এফএনএস স্পোর্টস: জয়ের নায়ক তাওহিদ হৃদয়, পার্শ্বনায়ক শামীম হোসেন আর শেষ সময়ের নায়ক শরিফুল ইসলাম। নামগুলিকে পাশাপাশি দেখলেই তো বিদ্যুচ্চমকের মতো মাথায় খেলে যায়, সবাই বিশ্বকাপজয়ী! ২০২০ যুব বিশ্বকাপজয়ী দলের তিন জনের হাত ধরে এবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে দারুণ জয়। সেই বিশ্বকাপ যে উজ্জ্বল সম্ভাবনার ছবি মেলে ধরেছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটে, তা পূর্ণতার পথে একটি পদক্ষেপ বলাই যায় এই জয়কে। হৃদয় নিজে অবশ্য এটিতে আপত্তিই করলেন। জয়ের কৃতিত্ব শুধু তাদের তিনজনের নয়, সবাইকেই দিতে চান তিনি। তবে বিশ্বকাপজয়ী দলটির মানসিকতার দিকটিও ফুটে উঠল তার কথাতেই। দেশের ক্রিকেটের যৎসামান্য যা কিছু সাফল্য, এর মধ্যে ওপরের দিকেই থাকবে যুব বিশ্বকাপ জয়। দেশের জন্য এরকম সাফল্য এনে দেওয়ার তৃষ্ণার হৃদয়ের এগিয়ে চলার প্রেরণা। আফগানিস্তানের বিপক্ষে শুক্রবার যখন উইকেটে জুটি বাঁধলেন হৃদয় ও শামীম, ওভারপ্রতি বাংলাদেশের লাগে ৯ রানের বেশি। স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যানদের শেষ জুটি তারাই। ম্যাচে ততক্ষণে বাংলাদেশের আশার সমাধি দেখছিলেন অনেকেই। কিন্তু ৪৩ বলে ৭৩ রানের দুর্দান্ত জুটিতে দলকে জয়ের দিকে এগিয়ে নেন এই দুই তরুণ। শামীম ২৫ বলে ৩৩ রান করে আউট হয়ে গেলেও হৃদয় হাল ছাড়েননি। ৩২ বলে ৪৭ রানের অপরাজিত ইনিংসে দলকে এগিয়ে নেন তিনি। শেষ ওভারে যদিও টানা তিন ব্যাটসম্যানের বাজে শটের পালায় ম্যাচ জমে উঠেছিল হুট করেই। তবে শরিফুল ইসলামের বাউন্ডারিতে দূর হয়ে যায় শঙ্কা, ধরা দেয় জয়। যুব বিশ্বকাপ জয় থেকে শুরু করে এখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও এমন দারুণ এক জয়ের সারথি তারা। হৃদয় যদিও জয়ের কৃতিত্ব নিতে চাইলেন না। হৃদয়ের হৃদয়জুড়ে যে শুধু দল ও দেশ, সেটি জানাতেও ভুললেন না। “আমার মনে হয়, এই ম্যাচটিতে সবাই অবদান রেখেছি। শুধু আমি, শরিফুল, শামীম, আমরা নই। আমরা তিনজন একসঙ্গে বিশ্বকাপ (যুব) খেলেছি, এজন্যই নয়। শুরু থেকে যদি দেখেন, তাসকিন ভাইৃপ্রতিটি বোলার, সাকিব ভাই থেকে শুরু করে সবাই খুব ভালো শুরু এনে দিয়েছে। সবার অবদান ছিল। ফিল্ডিংয়ে হোক বা সব দিক থেকে অবদান রেখেছে।” “বিশেষভাবে যদি আমাদের কথা বলেন, আমরা সবসময় চেষ্টা করি দলে অবদান রাখতে এবং প্রতিটি খেলোয়াড় সেটিই করে। আমরা দেশের জন্য খেলছি। সবসময় এটাই মাথায় থাকে যে দেশের জন্য খেলব, দেশকে ভালো ফল এনে দেব।” তা তিনি এখন পারছেন বটে। পারছে এই দলটিও। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের নতুন দিনের গান গুনিয়ে এগিয়ে চলছে এই দল। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করার পর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জয়, এরপর এবার আফগানিস্তানের ক্ষুরধার বোলিং আক্রমণের জবাব দিয়ে চাপের মধ্যে ১৫৫ রান তাড়ায় জিতে সিরিজে সিরিজে এগিয়ে যাওয়া, সবকিছুতেই আছে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের দিন বদলের বার্তা। সাফল্যের পেছনে আরেকটি কারণের কথাও শোনালেন হৃদয়, এই দলের রসায়ন দারুণ। “আমাদের প্রতিটি খেলোয়াড় যারা দলে আছে, সবাইকে সবাই সাপোর্ট করি। আমরা জানি আমাদের সম্ভাবনা কতটুকু আছে। সত্যি বলতে, আমরা অনেক ইতিবাচক পথে এগোচ্ছি। যাদের বিপক্ষেই খেলি, আমরা সবসময় ফোকাস করি আমাদের শক্তির জায়গায়। দল হিসেবে আমাদের বন্ধন অনেক ভালো এবং এটা আমাদের সহায়তা করে। কোচ আমাদের ভালো একটা পরিকল্পনা দেয় এবং আমরা তা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করি।” এই পরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল আফগান স্পিন সামলানো। রশিদ খান, মুজিব উর রহমান ও মোহাম্মদ নবিকে নিয়ে গড়া আফগান স্পিন আক্রমণ যে কোনো দলের জন্যই বড় হুমকি। তাদের বিপক্ষে আগেও ভুগেছে বাংলাদেশ, এবার ওয়ানডে সিরিজেও কম ভুগতে হয়নি। টি-টোয়েন্টি সিরিজে এই স্পিন চ্যালেঞ্জ সামলাতে বিশেষ পরিকল্পনা নেয় বাংলাদেশ। হৃদয় বললেন, এই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন তারা মাঠে করতে পেরেছেন বলেই ধরা দিয়েছে জয়। “আমাদের একটা পরিকল্পনা ছিল। বিশ্বের সেরা স্পিন দল ওরা। ওদের সঙ্গে রান করাটা কঠিন। তার পরও আমরা চেষ্টা করেছি, যতটুকু সম্ভব ‘ক্যালকুলেটিভ রিস্ক’ নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা ভালোভাবে বাস্তবায়ন করতে। আমি মনে করি, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রতিটি ম্যাচই চ্যালেঞ্জিং থাকে। যে কোনো প্রতিপক্ষের কারও না কারও ভালো দিক থাকেই। আমরা যেভাবে পরিকল্পনা করেছিলাম, তা বাস্তবায়ন করেছি।” পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সেই চ্যালেঞ্জের দ্বিতীয় অধ্যায় দেখা যাবে রোববার সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টিতে।