এফএনএস : সরকার বিগত ২০০৪ সালে দেশে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন আইন করে। আর ওই আইনের আওতায় জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোষ্ঠী-লিঙ্গ নির্বিশেষে জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে নিবন্ধনের নির্দেশনা দেয়া হয়। পাশাপাশি মৃত্যুরও ৪৫ দিনের মধ্যে মৃত্যুসনদ সংগ্রহের আহŸান জানানো হয়। তারপর ১৮টি কাজের জন্য জন্মনিবন্ধন সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়। তখন ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন থেকে সহজেই হাতে লেখা জন্মনিবন্ধন সনদ সংগ্রহ করা সম্ভব হতো। তবে ২০০৬ সালে দেশে অনলাইন পদ্ধতিতে জন্মনিবন্ধন সনদ দেয়া শুরু হয়। কিন্তু ২০১৭ সালে দেখা যায় দেশের জনসংখ্যার চেয়ে বেশি মানুষ জন্মনিবন্ধন করেছে। অথচ প্রকৃতপক্ষে দেশের মাত্র ৩০ শতাংশ মানুষ জন্মনিবন্ধনের আওতায় এসেছে। মূলত একেকজন কয়েকবার নিবন্ধন করায় তা তা ১৮ কোটি ছাড়িয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে সরকার গত বছর আগস্ট মাসে সংশোধিত জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন আইন-২০২১ প্রণয়ন করে। তখন আরেকটি সার্ভার চালু করা হয়। ওই সময় ২০১২ সালের আগে যারা জন্মনিবন্ধন করেছিল নতুন সার্ভারে সেগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হবে না বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ফলে অন্তত ৭ কোটি জন্মনিবন্ধন বাতিল হয়ে যায়। আর সনদগুলো অন্তর্ভুক্ত না করার সিদ্ধান্তে দেশের সিটি করপোরশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ কোনো আপত্তি করেনি। অথচ তাদেরই পুরোনো সনদগুলো নতুন সার্ভারে তোলার দায়িত্ব ছিল। বর্তমানে জন্ম সনদ নিয়ে সাধারণ মানুষকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, পুরোনো নিবন্ধন সনদ নতুন ওয়েবসাইটে অন্তর্ভুক্ত করে নেয়ার সরকারি বিজ্ঞপ্তির বিষয় ভুক্তভোগীরা কখনোই জানতে পারেনি। ইলেক্ট্রনিক বা প্রিন্ট মিডিয়াতেও ওই সংক্রান্ত কোনো বিজ্ঞপ্তি দেখা যায়নি। অথচ বিপুলসংখ্যক মানুষের নিবন্ধন বাতিল করার তথ্যও গোপন রাখা হয়েছে। এমন অবস্থায় কারো কারোর অভিযোগ, সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলে ফায়দা লোটার জন্যই এমনটা করা হয়েছে। ওই সুযোগে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ে একটি অসাধু চক্র গড়ে উঠেছে। টাকা দিলেই তারা পুরোনো নিবন্ধন ওয়েবসাইটে অন্তর্ভুক্ত করছে। মেনকি সনদের ভুলভ্রান্তিও সংশোধন করে দিচ্ছেন। রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ে কর্মরত অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীই ওই চক্রের সদস্য। সূত্র জানায়, কোনো ঘোষণা না দিয়ে কোটি কোটি মানুষের জন্মনিবন্ধন কোনোভাবেই বাতিল করা হতে পারে না। কারোর জন্মসনদ বাতিল করতে হলে ওই ব্যক্তিকে অবহিত করতে হবে। তার অপরাধ কী জানাতে হবে। কারণ সবাই তো আর ভুল তথ্য দিয়ে জন্মনিবন্ধন করেনি। এমন পরিস্থিতির দায় রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়কেই দিতে হবে। কিন্তু কোনো ঘোষণা বা বিজ্ঞপ্তি প্রচার না করেই ২০১২ সালের আগের সারাদেশের জন্মনিবন্ধন সনদগুলো বাতিল করা হয়েছে। তবে আগের জন্মনিবন্ধন ব্যবহার করে যারা পাসপোর্ট ইস্যু বা অন্য কাজে ব্যবহার করেছে সেসব প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। সেজন্য তাদের নতুন পাসপোর্ট ইস্যু বা অন্যান্য সেবাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে সমস্যা হবে না। বিষয়টি রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত। সূত্র আরো জানায়, বিগত ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনের নতুন ওয়েবসাইট ও সার্ভার চালু করা হয়। আর ২০১২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে তা সম্পূর্ণরূপে কাজ শুরু করে। ওই সময় গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পুরোনো নিবন্ধিতদের জন্মনিবন্ধন সনদ নতুন ওয়েবসাইটে যুক্ত করে নেয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু অল্পকিছু মানুষ তা করলেও সিংহভাগ মানুষই করেনি। আর যারা করেনি তাদের জন্মনিবন্ধন সনদ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে গেছে। এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম জানান, সরকার দেশের সব মানুষের একটি তথ্য সংরক্ষণের চেষ্টা করছে। সেজন্যই আইন সংশোধন করে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনের কার্যক্রম সম্পূর্ণ অনলাইনে চালু করা হয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে তাতে মানুষের ভোগান্তি আরো বেড়েছে। খুব শিগগির এ ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তাতে আইনের পরিবর্তন প্রয়োজন হলে তাাও করা হবে। সরকারের লক্ষ্য থাকবে জন্মনিবন্ধন নিয়ে মানুষের যেন দুর্ভোগ না থাকে।