রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:০১ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
কলারোয়ার তুলসীডাঙ্গায় বিএনপির মতবিনিময় সভা শ্যামনগরে ঠিকাদার কল্যাণ সমিতির নির্বাচনে সভাপতি আসাদুল্লাহ, সম্পাদক হাফিজুর ব্রহ্মরাজপুরে সেলুন মালিক কল্যাণ সমিতির কমিটি গঠন সভাপতি শম্ভু সম্পাদক মানিক সাতক্ষীরা জেলা চিংড়ি পোনা ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সভা সাতক্ষীরা স্কাউটস্ ত্রৈ—বার্ষিক কাউন্সিল কমিশনার শাহজাহান সম্পাদক মনোরঞ্জন পুরাতন সাতক্ষীরা সরলাপাড়া যুব সংঘের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া মাহফিল পীরমাতা ব্লাড ব্যাংক নলতা শরীফ’র প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ও মিলন মেলা অনুষ্ঠিত আশাশুনির খাজরা ও বড়দল সীমান্তে কালকী স্লুইস গেট পরিদর্শনে রবিউল বাশার শ্যামনগরে মটর সাইকেল দূর্ঘটনায় চালক নিহত ও আহত ১ কালিগঞ্জে সু—নাগরিকের উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ

২৬ জেলায় বইছে শৈত্যপ্রবাহ, তাপমাত্রা বেড়ে কমতে পারে শীত

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০২৩

এফএনএস: তাপমাত্রা কমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষ করে উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আরও তীব্র হয়েছে শীত। বিস্তৃত হয়েছে শৈত্যপ্রবাহের আওতা। গতকাল বৃহস্পতিবার দেশের ২৬ জেলায় বইছিল মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ, যা একদিন আগে ছিল ১৮ জেলায়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কমে ৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমেছে চুয়াডাঙ্গায়। গত বুধবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল রাজশাহী ও ঈশ্বরদীতে। তবে আপাতত আর শীত বাড়ার আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। আবহাওয়া বিভাগ জানায়, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বেড়ে শীত কমতে পারে। এতে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দূর হতে পারে শৈত্যপ্রবাহ। একই সঙ্গে বিভিন্ন অঞ্চলে দু-তিন দিনের মধ্যে হালকা বৃষ্টিরও পূর্বাভাস দিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। একদিনের ব্যবধানে ঢাকায়ও তাপমাত্রা প্রায় ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমেছে। ঢাকায় ১৩ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে কমে হয়েছে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক জানান, সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের নদী অববাহিকা ও তৎসংলগ্ন এলাকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং দেশের অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে এবং এটি কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, মানিকগগঞ্জ, যশোর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, বরিশাল এবং ভোলা জেলাসহ রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা কিছু এলাকা থেকে প্রশমিত হতে পারে বলেও জানান তিনি। ওমর ফারুক বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা এক থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আগামী তিনদিনের মধ্যে হালকা বা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে। চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বনিম্ন ৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে জেলার আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রকিবুল হাসান এ তথ্য জানান। এদিকে, জেলার ওপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। হাড় কাঁপানো শীতে বিপর্যস্ত চুয়াডাঙ্গার মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। বিশেষ করে ছিন্নমূল ও অসহায় মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। শীত নিবারণের চেষ্টায় আগুন জ¦ালিয়ে উত্তাপ নিতে দেখা গেছে নিম্নআয়ের মানুষকে। চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রকিবুল হাসান বলেন, সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৯৭ শতাংশ। মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত আছে। তাপমাত্রা হ্রাস পাওয়ায় শীতের তীব্রতা খুব বেশি অনুভ‚ত হচ্ছে। এরকম পরিস্থিতি অব্যাহত থাকবে। তাপমাত্রা আরও কমতে পারে। শহরের বড় বাজার এলাকায় কাজের সন্ধানে থাকা এক দিনমজুর বলেন, কনকনে শীত পড়েছে। এর সঙ্গে বাতাস শীতের তীব্রতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তারপরও থেমে নেই কাজ। বাধ্য হয়েই কর্মস্থলে যেতে হচ্ছে। শীতে কাজ না পেয়ে বাড়িতে ফিরতে হচ্ছে অনেকেরই। তপু আলী নামে এক হোটেল কর্মচারী বলেন, প্রতিদিন সকালে নাশতার জন্য হোটেলে প্রচুর চাপ থাকে। এজন্য ফজরের আজানের পর থেকেই কাজ করতে হয়। ভোরে পানিতে হাত দিলে মনে হয় অবশ হয়ে যাচ্ছে। আঙুলগুলো নাড়ানো যাচ্ছে না। তারপরও পেটের দায়ে কাজ করছি। বেসরকারি চাকরিজীবী লিয়াকত মিয়া বলেন, সকাল ৮টার মধ্যে অফিসের উদ্দেশ্যে বের হতে হয়। প্রচণ্ড শীতের কারণে পায়ে হেঁটে যাচ্ছি অফিসে। এতে শরীরটা একটু গরম থাকে। কিন্তু হিমেল হাওয়ায় জবুথবু অবস্থা। জেলা শহরের রিকশাচালক মাসুম বলেন, আজ প্রচণ্ড শীত লাগছে। ঠান্ডার জন্য রিকশা চালানো যাচ্ছে না। হাত-পায়ের পাতা মনে হচ্ছে বরফ হয়ে যাচ্ছে। পেটের দায়ে বাড়ি থেকে বের হলেও প্যাসেঞ্জার পাওয়া যাচ্ছে না। জামশেদ আলী নামে এক কৃষক বলেন, ভোরে কাজে যেতে পারিনি শুধু অতিরিক্ত শীতের কারণে। এভাবে ঠান্ডা পড়লে কাজে যাওয়া সম্ভব হবে না। ফসলের ঠিকমতো পরিচর্যা করা সম্ভব হচ্ছে না। চা-দোকানি গাফফার বলেন, ভোর থেকেই প্রচণ্ড শীত। আজও দোকানে খরিদ্দার নেই। এদিকে, শীতজনিত কারণে হাসপাতালগুলোতে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে ১৩টি বেডের বিপরীতে ভর্তি রয়েছে প্রায় শতাধিক। অপরদিকে, প্রতিদিন ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি হচ্ছে শতাধিক। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মাহবুবুর রহমান মিলন বলেন, তীব্র শীতে শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়াসহ শীতজনিত বিভিন্ন রোগে হাসপাতালের আউটডোরে প্রচুর রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। এ ছাড়া প্রতিদিন তিন থেকে চারশ শিশু আউটডোরে চিকিৎসা নিয়েছে। শীতজনিত কারণে নিউমোনিয়া রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের তত্ত¡াবধায়ক ডা. মো. আতাউর। এদিকে আবারও মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের কবলে পড়েছে শীতের জেলা পঞ্চগড়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন ৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস। গত বুধবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আরও দুয়েকদিন তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকবে বলে জানায় তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস। সপ্তাহজুড়ে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের প্রভাবে ঘনকুয়াশা আর হিমশীতল বাতাস বয়ে চলেছে অবিরাম। এতে হাড় কাঁপানো শীত অনুভ‚ত হচ্ছে। দুপুরের দিকে সূর্য দেখা দিলেও ঘনকুয়াশার দাপটে উত্তাপ নেই। টানা শৈত্যপ্রবাহে ছিন্নমূল, খেটে খাওয়া, দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের মানুষ। জেলা শহরের নিমনগর খালপাড়া এলাকার অটোরিকশার চালক মহিদুল ইসলাম বলেন, কয়েক দিন ধরেই ঘনকুয়াশা আর দিন রাত বাতাসের কারণে খুব ঠান্ডা লাগছে। সহজে কেউ রিকশায় উঠতে চায় না। আমরা আগে দিনে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত আয় করতাম। এখন অর্ধেক টাকাও আয় হয় না। খুব কষ্টের মধ্যে আছি। তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাসেল শাহ বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন ৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস। গত বুধবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আরও দুয়েকদিন তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com