এফএনএস: সিলেট-সুনামগঞ্জসহ সারাদেশের বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় বহু সেনা সদস্যকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম সফিউদ্দিন আহমেদ। গতকাল রোববার দুপুরে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। জেনারেল এস এম সফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা করছি। সেনাবাহিনী, সরকারের সব অর্গান চেষ্টা করে যাচ্ছে। দুর্গম এলাকাগুলো থেকে পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধার করতে সেনাসদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। তারা চিকিৎসা ও খাদ্য সহায়তাও দিচ্ছে পানিবন্দি মানুষকে। সেনাপ্রধান বলেন, সিলেট ও সুনামগঞ্জে যারা কাজ করছেন তাদের আর কিভাবে আমরা সহযোগিতা করতে পারি, সেনাসদর থেকে আমরা কি করতে পারি, তা জানতেই এখানে এসেছি। আমরা কুমিলা, ময়মনসিংহ, সাভার ও ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকেও ফোর্স পাঠাচ্ছি, নানা সরঞ্জামাদি পাঠাচ্ছি। তিনি বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় এখনও অনেক সেনাসদস্যকে স্ট্যান্ডবাই করে রাখা হয়েছে। সেনাপ্রধান বলেন, বন্যার নেমে যাওয়ার পর ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন রেখে যাবে। সেসময় জনদুর্ভোগ কমাতে সেনাবাহিনীর পরবর্তী কার্যক্রমের প্রস্তুতি নিচ্ছে সেনাবাহিনী। বন্যা উপদ্রুত এলাকায় সেনা সদস্যদের সর্বোচ্চ ত্যাগের মনোভাব নিয়ে কাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। জেনারেল এস এম সফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের সম্মিলিতভাবে এই দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হবে। সবাই সহযোগিতার মনোভাব না দেখালে আমরা পিছিয়ে যাবো। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ সেনাসদস্যদের মাধ্যমে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার আবেদন জানিয়েছে। সেনাপ্রধান বলেন, পুরো বিষয়টি সমন্বয় করা করে ত্রাণ সহায়তা পৌছে দেওয়া হবে বানভাসী মানুষের কাছে। তিনি বলেন, আবহাওয়া অনুক‚লে থাকলে তিনি বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সুনামগঞ্জ জেলা পরিদর্শনেও যাবেন। সেনাপ্রধান জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মতো মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির একদল শিক্ষার্থীও সিলেটে এসে আটকা পড়েছিল। সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদের উদ্ধার করেছে। সেনাবাহিনীর উদ্ধার তৎপরতার কথা তুলে ধরে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম সফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রতিক‚ল ¯্রােত, ধারাবাহিক বৃষ্টি আর অন্ধকারের মধ্যেই দুর্গম এলাকা থেকে মানুষদের উদ্ধার করতে যতটুকু পারি আমরা চেষ্টা করছি। আমার ব্যক্তিগত উপস্থিতি এটাই নির্দেশ করে যে এই পরিস্থিতিকে সেনাবাহিনী সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। বন্যার্তদের উদ্ধারে নেত্রকোণায়ও নামল সেনাবাহিনী : সিলেট ও সুনামগঞ্জের পর বন্যার্তদের উদ্ধারে নেত্রকোণায়ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। জেলার হাওর উপজেলা খালিয়াজুড়ির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুল ইসলাম গতকাল রোববার বলেন, সেনাবাহিনীর ১৩০ জনের একটি দল এসেছে। তারা মদন উপজেলা থেকে আমাদের এখানে উদ্ধার অভিযান করবেন। তারা মদন সরকারি কলেজেই থাকবেন। হাওরাঞ্চলের জেলা নেত্রকোণায়ও প্রতিদিন বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। জেলার ১০টি উপজেলার মধ্যে ছয়টিই এর মধ্যে প্লাবিত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি প্লাবিত হয়েছে হাওর সংলগ্ন খালিয়াজুড়ি, কলমাকান্দা ও মোহনগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকা। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জেলার মোট ছয়টি উপজেলার ৩৯টি ইউনিয়ন বন্যার কবলে পড়েছে। এতে অন্তত দুই লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। স্থানীয় প্রশাসন এ নাগাদ বানভাসি মানুষদের জন্যে ১৮৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছে। ৪৭৩ হেক্টর জমির আউশ ও সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই অবস্থার মধ্যেই জেলা প্রশাসনের আহŸানে খালিয়াজুড়ি উপজেলায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। ইউএনও আরিফুল ইসলাম বলেন, “সেনাবাহিনী চারটি রেসকিউ বোট নিয়ে এসেছে। এই বোটের মাধ্যমেই বিভিন্ন জায়গায় যারা আটকা পড়েছেন তাদের উদ্ধার করবেন। এরইমধ্যে আমাদের এখানে উদ্ধার অভিযান শুরু হয়েছে। সবচেয়ে সব সমস্যা হচ্ছে, মানুষের গবাদিপশু ও সারা বছরের জমা ধান রয়েছে বাড়িতে। এ নিয়ে মানুষ খুব বিপদে আছেন। এগুলো রেখে তারা আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে চাচ্ছেন না। “এখন বড় নৌকাও পাওয়া যাচ্ছে না। উপজেলা প্রশাসন একটা বড় নৌকা সংগ্রহ করেছে। এটা দিয়ে অভিযান শুরু হচ্ছে। মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসার চেষ্টা হচ্ছে। ইউএনও আরও বলেন, উপজেলার সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থা রুয়াইল, মোমিনপুর, যোগীনগর, মুজিবনগর, আদাউড়া, আদিতপুর এলাকায়। ৫০টির বেশি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ২০ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দি রয়েছে।