মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:১১ অপরাহ্ন

দীর্ঘসূত্রতার বৃত্তে বিপুলসংখ্যক চেক প্রতারণার মামলা

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় রবিবার, ৩১ জুলাই, ২০২২

এফএনএস : দীর্ঘসূত্রতার বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে বিপুলসংখ্যক চেক প্রতারণার মামলা। সারাদেশে শুধু নিম্ন আদালতেই প্রায় ৫ লাখ চেক জালিয়াতির মামলা রয়েছে। কিন্তু খুব কমসংখ্যক বাদীই ওসব মামলায় বিচারের মুখ দেখেছে। বিচারের দীর্ঘসূত্রতায় বিচারপ্রার্থীর চেকের টাকার চেয়ে মামলায় দ্বিগুণ খরচ হয়ে যাচ্ছে। বিচারপ্রার্থীদের মতে, চেক প্রতারণার মামলায় দীর্ঘদিন আদালতে ঘোরায় আইনের প্রতি আস্থা হারিয়ে যাচ্ছে। ভুক্তভোগী এবং আইনজীবীদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চেক ডিজঅনার মামলার অধিকাংশ বিবাদীই প্রভাবশালী ও বিত্তবান হয়ে থাকে। আর মামলা জামিনযোগ্য হওয়ায় আইনের ফাঁকফোকর ও উচ্চ আদালতের নির্দেশে আসামিরা বেরিয়ে যায়। ফলে অসংখ্য মামলা ঝুলে রয়েছে। ঢাকায় প্রতিদিন গড়ে শতাধিক ব্যক্তি চেক জালিয়াতির ফাঁদে পড়ে আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছে। আর এভাবে প্রতিবছর ৫০-৬০ হাজার মানুষ মামলার জালে আটকা পড়ছে। সূত্র জানায়, টাকা উদ্ধারের জন্য নেগোশিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট (এনআই) অ্যাক্ট-১৮৮১-এর ১৩৮ ধারায় চেক প্রতারণার মামলা করা হয়। উচ্চ আদালতের দেয়া রায় অনুসারে শুধুমাত্র যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারকরা চেক প্রতারণা মামলার বিচার করে থাকেন। ওসব মামলার অনুসন্ধান বা কোনো তদন্ত হয় না। ফলে মামলার বাদীকে পাওনার চেয়ে অনেক বেশি টাকা আইনজীবী ও আদালত-সংশ্নিষ্টদের পেছনে খরচ করতে হয়। উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একটি চেকের মামলার বিচারের ক্ষেত্রে ৩টি বিষয় বিবেচনা করা হয়। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে (চেক ইস্যুর ৬ মাসের মধ্যে) চেকটি ব্যাংকে নগদায়নের জন্য উত্থাপন করে প্রত্যাখ্যান হয়েছে কিনা, নির্দিষ্ট সময়ে বিবাদীকে নোটিশ দেয়া হয়েছে কিনা এবং সঠিক সময়ের মধ্যে মামলা করা হয়েছে কিনা। সূত্র আরো জানায়, চেক প্রতারণার জরিমানার টাকা কীভাবে আদায় হবে, বাদী কীভাবে তার পাওনা টাকা পাবেন আইনে তার কোনো সুনির্দিষ্ট বিধিবিধান বা ব্যাখ্যা নেই। এমন পরিস্থিতিতে চেক ডিজঅনার মামলার অনেক রায় অবাস্তবায়িত অবস্থায় রয়েছে। তার কোনো সমাধানও পাওয়া যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় বিচারপ্রার্থী মানুষের ভোগান্তি অবসানের লক্ষ্যে এনআই অ্যাক্টের ১৩৮ ধারা সংশোধন করা প্রয়োজন। আইন কমিশন যদিও ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর নেগোশিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট অ্যাক্টের বেশ কিছু সংশোধনীর সুপারিশ আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। কিন্তু ৫ বছর হতে চললেও তার কোনো অগ্রগতি নেই। এদিকে এ বিষয়ে আইনজীবীদের মতে, দেওয়ানি মামলায় মামলা মুলতবির বিষয়ে সময় নির্ধারণ করা হলেও ফৌজদারি মামলার বিচারের ক্ষেত্রে মুলতবির সময়সীমা নির্দিষ্ট নেই। ফলে এনআই অ্যাক্টের মামলার বিচারে দীর্ঘসূত্রতা বাড়ছে। মামলার আধিক্যের কারণেই অনেক পরে তারিখ পড়ছে। ওসব মামলা নিষ্পত্তিতে ট্রাইব্যুনাল গঠন প্রয়োজন। চেকের মামলা ১৩৮ ধারা অনুসারে খুবই সুনির্দিষ্ট। কিন্তু একেকটি মামলায় দীর্ঘদিন পরে তারিখ পড়ে। সেক্ষেত্রে একটি চেকের মামলা শেষ করতে ৫/৬ বছরও লেগে যায়। তারপর জজকোর্ট থেকে মামলা যায় হাইকোর্টে। এভাবে প্রায় ১০ বছর সময় পার হয়ে যায়। তারপরও বাদী টাকা পাবেন কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে যায়। আগে বেশি সংখ্যক আদালতে মামলা চলত। এখন শুধু যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালতে চেক প্রতারণার মামলার বিচার হয়। কিন্তু মামলার সংখ্যা এত বেশি যে নিষ্পত্তিতে সময় চলে যাচ্ছে। সেজন্য আদালতের সংখ্যা আরো বাড়ানো প্রয়োজন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com