এফএনএস : দেশে হু হু করে বাড়ছে খাদ্যপণ্যের দাম। এমন পরিস্থিতিতে স্বল্প আয়ের শ্রমজীবী মানুষের জন্য সরকার কম দামে ওএমএসে (ওপেন মার্কেট সেল) চাল ও আটা বিক্রি করছে। আর বাজারমূল্যের প্রায় অর্ধেক দামে ওএমএসের চাল-আটা কিনতে দোকান ও ট্রাকের সামনে প্রতিদিনই মানুষের সারি লম্বা হচ্ছে। বর্তমানে সরকার উপজেলা পর্যায়ের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কর্মসূচির ভর্তুকি ১৯ শতাংশ বা ৮০০ কোটি টাকা বাড়িয়েছে। পাশাপাশি খাদ্য মন্ত্রণালয় ওএমএসের চাল-আটার কালোবাজারি রোধে কঠোর মনিটরিং করছে। খাদ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, খাদ্য অধিদফতর বর্তমানে ওসএমএস কার্যক্রম মহানগর ও জেলা শহর থেকে বাড়িয়ে সব পৌরসভা এলাকায় সম্প্রসারিত করেছে। আর ওএমসের চাল-আটার কালোবাজারি রোধে একই ব্যক্তি যাতে বারবার লাইনে দাঁড়াতে না পারে সেজন্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তা চেয়েছে। কারণ বাজারে যেখানে মোটা চালের কেজি ৫০ টাকা, আর আটার কেজি ৩২ থেকে ৩৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সেখানে ওসএমএসে চাল-আটা ৩০ ও ১৮ টাকায় কেনা যাচ্ছে। সেজন্যই ওএমএসের বিক্রয় কেন্দ্রে মানুষের লাইন দিন দিন দীর্ঘ হচ্ছে। মূলত করোনা শুরুর পর থেকেই যে হারে ওএমএসের বিক্রি বেড়েছে ওই তুলনায় বরাদ্দ না পাওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। সূত্র জানায়, বর্তমানে একজন ডিলার সর্বোচ্চ দেড় টন চাল ও ১ টন আটা বরাদ্দ পায়। যা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। কারণ নিম্ন আয়ের মানুষ বাজারে চাল ও আটার দামে হিমশিম খাচ্ছে। সেজন্যই স্বল্প দামে চাল-আটা কিনতে ওএমএসের ভিড় বাড়ছে। বর্তমানে ওএমএসের চাল-আটা বিক্রি অনেক গুণে বেড়েছে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, কেউ কেউ ওএমএসের চাল ও আটা বিক্রি শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগেই নির্ধারিত স্থানে লাইনে দাঁড়াচ্ছে। সূত্র আরো জানায়, উপজেলা পর্যায়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ওএমএসে ভর্তুকি ৮০০ কোটি টাকা বা ১৯ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। অর্থ বিভাগ সম্প্রতি নিয়মিত বাজেট বরাদ্দের বাইরে অতিরিক্ত ৩ লাখ টন চাল ও ১ লাখ টন গম অনুমোদন করেছে। আগামী জুন পর্যন্ত দরিদ্র মানুষের মধ্যে ওএমএসের চাল-আটা বিক্রি করা হবে। বর্তমানে ওএমএসের প্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর জন্য মোট ভর্তুকি ৪ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা, যা চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪ হাজার কোটি টাকা। ওই অর্থ মূল বাজেট বরাদ্দ থেকে ১৯ শতাংশ বেশি। এদিকে ওএমএসের চাল-আটা কালোবাজারি রোধে কঠোর মনিটরিং করছে খাদ্য অধিদফতর। ওই লক্ষ্যে ইতিমধ্যে ৫টি পরিদর্শক দল গঠন করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে খাদ্য অধিদফতরের সরবরাহ, বণ্টন ও বিপণন বিভাগের উপ-পরিচালক আফিফ-আল-মাহমুদ ভূঁঞা জানান, ওএমএসের চাল-আটার দাম বাজারের প্রায় অর্ধেক। ফলে অনেকেই চাল-আটা কালোবাজারি করছে। খাদ্য অধিদফতরের পরিদর্শনেও তার প্রমাণ মিলেছে। সেজন্য অনেকের ডিলারশিপ স্থগিত করা হয়েছে। তাছাড়া একই ব্যক্তি নির্দিষ্ট চাল-আটা নেয়ার পর আবারো লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনছে। ফলে অনেকে চাল-আটা না পেয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরছে। তা বন্ধ করতে তদারক কর্মকর্তাদের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় করে পাড়ায়/মহলায় পথসভার মাধ্যমে জনসচেতনতা বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে খাদ্য অধিদফতর। অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে খাদ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি) আবদুলাহ আল মামুন জানান, ওএমএসের চাহিদা দিন দিন বাড়ছেই। ওএমএস কেন্দ্র ও ট্রাক সেলের সামনে মানুষের ভিড় বাড়ছে, লম্বা হচ্ছে ক্রেতার লাইন। ইতিমধ্যে ওই কর্মসূচির কার্যক্রম মহানগর ও জেলা শহরের পাশাপাশি সব পৌরসভায় সম্প্রসারণ করা হয়েছে। পাশাপাশি শ্রমঘন এলাকায়ও কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। সেজন্য কর্মসূচির ভর্তুকি ৮০০ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে।