এফএনএস বিদেশ : ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা সম্পর্কে স্পষ্ট চিত্র পেতে বেসরকারি স্যাটেলাইট সংস্থাগুলোর গুরুত্ব দিন দিন স্পষ্ট হচ্ছে। মহাকাশে আরও ছোট ও কার্যকর এমন চোখ ভবিষ্যতে অনেক কাজে লাগানো যেতে পারে। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে তোলা ছবিই ইউক্রেনের বুচা শহরে গণহত্যার চ‚ড়ান্ত প্রমাণ দিতে পেরেছে। এক বেসরকারি স্যাটেলাইট কোম্পানি সে কারণে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসে পড়েছে। খবর ডয়চে ভেলে। আজকাল যে কেউ মহাকাশ থেকে তোলা ছবির অর্ডার দিতে পারে। ফলে ব্যবসা ফুলেফেঁপে উঠছে। প্রায় প্রতিদিনই মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠানো হচ্ছে। সেগুলোর আকার একটি ওয়াইনের বোতলের মতো। ভেতরে হাইটেক ক্যামেরা ভরা থাকে। প্রয়োজনে ছবি তোলার ১০ মিনিটের মধ্যে সেগুলো ক্রেতার কম্পিউটারে পৌঁছে দেয়া যায়। সেরা ছবিগুলোতে ৩০ সেন্টিমিটারের বেশি ভুলভ্রান্তি থাকে না। ফ্রঁসোয়া লঁবার প্লেয়াইডেস নেও নামের একটি কোম্পানির প্রতিনিধি। এয়ারবাস কোম্পানির এই শাখা স্যাটেলাইট ছবির বাজারে সবেমাত্র প্রবেশ করেছে। তার মতে, সংকটের এই সময়ে নির্দিষ্ট কিছু গ্রাহক স্যাটেলাইটে তোলা ছবির নাগাল পেয়ে দীর্ঘমেয়াদি সমাধানসূত্রের প্রতি বাড়তি আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রকল্পে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন বা নিজস্ব স্যাটেলাইট কিনছেন। এই কোম্পানি মূলত গোয়েন্দা সংস্থা ও সরকারের মতো গ্রাহকের দৌলতে সবচেয়ে বেশি অর্থ উপার্জন করছে। এমন স্যাটেলাইট ছবি কাজে লাগিয়ে, বিশেষ করে কৃষিক্ষেত্রে উন্নতির মাধ্যমে ফসলের পরিমাণ বাড়িয়ে বাড়তি আয় করতে পারে। ইয়ুলিউস ক্যুন ইনস্টিটিউটের গবেষক মার্কুস ম্যোলার বলেন, চাষি যেখানে সবসময় যেতে পারেন না, সেখানেও স্যাটেলাইটের নজর রয়েছে। চাষি একই সঙ্গে সব জায়গায় থাকতে পারেন না; কিন্তু স্যাটেলাইটে তোলা ছবির মাধ্যমে গোটা জমির অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা যায়। মার্কুস ম্যোলার এক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে চাষিদের প্রয়োজনীয় পৃথিবী পর্যবেক্ষণের যাবতীয় সম্ভাবনা নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন। তিনি বলেন, স্যাটেলাইটে তোলা ছবি কাজে লাগিয়ে যেমন জমিতে সার দেয়ার আদর্শ সময় স্থির করা হচ্ছে। সেই লক্ষ্যে এমন ইনফ্রারেড ছবি কাজে লাগানো হচ্ছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, যে গাছপালা বেড়ে ওঠার কোন পর্যায়ে সারের প্রয়োজন। ম্যোলার বলেন, সে ক্ষেত্রে সবসময়, যতটা সম্ভব আদর্শ উপায় হলো গোটা জমিতে একই সঙ্গে সার না দিয়ে শুধু নির্দিষ্ট অংশে তা সীমিত রাখা। সেটা করলে সম্পদেরও সাশ্রয় হয়। ছবি তোলার এমন স্যাটেলাইটের আকার এবং ওজন কমেই চলেছে। ফলে মহাকাশে পাঠানোর ব্যয়ও কমছে, যার জের ধরে ছবির মূল্যও কমছে। বছরে কয়েক হাজার ইউরো ব্যয় করলেই মহাকাশ থেকে তোলা ছবির নাগাল পাওয়া সম্ভব। ফ্রঁসোয়া লঁবার মনে বলেন, ‘আমি লক্ষ করছি, স্টার্টআপ কোম্পানির মতো ছোট সংস্থা, এমনকি সাধারণ মানুষ, ইঞ্জিনিয়ার স্যাটেলাইট ছবি নিয়ে কিছু করতে চাইছে।’ ছবির রেজুলেশনেরও উন্নতি হচ্ছে। তাহলে কি অদূর ভবিষ্যতে কম খরচেই মহাকাশ থেকে প্রতিবেশীর ওপর নজর রাখা যাবে? লঁবার বলেন, ‘ছবিতে কিছু মানুষ আছে কি না, আপনি তা হয়তো দেখতে পাবেন। জনসংখ্যার গতিবিধিও হয়তো দেখতে পাবেন। কিন্তু রেজুলেশনের ক্ষেত্রে আরও বেশি কিছু চাইলে যে ব্যক্তিগত তথ্য দিতে হয়, তা পাওয়া কঠিন হবে।’ স্যাটেলাইটে তোলা ছবির বাজার বেড়েই চলেছে। সেই সঙ্গে যুদ্ধের সময় সামরিক বাহিনীর রোষের জের ধরে স্যাটেলাইট ধ্বংসের আশঙ্কাও বাড়ছে।