শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০১:৩০ পূর্বাহ্ন

আশাশুনি আজব রাস্তার সন্ধান ॥ পিচের রাস্তা হয়ে যাচ্ছে ইটের রাস্তা

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় বুধবার, ১৩ মার্চ, ২০২৪

এম এম নুর আলম ॥ আশাশুনি উপজেলায় এক আজব রাস্তার সন্ধান পাওয়া গেছে। পিচের রাস্তা খুঁড়ে বানানো হচ্ছে ইটের রাস্তা। চারদিকে যখন সড়ক-মহাসড়কে উন্নয়নকাজ চলছে ঠিক তখন ব্যতিক্রমধর্মী এ আজব রাস্তা দেখে হতবাক হয়েছে এলাকাবাসী। আশাশুনি উপজেলার সঙ্গে খুলনা জেলার পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলার সংযোগ রাস্তার মানিকখালী থেকে বড়দল অংশে এই দশা। পিচের কার্পেটিং করা রাস্তা নষ্ট হয়ে যাওয়া স্থানগুলোর কার্পেটিং সংস্কার না করে বসানো হচ্ছে ইট। তবে বসানো ইটের গুনগত মান নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন? পিচের কার্পেটিং করা রাস্তার রুপ বদল কর নির্মিত ইটের রাস্তায় নিম্নমানের ইট ব্যবহার করায় সাধারণ জনগণ থেকে স্থানীয় জন-প্রতিনিধিদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে ক্ষোভের। সবমিলিয়ে পিচের কার্পেটিং করা রাস্তার রুপ পাল্টে সেই মান্ধাতার আমলের ইটের রাস্তা করার কাজে মানহীন ইট ব্যবহার যেন আগুনে ঘি ঢেলে দেওয়ার মত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে এলাকা জুড়ে। এনিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আশাশুনি উপজেলার সঙ্গে খুলনা জেলার পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলাসহ একই উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষের চলাচলের অন্যতম প্রধান রাস্তাটি বড়দল ইউনিয়নের মধ্যে অবস্থিত। কয়েকশ বছর আগে দক্ষিণ অঞ্চলের অন্যতম বড় বাজার বড়দল বাজার বা বড়দল হাট গড়ে ওঠে। সেখানে যাওয়ার একমাত্র রাস্তা এটি। প্রায় ১০ কিলোমিটারের এ রাস্তাটি ব্যবহার করে স্থানীয় বাসিন্দারা সাতক্ষীরা জেলা ও আশাশুনি উপজেলা শহরে যাতায়াত করেন। গুরুত্ব বিবেচনায় রাস্তাটির ইট তুলে করা হয় কার্পেটিং। পাশাপাশি এই রাস্তার দুই প্রান্তে দুটি সেতু নির্মাণ করা হয়। প্রথমে মানিকখালী সেতু নির্মাণের ফলে আশাশুনির সঙ্গে এই রাস্তার মাধ্যমে সংযোগ ঘটে বড়দল ইউনিয়নসহ আরও কয়েকটি ইউনিয়নের। অন্যদিকে, এই রাস্তার অপর প্রান্তে নির্মিত বড়দল সেতু সংযোগ করে খুলনার পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলাকে। বড়দলের এই পিচের রাস্তা তৈরি হওয়ার পর বহুবার এই রাস্তাটি সংস্কার করা হয়েছে। কিন্তু গত বছর রাস্তা সংস্কারের নামে খুঁড়ে কয়েকটি স্থানে বসানো হয় ইট। আর চলতি বছরে এই ইট বসানোর কাজ চলছে অনেক স্থানে। এদিকে গত বছর বসানো ইটের গুণগতমান ভালো না হওয়াতে তাও নষ্ট হওয়ার পথে। রাস্তায় এই অবস্থা সম্পর্কে স্থানীয় মোটর ভ্যানচালক আহম্মদ আলী বলেন, আমার বয়স প্রায় ৫৫ বছর, আমি এত টুকু বয়সে জীবনে কখনো দেখিনি পিচের রাস্তা খুঁড়ে ইটের রাস্তা বানানো হয়। এটা মানুষের সঙ্গে তামাশা বলে জানান তিনি। এ বিষয়ে স্থানীয় বড়দল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জগদীশ চন্দ্র সানা বলেন, আমিসহ আমার ইউনিয়নের প্রতিটি মানুষের একই প্রশ্ন পিচের বদলে ইট কেন? গত বছর প্রথম যখন পিচের কার্পেটিং খুঁড়ে ইট বসানো হয় তখন স্থানীয় সড়ক ও জনপদ বিভাগের কাছে আমি প্রশ্ন করেছিলাম এবং তাদের কাজ বন্ধ রাখতে অনুরোধ করেছিলাম কিন্তু তারা বলেছিলেন, এটা সাময়িক সংস্কার কিন্তু সেই সংস্কার স্থায়ী হয়ে গেছে। পিচের কার্পেটিংয়ের সংস্কার তো হয়নি বরং চলতি বছরে আবারও পিচের কার্পেটিং খুঁড়ে নতুন করে ইট বসানো হচ্ছে। পাশাপাশি খুবই নিম্নমানের ইট ব্যবহার করা হচ্ছে দাবি করে জগদীশ সানা বলেন, যে ইট ব্যবহার হচ্ছে তা দুই মাসও টিকবে না, ইট গুলো পরিবহন চলাচল করলে ভেঙে গুড়ো হয়ে ধুলোতে পরিনত হবে। অপরদিকে, সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আরিফ মাহমুদ জানান, এ ধরনের রাস্তা সাতক্ষীরার বিভিন্ন উপজেলাতে করা হয়েছে। দুর্যোগপ্রবণ এলাকা হওয়াতে এই ধরনের সংস্কারের পরিকল্পনা আমি এখানে যোগদানের আগে ইঞ্জিনিয়াররা করেছেন। পিচের কার্পেটিং করা রাস্তা খুঁড়ে ইট বসানোর কারণে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের আপত্তি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এগুলো ইঞ্জিনিয়ারদের বিষয়। এটা ইঞ্জিনিয়ারিং পরিকল্পনা। এগুলোর বিষয়ে সাধারণ জনগণ বা জনপ্রতিনিধিরা কী আর বুঝবেন!’ ইটের গুণাগত মান সম্পর্ক তিনি বলেন, এ ধরনের কোন অভিযোগ নিয়ে আমাদের কাছে কেউ আসেনি। যেহেতু অভিযোগ পেলাম সে ক্ষেত্রে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে, প্রয়োজনে এমন হলে বসানো ইট পাল্টে নতুন করে দেয়া হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com