এফএনএস: ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে সড়ক দুর্ঘটনা ১২ শতাংশ বেড়েছে জানিয়ে এর দায় নিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেছেন, স¤প্রতি রোড সেফটি ফাউন্ডেশন আমাদের সড়ক দুর্ঘটনা বিষয়ে তথ্য উপাত্ত দিয়েছে। গত বছর সারা দেশে ৭ হাজার ২৯৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং ১২ হাজারের বেশি আহত হয়েছেন। যা ২০২৩ সালের চেয়ে ১২ শতাংশ বেশি। আমরা অন্তর্বতীর্ সরকার হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে পারিনি এর জন্য দায় নিচ্ছি। গতকাল শনিবার দুপুরে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) ভবন পরিদর্শন ও কনফারেন্স রুমে রোড সেফটি বিষয়ক মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। সড়ক উপদেষ্টা বলেন, জীবনের কোনো মূল্য হয় না। কিন্তু অপরাধ স্বীকারের অংশ হিসেবে আমরা সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের আইন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য বিআরটিএসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দিয়েছি। ভবিষ্যতে সড়ক দুর্ঘটনা কমানোর জন্য বিআরটিএর কর্মকর্তাদের পরিষ্কার বলে দেওয়া হয়েছে। গাড়ির ফিটনেস ও চালকের লাইসেন্স না থাকার জন্য যদি দুর্ঘটনা ঘটে, তাহলে বিআরটিএর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে সরাসরি দায়ী করা হবে। এসব মৃত্যুর দায়িত্ব তাদের ওপর আসবে এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও ফিটনেস ইস্যু করার প্রক্রিয়া অনেক জটিল। তাই এখন থেকে লাইসেন্স দেওয়ার ব্যবস্থাটা সহজ করা হবে এবং কার্যকরী করা হবে। এর জন্য আমরা প্রথমেই চালকদের প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিয়েছি। আমরা চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবো। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে সাড়ে ৪ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া আটকে আছে। আগামী মার্চের মধ্যে এগুলো দিয়ে দেওয়া হবে। ড্রাইভিং লাইসেন্স ও ফিটনেস সার্টিফিকেট রিনিউ করার ক্ষেত্রে আগে থেকে বিআরটিএ মেসেজ দেবে। সেখানে জানিয়ে দেওয়া হবে কত সময়ের মধ্যে লাইসেন্স ও ফিটনেস রিনিউ করতে হবে। যদি ওই সময়ের মধ্যে লাইসেন্স রিনিউ না করা হয়, তাহলে সেটি বাতিল হয়ে যাবে। উপদেষ্টা আরও বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গাড়ির ফিটনেসের বিষয়ে কি কি করতে হবে, কে করবে, কীভাবে করবে, কত দিনের মধ্যে করবে, সেটি করতে কি কি প্রয়োজন হবে সেটার একটি ম্যাট্রিক্স আমরা দাঁড় করিয়েছি। সেটা আমরা মনিটরিং করবো। এদিকে নিজেদের অবস্থার উন্নতি করতে না পারলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ—বিআরটিএ’কে বন্ধের কথা চিন্তা করা হবে বলে জানিয়েছেন মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। এর আগে গত ১৯ ডিসেম্বর রাজধানীর বিদ্যুৎ ভবনে এক আলোচনা সভা শেষে বিআরটিএ’কে নিজেদের অবস্থার উন্নতির জন্য এক মাস সময় বেঁধে দেন সড়ক উপদেষ্টা। যা প্রায় শেষের দিকে। তবে এই সময়ের মধ্যে বিআরটিএ কিছুটা উন্নতি করতে পারলেও গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে যেতে পারেনি বলে মনে করেন উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেন, বিআরটিএ এর কর্মকর্তাদের স্পষ্টভাবে বলে দেওয়া হয়েছে, তারা যে আচরণ করছে সেটা গ্রহণযোগ্য নয়। আমি তাদের এটাও বলেছি, সরকারি বিভিন্ন দপ্তর বিলুপ্ত হয়ে গেছে। কাজের যদি উন্নতি না হয়, তাহলে আমরা বিআরটিএ বন্ধ করে দেওয়ার কথা চিন্তা করবো। উপদেষ্টা বলেন, আমরা বিআরটিএ’কে প্রতিনিয়ত মনিটরিংয়ের মধ্যে রাখবো। ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান চলমান আছে। এটাকে আরও বাড়ানো হবে। সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধির দায় নিয়ে তিনি বলেন, গত বছর থেকে এ বছর ১২ শতাংশ বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। আমরা অন্তর্বতীর্কালীন সরকার হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে পারিনি, এর জন্য দায় নিচ্ছি। ফাওজুল কবির খান আরও বলেন, জীবনের কোনও মূল্য হয় না। কিন্তু অপরাধ স্বীকারের অংশ হিসেবে আমরা সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের আইন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে বিআরটিএসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দিয়েছি।