এফএনএস: রূপসা রেলসেতুতে চলছে শেষ পর্যায়ের কাজ। নানা প্রতিক‚লতা কাটিয়ে এখন শেষের পথে রেলসেতুর নির্মাণকাজ। ২০২২ সালের জুনে সেতুর কাজ শেষ করার লক্ষ্যে করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও এগিয়ে চলছে কাজ। চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সেতু প্রকল্পের সার্বিক কাজ এগিয়েছে প্রায় ৯৫ শতাংশ। দেশের দীর্ঘতম রূপসা রেলসেতু এখন চালুর প্রহর গুনছে। ভারী ভারী যন্ত্রপাতি দিয়ে নির্মাণযজ্ঞ চলছে অবিরাম। প্রকল্পের কাজে ব্যবহৃত ভারী যানবাহন-যন্ত্র চলছে দিন-রাত। নির্মাণাধীন রেলসেতুর পশ্চিম পাড় (খুলনা সাইড) বটিয়াঘাটা উপজেলার পুটিমারী ও পূর্ব পাড় খারাবাদ (মোংলা সাইড) এলাকায় চলছে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। দীর্ঘদিনের লালন করা স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। অধরা স্বপ্ন বাস্তবায়ন দেখে বেজায় খুশি খুলনাঞ্চলের মানুষ। সেতুর নির্মাণযজ্ঞ দেখতে প্রতিদিনই রূপসার দুপাড়ে অসংখ্য মানুষ নিয়মিত ভিড় করছেন। প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, খুলনা-মোংলা রেলপথ প্রকল্পটির কাজ তিনটি ভাগে বিভক্ত। এর একটি রূপসা নদীর উপর রেলসেতু, অপরটি রেললাইন এবং অন্যটি টেলিকমিউনিকেশন ও সিগন্যালিং। প্রকল্পের আওতায় লুপ লাইনসহ রেলওয়ে ট্র্যাকের দৈর্ঘ্য ৮৬ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার। এরমধ্যে ৬৪ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ। রূপসা নদীর উপরে যুক্ত হচ্ছে ৫ দশমিক ১৩ কিলোমিটার রেলসেতু। এ ছাড়া ২১টি ছোটখাটো ব্রিজ ও ১১০টি কালভার্ট নির্মাণ এবং খুলনার ফুলতলা থেকে মোংলা পর্যন্ত ৮টি স্টেশন নির্মাণকাজ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এরমধ্যে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লারসেন অ্যান্ড টুব্রো রূপসা নদীর উপর রেলসেতুর নির্মাণকাজ করছে। বাকি কাজ করছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ইরকন ইন্টারন্যাশনাল। জমি অধিগ্রহণ, রেললাইন ও রেলসেতু নির্মাণসহ সমগ্র প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয় ৩ হাজার ৮০১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এ রেলসেতুটি হবে দেশের দীর্ঘতম রেলসেতু। ২০১০ সালের ২১ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) খুলনা-মোংলা রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন করে। ২০১৭ সালের ১৫ অক্টোবর রূপসা রেলসেতুর পাইলিংয়ের কাজের উদ্বোধন করেন রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খুলনা-মোংলা রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। মোংলা বন্দরে আরও গতি সঞ্চার হবে। মোংলা বন্দরের সঙ্গে খুলনাসহ সমগ্র বাংলাদেশের রেল যোগাযোগ সুগম হবে। ব্যবসা-বাণিজ্যের স¤প্রসারণ ঘটবে। কম খরচে ভারত, নেপাল ও ভুটানে মালামাল পরিবহন সহজ হবে। বিভিন্ন স্থান থেকে দেশি-বিদেশি পর্যটকরাও সহজে সুন্দরবন ভ্রমণ করতে পারবেন। এ বিষয়ে খুলনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক চৌধুরী মিনহাজ-উজ জামান বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের আনন্দের বিষয় রূপসা রেলসেতু নির্মাণ। রূপসা রেলসেতুকে কেন্দ্র করে আগামীতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় আরও তরান্বিত হবে। বিশেষ করে মোংলা বন্দরের গুরুত্ব বাড়বে। কনটেইনার সার্ভিস বাড়বে। কনটেইনারের মাধ্যমে পণ্য আমদানি বাড়বে। মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। সেতুর অগ্রগতি সম্পর্কে রূপসা রেলসেতুর ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিলেশন ম্যানেজার সুব্রত জানা বলেন, রেলসেতুর ভায়াডাক্টের ৮৫৬টি পাইলের মধ্যে সবকয়টি, পাইল বেস-গ্রাউটিং ৮৫৬টির সবকয়টি, পাইল ক্যাপ ১৩৬টির মধ্যে সবকয়টি, পিয়ার ১৩৬টির মধ্যে সবকয়টি, স্প্যান ইর্যাকশান ১৩৬টির সবকয়টি ও ব্যাক স্লাব ১৩৬টির মধ্যে সবকয়টি সম্পন্ন হয়েছে। এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে মূল সেতুর পাইল ৭২টির মধ্যে ৭০টি, পাইল ক্যাপ ৮টির মধ্যে ৩টি, বিয়ারিং ৩২টির মধ্যে ৮টি সম্পন্ন হয়েছে। তিনি জানান, প্রকল্পের সার্বিক ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৯৫ শতাংশ। চলতি বছরের জুনের মধ্যে কাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।