শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ০২:১২ পূর্বাহ্ন

বাসি রুটির টুকরাই বাঁচিয়ে রাখছে আফগানদের

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৭ জুন, ২০২২

এফএনএস বিদেশ: আফগানিস্তানের কাবুলের নীল গম্বুজ মসজিদের সামনের বাজারে একটি স্টল। সেখানে বড় বড় বস্তায় বাসি নান রুটি সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। অনেক ক্রেতাই খাওয়ার জন্য নিয়ে যাচ্ছেন সেই রুটি। আগে এসব বাসি রুটি পশুদের খাওয়ানো হলেও এখন অনেক পরিবার এই নানরুটি কেনার দিকে ঝুঁকছেন। বিক্রেতারা বলছেন, আগের চেয়ে অনেক বেশি আফগান নাগরিক এখন এই রুটি খাচ্ছেন। ৩০ বছর ধরে কাবুলের পুল-ই-খেশতি বাজারে বাসি রুটি বিক্রি করে শফি মোহাম্মদ। তিনি জানান, আগে দিনে পাঁচ জন এই রুটি কিনলেও এখন ২০ জনের বেশি এই খাবার কিনছেন। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জমজমাট এই রুটির বাজারে আসা অনেকেই দেশটিতে চলমান অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। গত বছরের আগস্টে তালেবান আফগানিস্তান দখলের পর থেকে দেশটিতে মানুষের গড় আয় এক তৃতীয়াংশ কমে গেছে।অন্যদিকে, খাবারের দাম দ্রুত বেড়েছে। রুটি বিক্রেতা শফির ভাষায়, আফগান জনগণের জীবন এই মুহূর্তে পাখির মতো যাদেরকে একটি খাঁচায় বন্দী করে রাখা হয়েছে। কিন্তু সেখানে কোন খাবার বা পানি নেই। তালেবান ক্ষমতা দখলের পর পশ্চিমা দেশগুলো উন্নয়ন সহায়তা বন্ধ করে দেওয়ার দেশটিতে মূলত সঙ্কট শুরু হয়। এ ছাড়া দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রিজার্ভ সব অর্থ জব্দ করাও এমন পরিস্থিতির কারণ। তিন সন্তানের বাবা হাসমতুল­াহর মতো দরিদ্র পরিবারগুলোই এই সঙ্কটে বেশি ভ‚গছে। হাশমতুল­াহ জানান, গত বছরের তুলনায় তার আয় এক পঞ্চমাংশে নেমে এসেছে। একটা শপিং ব্যাগে বাসি রুটি কেনার পর তিনি বলেন,’সকাল থেকে কাজ করছি। সারাদিন পর এইটুকুই কেনারই আমার সামর্থ্য আছে’। হাসমতুল­াহ জানান,বাড়িতে তার ছোট তিন ছেলে রয়েছে। শুকনো, শক্ত রুটির স্বাদ বাড়াতে তিনি পেঁয়াজ এবং টমেটো দিয়ে সেটি রান্না করে দেন। তিনি বলেন,পরিবারের সামনে লজ্জিত বোধ করি, কারণ আমি এত গরীব যে তাদের ভাল খাবার দিতে পারি না’। বাসি রুটির পেছনে দেশটিতে এখন একটা ছোট শিল্পও গড়ে উঠেছে। রুটি সংগ্রহকারীরা রেস্তোরাঁ, হাসপাতাল এবং ব্যক্তিগত বাড়ি থেকে খাবার সংগ্রহ করেন। তারপর তারা সেই রুটি মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে নিয়ে যায়। তারা আবার দোকান মালিকদের কাছে সেই রুটি বিক্রি করেন। বিক্রেতারা জানান, দেশটিতে প্রায় অর্ধেক মানুষ এখন ঠিক মতো খেতে পাচ্নছে না। কিন্তু সেই অনুযায়ী রুটি সরবরাহ করা যাচ্ছে না। একজন রুটি বিক্রেতার ভাষায়, মানুষ অনাহারে আছে। কারণ হিসেবে তিনি জানান,এখন এক বস্তা বাসি রুটি এক সপ্তাহ ধরে সংগ্রহ করতে হয়। অথচ আগে তারা প্রতিদিন এক বস্তা রুটি সংগ্রহ করতে পারতেন। একজন রুটি ব্যবসায়ী জানান, ভালো রুটি পেলে তারা নিজেরাই সেটা খেয়ে ফেলেন। কাবুলে বিভিন্ন বেকারির বাইরে সন্ধ্যায় বিনামূল্যে রুটি পাওয়ার জন্য নারী ও মেয়েদের লাইন ধরে অপেক্ষা করা এখন পরিচিত দৃশ্য। কেউ কেউ তাদের সাথে সেলাইয়ের সরঞ্জামও নিয়ে আসে এবং সেখানে পুরো দিন কাটান। কারণ কোনোভাবেই বিনামূল্যে রুটি পাওয়ার এই সুযোগ তারা হাতছাড়া করতে চান না। এক সময় যখন আফগানিস্তানে বিলিয়ন ডলার ঢালা হচ্ছিল, তখন দুর্নীতি এবং যুদ্ধের প্রভাবে সাধারণ মানুষকে জীবনযাপনে কঠোর সংগ্রাম করতে হয়েছে। এখন যুদ্ধ শেষ হয়েছে, কিন্তু অনেক দিক দিয়ে তাদের সংগ্রাম আরও কঠিন হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com