মোঃ রফিকুল ইসলাম, নলতা থেকে \ বাংলার সংস্কৃতি যাত্রাপালা পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, অপসংস্কৃতি ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার জোয়ার হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী যাত্রা শিল্প। গ্রামবাংলায় এই শিল্পের যথেষ্ট কদর থাকলেও এ শিল্পকে বাঁচাতে কেউ এগিয়ে আসছে না। অর্থকষ্টে দিন যাচ্ছে এ পেশায় সম্পৃক্ত শিল্পী ও কলা-কুশলীদের। বাঙালির বিনোদনের একটি প্রধান অনুষঙ্গ ছিল যাত্রাপালা। এর মধ্য দিয়ে শুধু বিনোদন নয় ইতিহাস, লোকজ সাহিত্য সম্পর্কে শিক্ষা গ্রহণ চলত। রাতের পর রাত জেগে বাংলার সাধারণ মানুষ কৃষক, তাঁতি, কামার, কুমার, জেলে দেখেছে যাত্রায় কাহিনী আর মেতেছে পালাগানের সুরে। কখনও ভক্তি, কখনও ভালোবাসা, কখনও দেশপ্রেম মানুকে কাঁদিয়েছে, হাসিয়েছে। সে সময় কৃষ্ণলীলা এবং রামায়ণ-মহাভারতের পৌরাণিক কাহিনির পাশাপাশি বিদ্যাসুন্দর, লাইলী-মজনু, ইউসুফ-জোলেখা, বেহুলা লখিন্দর, মা মনসা, ল²ীর মহিমা, কমলাবতী রানী, রূপবান, রহিম বাদশাহ, মালকা বানু, গুনাইবিবি, দুর্গামনি, কমলা রানীর বনবাস, কাজল রেখা, মলুয়া, ভেলুয়া সুন্দরী, সোনাভান, বীরাঙ্গনা সখিনা, গাজী কালু চম্পাবতী, বনবিবি ইত্যাদি প্রেমকাহিনী ও লোকজ কাহিনীর অভিনয়ও প্রচলিত ছিল। বর্তমানে যাত্রাপাল প্রায় বিলুপ্তির পথে তাই যাত্রাশিল্পীদের আজ বড়ই দুর্দিন। যাত্রাপালা বাঁচলে শিল্পী বাঁচবে এবং মানুষ সঠিক দিকনির্দেশনাও পাবে এই যাত্রাপালার মধ্য দিয়ে। যাত্রাপালা মানুষের কথা বলে ও গল্পের মধ্য দিয়ে তারা দেশ, জাতি ও সমাজের কথা বলে। যেমন একজন শিক্ষিত মা তার সন্তানকে সুশিক্ষায় গড়ে তুলেন, ঠিক তেমনিভাবে শিল্প সংস্কৃতিই একটি দেশের সুনাম অর্জন করে দেশ থেকে বিদেশের মাটিতে পরিচয় করিয়ে দিতে পারেন। যাত্রাপালা বাঙালির সংস্কৃতির একটি অংশ। কিন্তু আধুনিকায়নের ফলে এটি হারিয়ে যেতে বসেছে। বাংলা সংস্কৃতি ধরে রাখতে আগামীতেও এমন আয়োজনের দরকার বলে মনে করেন আনেকেই। আগের মতো এখন আর সন্ধ্যা নামলেই মেলা থেকে লাউড স্পিকারে আর ভেসে আসে না- ‘হৈ হৈ কান্ড, রৈ রৈ ব্যাপার। যাত্রাপালা দেখার জন্য দর্শকরা রাতভর বিনিদ্র থাকার প্রস্তুতি নিয়ে আর অপেক্ষায় প্রহর গোণেন না। শীতে মেলা বসবে, যাত্রাপালা আসবে এই প্রতীক্ষায় থাকে না আর গ্রামের মানুষ। এখন সিনেমা, টেলিভিশনের কল্যাণে বিনোদনের রূপ পাল্টেছে। তাছাড়াও এখন যাত্রা, সার্কাস, পুতুল নাচ মানেই অশ্লীল নৃত্য-জুয়া-হাউজির কারবার। যাত্রাপালায় জুয়া ও অশ্লীলতা ঢুকে পড়ায় সাধারণ দর্শকরা যাত্রাপালা থেকে বিমুখ হয়েছে। তবে সুস্থ যাত্রাপালা হলে দেখতে এখনো দর্শকের অভাব হবে না বলে অনেকেই জানিয়েছেন।