এফএনএস স্পোর্টস: ম্যাচ শেষ হতে লাগল না দুই দিনও। সম্ভাব্য ৪৫০ ওভারের মধ্যে খেলা হলো না ১৪৫ ওভারও। তার পরও যেন হয়ে গেল কত কিছু! সবুজ উইকেটে ভয়ঙ্কর বোলিং, একের পর এক উইকেট, ব্যাটসম্যানদের দুর্দশা, আঘাত-পাল্টা আঘাত, ব্যাটিং ধস এবং দুই দিনেরও কম সময়ে ৩৪ উইকেটের পতনের পর শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার জয়। ব্রিজবেন টেস্টে চমক জাগানিয়া প্রথম দিনের পর আর নাটকীয় দ্বিতীয় দিনে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৬ উইকেটে হারিয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল অস্ট্রেলিয়া। শেষ ইনিংসে ¯্রফে ৩৪ রান তাড়ায় অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে হয় ৪ উইকেট। গোটা ম্যাচের চিত্র খানিকটা ফুটে ওঠে এখানেই। প্রথম দিনে উইকেটের পতন হয় ১৫টি, দ্বিতীয় দিনে ১৯টি। সব মিলিয়ে গোটা টেস্টে খেলা হয়েছে মাত্র ৮৬৭ বল। অস্ট্রেলিয়ায় এর চেয়ে কম বল হয়েছে মাত্র একটি টেস্টেই। ১৯৩২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেই মেলবোর্ন টেস্টে খেলা হয়েছিল ৬৫৬ বল। সব মিলিয়ে ইতিহাসের অষ্টম সংক্ষিপ্ততম টেস্ট এটি। দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের মতো দেশে সবুজ উইকেট নতুন কিংবা বিরল কিছু নয়। তবে গ্যাবার এই উইকেটে প্রচুর সবুজ ঘাসের পাশাপাশি বাউন্সও অসমান। গতি দুইরকম। এতেই মূলত ব্যাটসম্যানদের জন্য দুঃস্বপ্ন হয়ে ওঠে এই ২২ গজ। প্রথম দিনে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১৫২ রানে গুটিয়ে অস্ট্রেলিয়া দিন শেষ করে ৫ উইকেটে ১৪৫ রানে। বোলারদের মৃগয়ায় পাল্টা আক্রমণে ৭৭ বলে ৭৮ রান করে অপরাজিত থাকেন ট্রাভিস হেড। এই উইকেটে টিকে থাকা কঠিন বলেই হয়তো হেড ও ক্যামেরন গ্রিন পাল্টা আক্রমণের পখ বেছে নেন নতুন দিনেও। তাতে দ্রুত কিছু বাউন্ডারি আসে। তবে ঝুঁকিরর পথে হেঁটে লস্বা সময় টিকতে পারেননি কেউই। মার্কো ইয়ানসেন একই ওভারে ফেরান দুজনকে। ১৯ বলে ১৮ করে ফেরেন গ্রিন। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা হেড সেঞ্চুরি হাতছাড়া করেন ৯৬ বলে ৯২ রানে আউট হয়ে। এরপর ৩১ রানের ছোট্ট জুটি গড়েন অ্যালেক্স কেয়ারি ও মিচেল স্টার্ক। শেষ দিকে আবার ৫ রানের মধ্যে তারা হারায় শেষ ৩ উইকেট। কেয়ারি অপরাজিত থাকেন ২২ রান করে। ৬৬ রানের লিড পায় অস্ট্রেলিয়া, ম্যাচের প্রেক্ষাপটে যা পরে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে আবার অস্ট্রেলিয়ান পেসারদের তোপে পড়ে যায় প্রোটিয়া ব্যাটিং। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে ডিন এলগারকে ফেরান প্যাট কামিন্স। পরের ওভারে রাসি ফন ডার ডাসেনকে দুর্দান্ত ডেলিভারিতে বোল্ড করে মিচেল স্টার্ক পূর্ণ করেন ৩০০ টেস্ট উইকেট। একটু পর যখন কামিন্সের বলে গালিতে গ্রিনের দুর্দান্ত ক্যাচে বিদায় নেন এরভিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা তখন কাঁপছে ৫ রানে ৩ উইকে হারিয়ে। চতুর্থ জুটিতে খানিকটা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন টেম্বাব বাভুমা ও খায়া জন্ডো। পেস স্বর্গেও স্পিন আক্রমণে আনতে বাধ্য হন কামিন্স। আগের ইনিংসের মতোই অধিনায়কের মুখে হাসি ফোটান ন্যাথান লায়ন। এই অফ স্পিনার ফিরিয়ে দেন ২৯ রান করা বাভুমাকে। এরপর এক প্রান্তে রান কিছুটা বাড়ান জন্ডো, আরেক প্রান্তে পড়তে থাকে উইকেট। প্রথম ইনিংসের ফিফটি করা কাইল ভেরেইনার সঙ্গে মার্কো ইয়ানসেনকে এক ওভারে ফেরার স্কট বোল্যান্ড। কামিন্স ছোবল দেন লেজে। দক্ষিণ আফ্রিকা গুটিয়ে যায় ৯৯ রানেই। ক্যারিয়ারে তৃতীয় টেস্ট খেলতে নামা জন্ডো অপরাজিত থাকেন ৩৬ রানে। ক্যারিয়ারে অস্টমবার ৫ উইকেটের স্বাদ পান কামিন্স। জয়ের জন্য ৩৪ রান করতেও শেষ ইনিংসে নাভিশ্বাস উঠে যায় অস্ট্রেলিয়ার। কাগিসো রাবাদা এতের পর এক গোলায় ভেঙে যায় টপ অর্ডার। দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও উসমান খাওয়াজা ফেরেন শুরুতেই। পরে স্টিভেন স্মিথ ও ট্রাভিন হেডকে তিনি বিদায় করেন পরপর দুই বলে। এই দুই উইকেটের মাঝে ওয়াইড বলের বাউন্ডারিতে রান আসে ৫। তার পরও ৭ ওভার শেষে অস্ট্রেলিয়ার রান ৪ উইকেটে ২৪। অষ্টম ওভারে আনরিখ নরকিয়ার আরও দুটি গতিময় ওয়াইড চলে যায় বাউন্ডারিতে। সব মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ৩৫ রানে অতিরিক্তই ১৯ রান! ম্যাচ তাই আরেকটু জমতে পারল না। তবে এমনিতেই যত নাটকীয়তা হলো, তা কম কী! প্রথম ইনিংসের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ম্যাচের সেরা ট্রাভিস হেড। দুই দল এরপর লড়বে বক্সিং ডে টেস্টে, মেলবোর্নে। সংক্ষিপ্ত স্কোর: দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ৪৮.২ ওভারে ১৫২ (এলগার ৩, এরভিয়া ১০, ফন ডার ডাসেন ৫, বাভুমা ৩৮, জন্ডো ০, ভেরেইনা ৬৪, ইয়ানসেন ২, মহারাজ ২, রাবাদা ১০*, নরকিয়া ০, এনগিডি ৩; স্টার্ক ১৪-১-৪১-৩, কামিন্স ১২.২-৩-৩৫-২, বোল্যান্ড ১১-২-২৮-২, গ্রিন ৩-০-২০-০, লায়ন ৮-২-১৪-৩)। অস্ট্রেলিয়া ২য় ইনিংস: (আগের দিন ১৪৫/৫) ৫০.৩ ওভারে ২১৮ (ওয়ার্নার ০, খাওয়াজা ১১, লাবুশেন ১১, স্মিথ ৩৮, হেড ৯২, বোল্যান্ড ১, হেড ১৮, কেয়ারি ২২*, স্টার্ক ১৪, কামিন্স ০, লায়ন ০; রাবাদা ১৭.১-২-৭৬-৪, এনগিডি ৯-১-৩৫-১, ইয়ানসেন ৯-১-৩২-৩, নরকিয়া ১৩-২-৫২-২, মহারাজ ২-০-১৭-০)। দক্ষিণ আফ্রিকা ২য় ইনিংস: ৩৭.৪ ওভারে ৯৯ (এলগার ২, এরভিয়া ৩, ফন ডার ডাসেন ০, বাভুমা ২৯, জন্ডো ৩৬*, ভেরেইনা ০, ইয়ানসেন ০, মহারাজ ১৬, রাবাদা ৩*, নরকিয়া ০, এনগিডি ৯; স্টার্ক ১১-৩-২৬-২, কামিন্স ১২.৪-৩-৪২-৫, বোল্যান্ড ৮-২-১৪-২, লায়ন ৬-০-১৭-১)। অস্ট্রেলিয়া ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ৩৪) ৭.৫ ওভারে ৩৫/৪ (ওয়ার্নার ৩, খাওয়াজা ২, লাবুশেন ৫*, স্মিথ ৬, হেড ০, গ্রিন ০*; রাবাদা ৪-১-১৩-৪, নরকিয়া ৩.৫-০-১৮-০)। ফল: অস্ট্রেলিয়া ৬ উইকেটে জয়ী। সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে অস্ট্রেলিয়া ১-০তে এগিয়ে। ম্যান অব দা ম্যাচ: ট্রাভিস হেড।