্ডের শিকার হচ্ছে। ইতিমধ্যে ছয়শতাধীক ইহুদী সেনাকে হত্যা করেছে হামাস সদস্যরা। হামাস যোদ্ধারা জানায়িছে গাজার শেখ রাদওয়ানে তাদের পাতা ফাঁদে পড়ে দখলদার সেনারা এসময় তাদের বিশ সদস্যকে হত্যা ও বহু সামরিক যান ধ্বংস করা হয়। অবশ্য ইসরাইলির পক্ষ হতে বলা হচ্ছে ভূলক্রমে নিজেদের সেনাদের গুলিতে বিশ সেনা নিহত হয়েছে। দৃশ্যতঃ বর্বর ইসরাইলি বাহিনী মনে করেন গোটা ফিলিস্তীনিরাই তাদের শত্র“, আর এমন ধারনা করাটা অযৌক্তি নয় কারন প্রতিজন ফিলিস্তীনি একেক জন হামাস। হামাস সদস্যরা ইসরাইলিকে কেবল চ্যালেঞ্চ করেই বসে থাকেনি। শক্তিশালী ইসরাইলের সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে গত সাত অক্টোবর হামাস ইসরাইলের ভূখন্ডে হামলা পরিচালনা করে এবং সহস্রাধিক ইহুদীকে হত্যা ও দুই শতাধিক ইসরাইলি সামরিক ও বেসামরিক নাগরিককে জিম্মি করে একের পর এক হামলা পরিচালনা করে ও ইসরাইল বন্দীদের মুক্ত না করতে পেরে অবশেষে গাজায় যুদ্ধ বিরতির ঘোষনা দিলে উভয় পক্ষের বন্দী বিনিময় হয়। পরবর্তিতে ঘাতক ইসরাইল যুদ্ধ বিরতির মেয়াদ বৃদ্ধি না করে গাজায় বিমান হামলার মাধ্যমে পাখির মত ফিলিস্তীনিদের হত্যা শুরু করে এবং বন্দীদের মুক্ত করার চেষ্টা করে ও ব্যর্থ হয় এবং ইসরাইলের উল্লেখযোগ্য সংখক ট্রাঙ্ক ও সাজোয়া যান ধ্বংস করে হামাস যোদ্ধারা একই সাথে দেশেটির প্রাক্তন সেনা প্রধানের পুত্র সেনা কর্মকর্তা সহ অন্তত তিনজন সেনাকে হত্যা করে। সপ্তাহ ব্যাপী উত্তর গাজা ও পশ্চিমতীরে হামাস দখলদার ইসরাইলী বাহিনীর বিরুদ্ধে তুমুল প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। ইসরাইলী বাহিনীর জন্য হামাস মরন ফাঁদে পরিনত হয়েছে। গতকাল পশ্চিমা মিডিয়ার খবরে বলা হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ হতে ইসরাইলকে ডিসেম্বরের মধ্যে অথবা জানুয়ারী মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে গাজা যুদ্ধ শেষ করার তাগিদ দিয়েছে কিন্তু বাস্তবতা হলো দখলদার ইসরাইলি বাহিনী বছরের পর বছর চেষ্টা করলেও গাজা হতে হামাসকে নির্মূল করতে পারবে না কারন গাজায় তাদের জন্ম এই গাজার আলো বাতাসে তারা বেড়ে উঠেছে কোথায় যাবে তারা? আর তাই এটা বলাই যায় যে গাজা যুদ্ধ ইসরাইলি বাহিনীর জন্য এক বিপর্যয়কর ও বিভিষিকাময় পরিস্থিতির অবতরণা ঘটাবে। উত্তর গাজা অনেকটা জনমানবহীন প্রান্তরে পরিনত হয়েছে। সুবিশাল ভবন, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সবই মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে দখলদার বাহিনী। শরনার্থী শিবির গুলোতে খাদ্যে নেই, সুচিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। এমনিতেই পুরো গাজা শ্মশান ভূমিতে পরিনত হয়েছে। দক্ষিন গাজায় হামলার তীব্রতা কিছুটা কম হওয়ায় সেখানে দলে দলে ছুটছে ফিলিস্তীনিরা। জাতিসংঘের মহাসচিব নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে গাজায় যুদ্ধ বিরতি বা হামলা বন্ধের পক্ষে প্রস্তাব পাশ না করতে পেরে বিশেষ ভাবে ব্যথিত হয়েছেন তিনি ইতিমধ্যে যুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছেন যে, জাতিসংঘ বর্তমানে শক্তিহীন ও অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিনত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে মহাসচিব হাল ছাড়েন নি তিনি এবার জাতিসংঘের সাধারন পরিষদের সভা আহবান করেছেন। বিশ্বের এক প্রান্তের জনমানব পাখির মত হত্যাকান্ডের শিকার হবে। একটি জাতি নিশ্চিহৃ হওয়ার পথে সেখানে বিশ্ব নেতৃত্ব কি ভাবে নিরব থাকে আবার কেউ কেউ কিভাবে দখলদার ইসরাইলের হামলা ও হত্যা কান্ডকে বৈধতা দিতে পারে তা নিয়ে প্রশ্ন ও ক্ষোভের শেষ নেই। এদিকে খাদ্য আর সুপেয় পানির অভাবে পুরোগাজা ভূমিতে চলছে হাহাকার, সব ধরনের অন্যায়, অত্যাচার করেই চলেছে ইসরাইলি বাহিনী। মানবাধিকারের সামান্যতম অবশিষ্ট নেই গাজায়। গতকালও ইসরাইলের সেনারা উত্তর ও পশ্চিম গাজায় ও রামাল্লায় ফিলিস্তীনি বসতিতে হামলা চালিয়ে শতাধিক নিরীহ ফিলিস্তীনিকে হত্যা করেছে। গতকাল মিশরের রাফহ সীমান্ত সফর করেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের নেতৃত্বাধীন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একডজনেরও বেশি প্রতিনিধিরা। দখলদার ইসরাইলের বিমান হামলার পাশাপাশি পুর্বের হামলায় আহত, ক্ষুধায় অসুস্থতায় প্রতিদিনই মৃত্যুমুখে পতিত হচ্ছে গাজার অধিবাসিরা। এক সপ্তাহ যুদ্ধ বিরতির মাঝে গাজায় কিছু ত্রানবাহী ট্রাক প্রবেশ করলেও যুদ্ধ বিরতির পর পরই গাজা উপত্যকা অবরোধ করে প্রতিমুহুর্তে হামলা চালাচ্ছে দখলদাররা। ফিলিস্তীন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আলকুদরা বলেছেন, গত কয়েক ঘন্টায় দুইশত বিশ ফলিস্তীনির মরদেহ একত্র করা হয়েছে। হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা গতকাল ও ইসরাইলের ভূ-খন্ডে হামলা চালিয়ে ফিলিস্তীনি হত্যা ও গাজা অবরোধ রাখার বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান জানান দিলো। সর্বশেষ খবরে বলা হয়েছে ইসরাইলের আল মান্দের এলাকায় এক ইসরাইলের জাহাজে হামলা চালিয়েছে হুযি যোদ্ধারা।