শুক্রবার, ০৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০৬:৩০ পূর্বাহ্ন

বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ হচ্ছে ভারত

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৮ জুন, ২০২২

এফএনএস বিদেশ : ভারতের অর্থনৈতিক রূপান্তরে একটি মহাকাব্যিক গুণ রয়েছে, যা ১৯ শতকের আমেরিকার কথাই মনে করিয়ে দেয়। দেশটিতে একটি বড় একক জাতীয় বাজার তৈরি করা হচ্ছে। এতে কোম্পানিগুলোর কার্যক্রম বেড়ে চলেছে। একটি সম্ভাবনাময় নতুন ভোক্তা শ্রেণি প্রসারিত হচ্ছে ও নতুন প্রযুক্তিতে সা¤্রাজ্য গড়ে উঠছে। বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠছে ধনীরা। ২০১৪ সালে ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতা গ্রহণ করেন। তখনই ভারত বিশ্বের ১০তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়। পরবর্তী সাত বছরে দেশটির অর্থনীতি ৪০ শতাংশ বেড়েছে। ভারতের চেয়ে ভালো করেছে চীন। কারণ একই সময়ে চীনের অর্থনীতি স¤প্রসারিত হয়েছে ৫৩ শতাংশ। বড় দেশগুলোর মধ্যে আট শতাংশ প্রবৃদ্ধিই হবে সবচেয়ে বেশি। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল জানিয়েছে, ২০২৭ সালের মধ্যে ভারত হবে বিশ্বের পঞ্চম অর্থনীতির দেশ। শেয়ারবাজারের হিসাবের দিক দিয়ে ভারতের অবস্থান যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও জাপানের পরেই। স্টার্ট আপের দিক থেকে ভারতে অবস্থান তৃতীয়। এর পরেই রয়েছে ভরত ও চীনের অবস্থান। যদিও এই পরিসংখ্যানের পিছনে রয়েছে উত্থান-পতন ও তিক্ত বিতর্ক। ২০১৬ সালে নরেন্দ্র মোদী সরকার উচ্চ মূল্যের ব্যাংক নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়। পরের নয় মাসে প্রবৃদ্ধি কমে ১০ থেকে পাঁচ শতাংশ। এতে ২০১৮ সালে দেশটির অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ২০২০ সালের প্রথম দিকে লকডাউনের ফলে জিডিপি সাময়িকভাবে এক চতুর্থাংশ কমে যায়। তবে মহামারির প্রকোপ এখন তুলনামূলকভাবে অনেক কমেছে। বেশ কয়েকটি বিষয় দেশটির অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে। সেগুলো হলো- একটি একক জাতীয় বাজারের গঠন, নবায়নযোগ্য শক্তিরভিত্তিতে শিল্পের বিকাশ, চীন থেকে সরবরাহ অন্যদিকে চলে যাওয়া ও লাখ লাখ মানুষের জন্য একটি উচ্চ-প্রযুক্তিগত সুরক্ষা ব্যবস্থা। ভারতের নতুন বৃদ্ধির প্যাটার্নের প্রথম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হলো একটি একক জাতীয় বাজারের উত্থান, যেখানে সংস্থাগুলো ও গ্রাহকরা আধুনিক আর্থিক ব্যবস্থা ব্যবহার করে। নগদ অর্থকে কেন্দ্র করে মূলত দেশটির ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। এ প্রক্রিয়ায় দেশটির দুই-তৃতীয়াংশ উৎপাদন হতো। কর্মসংস্থানে অবদান ছিল ৮৭ শতাংশ। কিন্তু মোদী ক্ষমতায় আসার এগেই এ সবখাতে অনেক সংস্কার হয়। তবে তিনি এসে এ সংস্কারকে ত্বরান্বিত করেছেন। অর্থনীতিতে অবকাঠমো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ২০১৪ সালে পর দেশটির জাতীয় হাইওয়ে নেটওয়ার্ক ৫০ শতাংশ বেড়েছে, প্লেনে অভ্যন্তরীণ যাত্রীর সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। মোবাইল ফোনভিত্তিক স্টেশনের সংখ্যা তিনগুণ বেড়েছে। ওয়াল স্ট্রিট প্রাইভেট-ইকুইটি সংস্থাগুলো ভারতজুড়ে নেটওয়ার্ক তৈরি করতে প্রতিযোগিতা করছে। দেশজুড়ে এরইমধ্যে একটি একক জাতীয় ডিজিটাল অবকাঠামো ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের জন্য সব ভারতীয়র জন্য বায়োমেট্রিক ব্যবস্থা, ইউপিআই নামে জাতীয় পরিশোধ ব্যবস্থা, দূর করা হয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রতিবন্ধকতা। ফলে দিন দিন বাণিজ্যিক কার্যক্রম প্রসারিত হচ্ছে। আধুনিক ব্যাকিং ব্যবস্থার ব্যবহারও বেড়েছে উলে­খযোগ্য হারে। বর্তমান ব্যবস্থায় কর ফাঁকি দেশটিতে খুবই কঠিন। এ বিষয়গুলো ভারতের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে। উচ্চ উৎপাদনশীল সংস্থাগুলোর জন্য সহায়ক ভ‚মিকা পালন করছে। ডিজিটাল পরিষেবার অর্থ হলো বেশিরভাগ লোকের ব্যবহার আনুষ্ঠানিক অর্থনীতিতে দক্ষতার সঙ্গে ঘটেছে। আধুনিক ব্যাকিং ব্যবস্থার কারণে উৎপাদন বেড়েছে। তবে ভারতের এ লক্ষ্যের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক স্থবিরতা মূল সমস্যা। ভারত তার চলতি হিসাবের ঘাটতি মেটাতে মূলধনের প্রবাহের ওপর নির্ভরশীল। দেশটিতে জ¦ালানি তেলের ব্যবহার বেড়েছে, যার প্রায় পুরোটাই আমদানি করা হয়। সুদের হার ও পণ্যের দাম বাড়লে অর্থনীতিতে অস্থিরতা তৈরি হয়। ভারতে এরইমধ্যে সুদের হার বাড়ার পাশাপাশি দেখা দিয়েছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি। তাছাড়া মোদী সরকারের নীতি নিয়েও অনেক ঝুঁকি তেরি হয়েছে। দেশটিতে ধর্মীয় সহিংসতা নিত্য দিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সা¤প্রতিক ঘটনাগুলো ভারতের জন্য খুবই হতাশাজনক। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে আরব রাষ্ট্রগুলো ভারতের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com