শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৫ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
দেশের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে গেছে হাসিনার স্বৈরতন্ত্র: কূটনীতিকদের ইউনূস ভারতে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ-হত্যার প্রতিবাদে শাটডাউন কর্মসূচির ঘোষণা চিকিৎসকদের নলতা আহসানিয়া মিশন রেসিডেনসিয়াল কলেজের অধ্যক্ষের দুর্নীতি ॥ উত্তাল নলতা ॥ শিক্ষক কর্মচারীরা মতবিনিময় করলেন ডাঃ শহিদুল আলম ও চেয়ারম্যান আজিজুর রহমানের সাথে মহামারীর দ্বারপ্রান্তে গাজা আলোচনায় থাইল্যান্ড ॥ বন্দী থাকসিন মুক্ত হরিনগর বাজারে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানদের মাঝে নগদ অর্থ প্রদান পাইকগাছায় একটি বাঁশের সাঁকো পারাপারে এলাকাবাসীর চরম ভোগান্তি মাথাভারি হচ্ছে প্রশাসনের ॥ বাড়ছে সরকারের দু:চিন্তা ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী এজাজ আহমেদ এর পদত্যাগ দাবীতে-মানববন্ধন চাম্পাফুল ইউনিয়ন বিএনপির আয়োজনে শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত

হারিয়ে যাচ্ছে মুসলিম শিশুদের বিকশিত হওয়ার প্রথম ধাপ মক্তব

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০২৪

এম এম নুর আলম ॥ মক্তব হলো মুসলিম শিশুদের বিকশিত হওয়ার প্রথম ধাপ। একজন শিশু মক্তব থেকে শিখে আলিফ, বা, তা, ছা, কিংবা আলিফতে আল্লাহ, বা’তে বায়তুল্লাহ। এভাবে সে নূরানী কায়েদার গণ্ডি পেরিয়ে আমপারা শিখে। তারপর ধাপে ধাপে পবিত্র কুরআন শিখে। মূলত মুসলিম শিশুর মননে ইসলাম বিকশিত হওয়ার প্রথম ধাপ মক্তব থেকেই শুরু করে এবং সেখান থেকেই তারা কুরআন সহীহ-শুদ্ধভাবে শিখে। মক্তবের যাত্রা শুরু হয়েছে প্রাচীন আমল থেকে। ৭১১ সালে মুহাম্মদ বিন কাসিমের সিন্ধু বিজয়ের পরপরই ভারতবর্ষে মক্তব ও মাদরাসা শিক্ষার সূচনা হয়। তবে শুরুর দিকে এর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক রূপ ছিল না। মুহাম্মদ ঘোরি দ্বাদশ শতকের শেষ দিকে ভারতবর্ষে তুর্কি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে ১১৯১ সালে আজমিরে একটি ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। তবে ভারতবর্ষে মক্তব ও মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থার বিস্তার ঘটে মূলত মোগল আমলে। সেই শিক্ষাব্যবস্থা ব্যাপক জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য ছিল সব মহলে। ভারতবর্ষে মুসলিম শাসকদের শাসনামলে শিক্ষাব্যবস্থা ও ধর্ম অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত ছিল। বাংলার মুসলমানদের অতীত ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে যখন কোনো সন্তানের বয়স চার বছর চার মাস চার দিন পূর্ণ হতো, তখন তার বিদ্যা শিক্ষার সূচনা হতো। একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পবিত্র কোরআনের কিছু অংশ শিশুকে পাঠ করে শোনানো হতো। শিশু তা পুনরাবৃত্তি করত। এ ছিল প্রতিটি মুসলিম পরিবারের অপরিহার্য প্রথা। সেই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের মসজিদগুলোতেও সকালবেলা শিশুদের মক্তব খুলে দ্বিনি শিক্ষা দেওয়ার রেওয়াজ যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। একসময় বাংলার পথে-ঘাটে ভোরের পাখিদের সঙ্গে সঙ্গে মক্তবগামী কোরআনের পাখিদের দেখা মিলত। বড় বড় মুসলিম মনীষীগণ মক্তব থেকেই প্রথম শিক্ষা লাভ করেছেন। বিভিন্ন দেশ থেকে এদেশে বড় বড় দরবেশ, সূফী, জ্ঞানী, সাধকগণ এসে ইসলামের বাণী প্রচার করে গেছেন। তারা প্রতিষ্ঠা করে গেছেন অসংখ্য মসজিদ, মাদরাসা, মক্তব, হেফজখানা। আস্তে আস্তে মুসলমানরা পুরো উপমহাদেশে ছড়িয়ে যায়। ইসলামের বাহকগণ যেখানে গেছেন, সেখানেই তারা গড়ে তুলেছেন বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। একটা শিশু মক্তব থেকে তার জীবনের সবক পেয়ে যায়। সে শুধু কুরআন শিখে তা নয়, মক্তব থেকে শিখে অযু করার নিয়ম, অযু ভঙ্গের কারণ, গোসলের ফরজ, অযুর ফরজ, গোসল ফরজ হওয়ার কারণ, তায়াম্মুমের নিয়মাবলি ইত্যাদি। এইসব বিষয় মানুষের সারাজীবন দরকার, যদি সে পবিত্রতা অর্জন করতে চায়। এছাড়াও দলবদ্ধভাবে কালিমায়ে তাইয়্যেবা, শাহাদাত, তাওহিদ, তামজীদ, মুজমাল, মুফাচ্ছল শেখে। যেগুলোকে আমরা পাঁচ কালেমা বলে থাকি। এগুলো জোরে জোরে শব্দ করে করে শিখানো হয়। ফলে শিশুদের মনে এমনভাবে গেঁথে যায়। যা সারাজীবনের হাতেখড়ি হয়। ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের মধ্যে নামাজ অন্যতম। নামাজের ফরজ, ওয়াজিব কিভাবে পালন করা হয়, কোন কোন কাজে নামাজ ভঙ্গ হয়, কোন কোন কাজে মাকরূহ হয়ে যায়, নামাজে কি কি দোয়া পড়তে হবে, কোথায় কোন দোয়া পড়তে হবে। সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে সবাইকে নামাজ শেখায় মক্তবে। তেমনিভাবে মসজিদে যাওয়ার দোয়া, ওয়াশরুমে যাওয়ার দোয়া থেকে শুরু করে যাবতীয় সব রকম দোয়া মক্তবেই শিখানো হতো। কিন্তু বিংশ শতাব্দীতে এসে কেমন যেনো এই যাত্রা স্তিমিত হয়ে যেতে শুরু করেছে। কালের বিবর্তনে মানুষের হাতে প্রযুক্তির উৎকর্ষতা। প্রযুক্তির এ ব্যাপক উৎকর্ষতা ও সহজলভ্যতার কারণে আজ ইসলামের সেই সোনালী অধ্যায় হারিয়ে যেতে বসেছে। এক সময় গ্রাম অঞ্চলে মায়েরা ভোরে উঠে ফজর শেষে সুললিত ধ্বনিতে কুরআন তিলাওয়াত করতো। সন্তানদের মক্তবে পাঠানোর ব্যবস্থা করতো। কিন্তু প্রযুক্তি ব্যাপকতায় আজ সেই ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছে। ফলে অধিকাংশ মুসলিম শিশুরা কুরআন বিমুখ হয়ে যাচ্ছে। সহীহ শুদ্ধভাবে কুরআন পড়তে না জানার কারণে তারা কুরআনের প্রতি ভালোবাসা হারিয়ে ফেলেছে। মক্তবগুলো আস্তে আস্তে শূন্য হয়ে যাচ্ছে। আগেকার মায়েরা ফজর নামাজ পড়ে সন্তানদের মক্তবে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করে দিতেন। বর্তমানে সেটা হারিয়ে গেছে। এখন গভীর রাতে ঘুমানোর কারণে ফজরে অচেতন থাকে। ফলে মুসলিম শিশুরা আগের সেই ঐতিহ্যের ছোঁয়া পাচ্ছে না। শিশুদের মক্তবে যাওয়ার চিরাচরিত এই দৃশ্য এখন আর গ্রামবাংলায় খুব একটা দেখা যায় না। এর ফলে অধিকাংশ জায়গায় হারিয়ে গেছে শত শত বছরের মুসলিম ঐতিহ্যের বাহক মক্তব। শহরের বিভিন্ন স্কুল, কিন্ডার গার্টেনসহ নানান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। যেখানে শিশুদের ক্লাস শুরু হয় খুব সকালে। এখন একজন কোমলমতি শিশুর পক্ষে একসঙ্গে দুইটা চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে শিশুদের মক্তবের পরিবর্তে স্কুলে যাওয়াকে গুরুত্ব বেশি দিতে হয়। এটি তাদের দ্বিন শেখার অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এর প্রভাবে তৈরি হচ্ছে ধর্মীয় জ্ঞানশূন্য একটি বিশাল জনগোষ্ঠী। তবে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম এ ক্ষেত্রে প্রশংসার দাবি রাখে। এছাড়াও বাংলাদেশে মক্তব শিক্ষায় অনেক প্রতিষ্ঠান অবদান রেখেছেন। বর্তমানেও এই মুসলিম ঐতিহ্যকে ধরে রাখার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে মুসলিম শিশুদের বিকশিত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া সত্যি প্রশংসনীয় কাজ। যারা মক্তব শিক্ষা নিয়ে কাজ করে, তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করে দেশের প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় ছড়িয়ে দেওয়া প্রয়োজন। অন্যথায় খুব অল্প সময়ের মধ্যে হারিয়ে যাবে শত শত বছরের ঐতিহ্য এই মক্তব।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com