মাছুদুর জামান সুমন \ রানার ছুটেছে তাই ঝুমঝুম ঘন্টা বাজছে রাতে, রানার চলেছে খবরের বোঝা হাতে, সেই রাত, সেই ঝড় ঝাঞ্জাময় রাত, বৈরী আবহাওয়া, যানবাহন বিহীন আবার কখনও বা বাই সাইকেল, দূর্গম যাতায়াত ব্যবস্থা এক কথায় রানারের বিপদসংকুল বন্ধুর পথ পরিক্রমার অসহনীয়, ভয়ানক যাত্রা, তারপর খবর আর খবরের মূলমন্ত্র বাহকের হাতে পৌছাতো। রানারের খবর পৌছানোর ক্ষেত্রে কতটুকু দুর্গম পথ পরিক্রমাকে পার করতে হতো ততোটুকু যথাযথ দায়িত্বশীলতার ক্ষেত্র ও বিস্তৃত ছিল। সময়ের ব্যবধানে আর বাস্তবতার নিরিখে সেই রানার আর রানারের উপস্থিতি নেই। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি রানারের অবস্থানকে অন্তঃসার শুন্য করেছে, জায়গা করে নিয়েছে তথ্য প্রযুক্তি, ডাক বিভাগ হারিয়েছে তার জৌলুস, ঐতিহ্য অহংকার, কালেভদ্রে চিঠি আদান প্রদান হয়, ডাক বিভাগ সেজেছে নতুন সাজে, হেটে চলা বাইসাইকেলে সওয়ার হওয়া রানার নেই, তার পরিবতে আধুনিক যন্ত্রযান, জেলা শহরের ডাকঘর গুলোর ব্যস্ততা নেই তবে যানবাহনের মাধ্যমে চিঠি, পার্সেল এক ডাকঘর হতে অন্য ডাকঘরে পৌছে যাচ্ছে। স্বজনের কাঙ্খিত চিঠির অপেক্ষায় থাকার সেই মহেন্দ্রক্ষন হারিয়ে গেছে। চিঠির পরিবর্তে তাৎক্ষনিক যোগাযোগ রক্ষা করছে মোবাইল ফোন, ফেস বুক সহ নানান ধরনের প্রযুক্তি। গ্রামে গ্রামে রানার (ডাকঘরের পিয়ন) চিঠি নিয়ে বাড়ী বাড়ী যাওয়ার চিরায়ত দৃশ্য অনুপস্থিত, রেজিষ্ট্রি চিঠি, সরকারি চিঠি আসলেও ডাকঘর হতে ফোনের মাধ্যমে গ্রাহকদের জানান দিয়ে থাকে। গ্রামীন জনপদের বাজারে, মোড়ে ডাকবক্সগুলো মরিচা পড়ে জানিয়ে চলেছে তার অসহায়ত্বের কথা, প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তার অপ্রয়োজনীয়তাকে, ইট, পাথর আর কংক্রীটের এই সুনশান আধুনিকতায় প্রযুক্তি জায়গা করে নিলেও অতীতের নিরব স্বাক্ষী হয়ে আছে ডাকঘর আর তার অনুগামী ব্যবহৃত মাধ্যমগুলো। মনের মাধুরী মিশানো কথামালা, হতাশা, ভাঙ্গা, বেদনা, আনন্দ ভরা কথার ফুলঝুরি চিঠি আধুনিক সভ্যতা হরন করেছে কৃত্রিমতা আর যান্ত্রিকতাকে সঙ্গী করে চলেছে প্রযুক্তি, প্রাণের ছোয়া নেই, তবে একথা বলতেই হবে বিশ্ব ব্যবস্থার সাথে সঙ্গতি রেখে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে তার সুফল ডিজিটাল বাংলাদেশ। ডাক বিভাগকে তথ্য প্রযুক্তি বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করলেও, ডাক বিভাগের সমান্তরাল কুরিয়ার সার্ভিসের অবস্থান অভ্যন্তরীন চিঠি, পার্সেল, মালামাল বহন করছে। কুরিয়ার সার্ভিস গুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। কোন কোন কুরিয়ার সার্ভিস সেবা নামে নীল করের ন্যায় ব্যবসায় নেমেছে। দায়িত্বহীনতার নজির ও কোন কোন কুরিয়ার সার্ভিস স্থাপন করে চলেছে। গ্রাহক হয়রানী এবং অতিরিক্ত ভাড়া সেই সাথে সময় মত চিঠি ও মালামাল সরবরাহ না করার অভিযোগ দৃশ্যমান। সাতক্ষীরার বাস্তবতায় জেলা শহরে এবং মফস্বল এলাকায় কাজ করা কুরিয়ারসার্ভিসগুলো কোন কোনটি কেবল মাত্র ব্যবসায়ী মনোভাব নিয়ে কাজ করছে গ্রাহক সেবা এবং দায়বদ্ধতার ক্ষেত্র শুন্য, কোন কোন কুরিয়ার সার্ভিসের বিরুদ্ধে অনাকাঙ্খিত কর্মকান্ড পরিচালনা এবং কুরিয়ার সার্ভিসের অন্তরালে অনৈতিক ব্যবসা ও করছে। সাতক্ষীরার বাস্তবতায় ডাক বিভাগের কর্মকান্ড সীমিত পরিসরে পরিচালিত হলেও জনসাধারনের আস্থা এবং বিশ্বাস সরকারের এই প্রতিষ্ঠানটির প্রতি সামান্যতম ঘাটতি নেই। ডাক বিভাগের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে গতিশীল আর কর্মকান্ডে আধুনিকতার ছোয়া দিতে বহুবিধ পরিকল্পনা গ্রহন করেছে সংশ্লিস্ট মন্ত্রণালয়। গ্রামের পথে ঘাটে, মেঠো প্রান্তরে, বাজারে, মোকামে, কলেজ বিশ্ব বিদ্যালয়ের হল, হোস্টেলে, ডাক পিয়নদের পদচারনায় আবারও মুখর হোক, স্বজনের মোবাইল ফোনের কথপকথন নয়, চিঠি আসুক, চিঠি লিখুক, লেখা আর পড়ার মাঝে নেই কোন কৃত্রিমতা আছে বিস্তর আন্তরিকতা আহবান, ভাললাগা, ভালবাসা।