এফএনএস : গ্যাসের পর এবার বাড়তে যাচ্ছে বিদ্যুতের দাম। কারণ উৎপাদন পর্যায়ে জ্বালানির দাম বাড়লে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি ছাড়া কোনও বিকল্প থাকে না। সেজন্যই বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন এবার গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ঘোষণার মধ্য দিয়ে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির বিষয়টিও স্পষ্ট করেছে। ইতিমধ্যে সব ধরনের গ্যাসের দাম প্রায় ১৩ ভাগের কাছাকাছি (১২ দশমিক ৮১) বাড়ানো হয়েছে। তবে সরকারের ভর্তুকির ওপর নির্ভর করছে বিদ্যুতের দাম কতোটা বাড়বে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন ইতোমধ্যে পিডিবির পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ওপর গণশুনানি করেছে। পিডিবির পাইকারি বিদ্যুতের দাম বর্তমানে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা ৫ টাকা ১৭ পয়সা। পিডিবি ওই দাম ৬৬ ভাগ বাড়িয়ে ৮ টাকা ৫৮ পয়সা করার প্রস্তাব দিয়েছিল। তাদের প্রস্তাব মূল্যায়ন করে বিইআরসির কারিগরি কমিটি ওই দাম ভর্তুকি দিলে আগের দাম অর্থাৎ ৫ টাকা ১৭ পয়সা এবং ভর্তুকি না দিলে ৮ টাকা ১৬ পয়সা করার সুপারিশ করে। কিন্তু বিদ্যুতের দাম কতোটা বাড়বে তা মূলত সরকারের ভর্তুকির ওপর নির্ভর করছে। তবে গ্যাসের দাম বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুতের দাম বাড়লে মানুষের ওপর চাপ পড়ার শঙ্কা রয়েছে। সূত্র জানায়, সাধারণত জ্বালানির দাম ১০ ভাগ বাড়লেই বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করা হয়। এবার সেখানে ১৩ ভাগের কাছাকাছি গ্যাসের দাম বাড়ানো হলো। আর দেশের মোট বিদ্যুতের এখনো ৫৫ থেকে ৬০ ভাগ গ্যাস দিয়ে উৎপাদন করা হয়। তাছাড়া বিদ্যুতে গ্যাসের দাম বাড়ানোর পাশাপাশি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য নতুন করে ডিমান্ড চার্জ আরোপিত হলো। এতোদিন গ্যাসের কোম্পানিগুলো বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কাছ থেকে ডিমান্ড চার্জ চাইলেও তারা বিষয়টিকে পাত্তা দিচ্ছিলো না। এবারের গ্যাসের শুনানিতে কোম্পানিগুলো আবারো বিষয়টি তুলে ধরে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে এবার গ্যাসের দাম বৃদ্ধির আদেশে বলা হয়, প্রতি ঘনমিটারে ০ দশমিক ১০ টাকা ডিমান্ড চার্জ পরিশোধ করতে হবে। তার অর্থ এখন থেকে গৃহস্থালি ছাড়া অন্য সব গ্যাস গ্রাহককে প্রতি ঘনমিটারে ০ দশমিক ১০ টাকা ডিমান্ড চার্জ পরিশোধ করতে হবে। যদিও আগে অন্যান্য গ্রাহক শ্রেণি ডিমান্ড চার্জ পরিশোধ করলেও সরকারি বেসরকারি ছোট-বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র ডিমান্ড চার্জ পরিশোধ করতো না। এদিকে জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের মতে, গতানুগতিক ধারা থেকে বের হয়ে পড়ছে কমিশন। তারপরও অযৌক্তিক ব্যয়বৃদ্ধির বিরুদ্ধে কমিশন কাজ করতে পারছে না। ক্যাবের পক্ষ থেকে যে ২৫ দফা প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল সেখানে সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নে কাজ করা এবং আন্দোলনে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কমিশনকে ওই ধারার বাইরে আনা না গেলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমবে না। বরং হঠাৎ করেই গ্যাসের দাম বাড়ানোর ফলে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়ার বিষয়টি এখন কোম্পানিগুলোর জন্য সহজ হয়ে গেলো। অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবু ফারুক গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের দাম বাড়ায় বিদ্যুতের দামও বাড়বে। তবে সেটি কত ভাগ বাড়বে তা এখনো স্পষ্ট হয়নি। তবে সরকারের তরফ থেকে গত অর্থবছরে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি দেয়া হয়েছে। চলতি বছরের বাজেটেও বিদ্যুৎ উৎপাদনে ২৮ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি থাকছে। দেশের শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় থাকাতে দিন দিন বাড়াতে হচ্ছে ভর্তুকির পরিমাণ।