এফএনএস স্পোর্টস: বাংলাদেশের বিপক্ষে সবশেষ সিরিজে একবারও দুইশ ছুঁতে না পারা ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবার নিল তিনশ ছাড়ানো লক্ষ্য তাড়ার চ্যালেঞ্জ। রোমাঞ্চের নানা ধাপ পেরিয়ে সমীকরণ এসে দাঁড়াল, শেষ বলে পাঁচ রান। মোহাম্মদ সিরাজের দারুণ ইয়র্কার ঠিক মতো খেলতে পারলেন না রোমারিও শেফার্ড। শেষের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে নাটকীয় জয়ের আশা জাগিয়েও হতাশা নিয়েই ফিরলেন এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার। পোর্ট অব স্পেন শুক্রবার রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনার প্রথম ওয়ানডেতে ৩ রানে জিতেছে সফরকারীরা। ৩০৯ রানের লক্ষ্য দিয়ে ক্যারিবিয়ানদের থামিয়ে দিয়েছে ৩০৫ রানে। ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টানা ষষ্ঠ জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে এগিয়ে গেল ভারত। দুই দলের ফল হওয়া সবশেষ ১২ ম্যাচে এটি তাদের ১১তম জয়। অধিনায়ক হিসেবে প্রথম সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়ে ৯৭ রানে থামেন শিখর ধাওয়ান। তার সঙ্গে ফিফটি করেন শুবমান গিল ও শ্রেয়াস আইয়ারও। কাইল মেয়ার্সের ফিফটিতে ভালো শুরু করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পরে দলকে কিছুটা টানেন ব্র্যান্ডন কিং। শেষের দিকে টি-টোয়েন্টি ঘরানার ব্যাটিংয়ে আশা জাগিয়ে তুলেন শেফার্ড। কিন্তু শেষ বলে তিনি মেলাতে পারেননি সমীকরণ। ম্যাচের দিন সকালেও হয় এক পশলা বৃষ্টি। আকাশ ছিল মেঘে ঢাকা। পেসারদের জন্য ছিল আদর্শ কন্ডিশন। টস জিতে বােলিং নেন ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক। একই চাওয়া ছিল রোহিত শর্মার অনুপস্থিতিতে ভারত দলকে নেতৃত্ব দেওয়া ধাওয়ানেরও। নতুন বলে এলোমেলো বোলিং করে টস জেতার সুবিধা নষ্ট করেন ক্যারবিয়ান পেসাররা। প্রথম ছয় ওভারে তারা হজম করেন ছয়টি বাউন্ডারি। পাওয়ার প্লেতে ৭৩ রান তোলেন ধাওয়ান ও গিল। রান আউটে ভাঙে তাদের ১১৯ রানের উদ্বোধনী জুটি। পুরানের সরাসরি থ্রো স্টাম্প ভেঙে দিলে বিদায় নেন গিল। ৫৩ বলে খেলা তার ৬৪ রানের আক্রমণাত্মক ইনিংস গড়া দুই ছক্কা ও ছয় চারে। শ্রেয়াসের সঙ্গে ধাওয়ানের ৯৪ রানের আরেকটা চমৎকার জুটিতে বড় সংগ্রহের ভিত পায় ভারত। এক সময়ে দলটির সংগ্রহ ছিল ১ উইকেটে ২১৩। পরপর দুই ওভারে দুই থিতু ব্যাটসম্যানকে বিদায় করে ভারতকে বড় একটা ধাক্কা দেন গুডাকেশ মোটি। বাঁহাতি এই স্পিনারের বলে ব্যকওয়ার্ড পয়েন্টে ধরা পড়েন ধাওয়ান। থামে তিন ছক্কা ও ১০ চারে খেলা তার ৯৯ বল স্থায়ী ৯৭ রানের ইনিংস। পরের ওভারে শ্রেয়াসকে বিদায় করেন মোটি। ভারতীয় টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান পাঁচ চার ও দুই ছক্কায় ৫৭ বলে খেলেন ৫৪ রানের ইনিংস। এক সময়ে মনে হচ্ছিল সাড়ে তিনশ রানও সম্ভব। ক্যারিবিয়ানরা দারুণ বোলিংয়ে শেষ ১৫ ওভার ভারত যোগ করতে পারে কেবল ৮৩ রান। শেষের দিকে প্রত্যাশিত ঝড় তুলতে পারেননি কেউই। রান তাড়ায় শুরুতেই শেই হোপকে হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শামারাহ ব্র“কসকে নিয়ে স্বাগতিকদের এগিয়ে নিতে থাকেন মেয়ার্স। আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে দ্রুত রান তোলাতেই ছিল তার মনোযোগ। আরেক প্রান্ত সাবধানী ব্যাটিংয়ে সঙ্গ দিচ্ছিলেন ব্র“কস। শার্দুল ঠাকুরের আপাতত সাদামাটা এক ডেলিভারিতে সীমানায় ক্যাচ দিয়ে ভাঙে ১১৭ রানের জুটি। ভারতীয় পেসারের পরের ওভারে কট বিহাইন্ড হয়ে বিদায় নেন মেয়ার্স। ৬৮ বলে ১০ চার ও এক ছক্কায় বাঁহাতি এই ওপেনার। দুই ছক্কা মারলেও বিশের ঘরেই বিদায় নেন অধিনায়ক পুরান। দুই অঙ্কে যেতে পারেননি রভম্যান পাওয়েল। ৬৬ বলে দুটি করে ছক্কা ও চারে ৫৪ রান করে ফিরে যান ব্র্যান্ডন কিং। মনে হচ্ছিল ম্যাচ থেকে ছিটকে গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে আকিল হোসেনকে নিয়ে দলকে লড়াইয়ে ফেরান শেফার্ড। আশা জাগান শেষ ওভারে ১৫ রানের সমীকরণ মেলানোর। কিন্তু সিরাজের করা সেই ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তুলতে পারে কেবল ১১ রান। আজ রোববার একই মাঠে হবে দ্বিতীয় ওয়ানডে। সংক্ষিপ্ত স্কোর: ভারত: ৫০ ওভারে ৩০৮/৭ (ধাওয়ান ৯৭, গিল ৬৪, শ্রেয়াস ৫৪, সূর্যকুমার ১৩, স্যামসন ১২, হুডা ২৭, প্যাটেল ২১, শার্দুল ৭*, সিরাজ ১*; জোসেফ ১০-০-৬১-২, সিলস ৯-১-৫৪-০, শেফার্ড ৭-০-৪৩-১, মেয়ার্স ২-০-১৭-০, মোটি ১০-০-৫৪-২, আকিল ১০-০-৫১-১, পুরান ২-০-২৩-০)। ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৫০ ওভারে ৩০৫/৬ (হোপ ৭, মেয়ার্স ৭৫, ব্র“কস ৪৬, কিং ৫৪, পুরান ২৫, পাওয়েল ৬, আকিল ৩২*, শেফার্ড ৩৮*; সিরাজ ১০-০-৫৬-২, কৃষ্ণা ১০-১-৬২-০, শার্দুল ৮-০-৫৪-২, আকসার ৭-০-৪৩-০, হুডা ৫-০-২২-০, চেহেল ১০-০-৫৮-২)। ফল: ভারত ৩ রানে জয়ী। সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে ভারত ১-০তে এগিয়ে। ম্যান অব দা ম্যাচ: শিখর ধাওয়ান।