এফএনএস আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম সম্মানজনক ও প্রাচীন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হার্ভার্ড বিশ^বিদ্যালয়কে ভবিষ্যতে আর কোনো ফেডারেল অনুদান দেওয়া হবে নাÑট্রাম্প প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা খাতে নজিরবিহীন বিতর্ক তৈরি করেছে।
গত সোমবার হার্ভার্ডের প্রেসিডেন্ট ড. অ্যালান গারবার বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে শিক্ষামন্ত্রী লিন্ডা ম্যাকমাহন স্পষ্ট জানিয়ে দেন, “এই চিঠির মাধ্যমে অবহিত করা যাচ্ছে যে হার্ভার্ড যেন আর কোনো ফেডারেল অনুদান চায় না, কারণ ভবিষ্যতে তেমন কিছু দেওয়া হবে না।”
ট্রাম্প প্রশাসন অভিযোগ করেছে, হার্ভার্ডÑ
ক্স ইহুদিবিদ্বেষকে প্রশ্রয় দিচ্ছে
ক্স জাতিগত বৈষম্যমূলক ভর্তি নীতি অনুসরণ করছে
ক্স রক্ষণশীল চিন্তাধারার শিক্ষকদের উপেক্ষা করছে
ক্স এবং সাম্প্রতিক সময়ে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে ইহুদি বিরোধিতা ছড়িয়েছে
শিক্ষামন্ত্রী চিঠিতে হার্ভার্ডকে “দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি উপহাস”বলেও আখ্যায়িত করেছেন। চিঠিটি পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও প্রকাশ করা হয়।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের বিরোধিতায় হার্ভার্ড ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ শুরু হয়। ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগ, এসব বিক্ষোভে ইহুদিবিদ্বেষ ছড়িয়েছে। বিশ^বিদ্যালয় কতৃর্পক্ষ এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, “ফিলিস্তিনিদের অধিকারের পক্ষে অবস্থান নেওয়াকে অন্যায়ভাবে বিকৃত করা হচ্ছে।”
এপ্রিলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশ^বিদ্যালয়কে একটি দাবিপত্র পাঠিয়ে বলা হয়Ñ
ক্স ফিলিস্তিনপন্থী গোষ্ঠীর কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে
ক্স ডাইভার্সিটি, ইক্যুইটি ও ইনক্লুশনের (ডিইআই) সব নীতি বাতিল করতে হবে
ক্স ‘ইহুদিবিরোধী হয়রানি’র দায়ে অভিযুক্ত বিভাগগুলোর নিরীক্ষা করতে হবে
ক্স এবং বিদেশি শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক অবস্থানের তথ্য দিতে হবে
হার্ভার্ড এই সিদ্ধান্তকে “অবৈধ, অপ্রত্যাশিত ও অনুচিত হস্তক্ষেপ”বলে উল্লেখ করেছে এবং ইতোমধ্যে ফেডারেল আদালতে মামলা করেছে। বিশ^বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, “এই সিদ্ধান্ত শুধু উচ্চশিক্ষার উপরই নয়, চিকিৎসা ও বিজ্ঞান গবেষণার ভবিষ্যতের উপরও ভয়াবহ প্রভাব ফেলবে।”
বিশ^বিদ্যালয়ের মুখপাত্র বলেন, “গবেষণা, উদ্ভাবন ও একাডেমিক স্বাধীনতা রক্ষায় হার্ভার্ড শেষ পর্যন্ত লড়বে।”
হার্ভার্ডের মোট ৫৩ বিলিয়ন ডলারের তহবিল থাকলেও, এর বড় অংশ নির্দিষ্ট খাতে বরাদ্দ, যেমন ছাত্রবৃত্তি, আর্থিক সহায়তা এবং নির্দিষ্ট প্রকল্প। সরকারি অনুদানই ছিল চিকিৎসা, প্রযুক্তি এবং সামাজিক বিজ্ঞানে চলমান গবেষণার মূল চালিকা শক্তি।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপ শুধু হার্ভার্ড নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের একাডেমিক স্বাধীনতার ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ।