এফএনএস: চলতি বছর সারা দেশে রাজনৈতিক সহিংসতায় ১ হাজার ১৮০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৩৭ হাজার ৫১ জন। এর মধ্যে শুধু জুলাই—আগস্টের আন্দোলনে নিহত হয়েছেন ১ হাজার ১৩ এবং আহত হয়েছেন ৩০ হাজারের বেশি মানুষ। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এক সংবাদ সম্মেলনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস)। ওই প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। বাংলাদেশের ১২টি জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ এবং এইচআরএসএস’র সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংগঠনটি। সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদন তুলে ধরেন এইচআরএসএস এ’র প্রোগ্রাম অফিসার সাইফুল ইসলাম। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালে রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ১ হাজার ১৮০ জন। আহত হয়েছেন ৩৭ হাজার ৫১ জন। এর মধ্যে শুধু জুলাই—আগস্টের আন্দোলনে ১ হাজার ১৩ জন নিহত হয়েছেন। আন্দোলনে আহত হয়েছেন ৩০ হাজারের বেশি মানুষ। এছাড়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ৪৩ জন। তাদের অধিকাংশই ছিলেন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী। গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার তথ্য তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালে কমপক্ষে ১৬ জন গুমের শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৯ জনকে পরবর্তী সময়ে গ্রেপ্তার দেখানো হলেও একজনের কোনও খেঁাজ মেলেনি। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ২৫ জন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্যাতন ও গুলিতে এ সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের ওপর সহিংসতার তথ্য তুলে ধরে আরও বলা হয়, ২০২৪ সালে সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের ওপর ১১২টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে পাঁচ জন নিহত এবং ৮৩ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া ২৮টি মন্দির, ৩১টি প্রতিমা, ২৮৪টি বসতবাড়ি এবং ২৪০টি দোকানে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। ২০২৪ সালে সাংবাদিকদের প্রতি সহিংসতার ঘটনা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের ওপর ৩০৮টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে ১০ জন সাংবাদিক নিহত এবং ৪৫৯ জন আহত, ৫৯ জন লাঞ্ছনার শিকার, ১৯ জন গ্রেপ্তার এবং ১৩৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ছাত্র—জনতার আন্দোলনকেন্দ্রিক ঘটনায় পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে কমপক্ষে ২৭০ সাংবাদিক আহত, হুমকি, গ্রেপ্তার ও লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন। আন্দোলনে নিহত হয়েছেন ছয় জন সাংবাদিক। একই সময়ে আশঙ্কাজনকভাবে, সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩ এর অধীনে দায়ের করা ৩২টি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন ২১ জন। অভিযুক্ত করা হয়েছে ৭৯ জনকে। নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, এ বছরে ১ হাজার ৪৯৮ জন নারী ও শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৫৫৭ জন। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি শিশু। যৌতুকের জন্য নির্যাতনে ৪৮ জন নারী প্রাণ হারিয়েছেন। একই সময়ে শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৪ হাজার ৩০০ জন। তাদের মধ্যে ৬৬২ জন প্রাণ হারিয়েছেন। নির্বাচনী সহিংসতা ও গ্রেপ্তার নিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্বাচনী সহিংসতায় আহত হয়েছেন ২ হাজার ৫৩৮ জন এবং প্রায় ৭৫২টি ঘটনায় ৪৩ জন নিহত হয়েছেন। একইসঙ্গে ১ হাজার ৩৮৩টি মামলায় ৬৬ হাজার মানুষের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে এইচআরএসএস ’র নির্বাহী পরিচালক ইজাজুল ইসলাম বলেন, ‘জুলাই আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে বিপুল সংখ্যক মানুষ আহত ও নিহত হয়েছেন। মাত্র দুই মাসে যেভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে, আমাদের ৫৩ বছরের ইতিহাসে এমন ঘটনা আর নেই। এ সময় এমন কোনও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয় নেই যা ঘটেনি। সংবাদ সম্মেলনে আরও ছিলেন– এইচআরএসএস ’র জয়েন্ট সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান, ডকুমেন্টেশন অফিসার জবা ইয়াসমিন।