বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:০৮ অপরাহ্ন

দেশে চলাচলরত ব্যাটারি রিকশায় খরচ হচ্ছে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় রবিবার, ৭ আগস্ট, ২০২২

এফএনএস : দেশজুড়ে চলাচলরত লাখ লাখ ব্যাটারি রিকশায় খরচ হচ্ছে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ। হাইকোর্টের একাধিক দফা নির্দেশনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নিষেধাজ্ঞার পরও ওসব রিকশা বন্ধ হচ্ছে না। বরং অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় কতিপয় নেতা এবং কিছু অসাধু পুলিশ ও চাঁদাবাজচক্রের যোগসাজশে ওসব রিকশা অবাধে চলছে। পুলিশের হিসাবে ঢাকাসহ সারা দেশে ৬০ লাখের বেশি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা রয়েছে। আর বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের জরিপের তথ্যানুযায়ী ওসব রিকশার ব্যাটারি চার্জে দিনে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ব্যয় হচ্ছে। আর যার অধিকাংশই মূল লাইন থেকে অবৈধ সংযোগের মাধ্যমে নেয়া হচ্ছে। ফলে ওই বিদ্যুতের অর্থ সরকার পাচ্ছে না। জ¦ালানি বিশেষজ্ঞদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে চুরি হওয়া বিদ্যুৎকে সিস্টেম লস হিসাবে দেখানো হয়। একটি ব্যাটারিচালিত রিকশা প্রতিদিন চার্জ বাবদ ৫ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ করছে। অথচ একটি ছোট পরিবার ওই বিদ্যুৎ দিয়ে লম্বা সময় চলতে পারতো। বর্তমানে দেশজুড়েই ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইককে কেন্দ্র করে চাঁদাবাজিসহ অবৈধ আয়ের পথ তৈরি হয়েছে। আর চাঁদার টাকায় অনেকেই ফুলেফেঁপে উঠেছে। মূলত চাঁদাবাজদের সহযোগিতায় দেশে গড়ে উঠেছে বিপুলসংখ্যক অবৈধ গ্যারেজ। আর ৯০ শতাংশ গ্যারেজেই ব্যবহার হচ্ছে অবৈধ বিদ্যুৎ। অধিকাংশ গ্যারেজ মালিক একটি রিকশার ব্যাটারি চার্জ করতে ১২০ টাকা করে আদায় করছে। সেখান থেকে তারা চাঁদা পরিশোধ করা হলেও তাদের কোনো বিল দিতে হচ্ছে না। সূত্র জানায়, শুধুমাত্র ঢাকাতেই ১০ লাখ ব্যাটারিচালিত রিকশা এবং ২ লাখের বেশি ইজিবাইক চলাচল করছে। আর সারা দেশে ব্যাটারির রিকশায় ৪০০ কোটি টাকার ব্যাটারি প্রয়োজন। সরকার ব্যাটারি তৈরি, আমদানি ও বিক্রির অনুমতি দিয়েছে। তাতে সরকার ট্যাক্স পায়, ব্যবসায়ীরা মুনাফা পাচ্ছে। ওসব যানবাহনের যন্ত্রাংশ বৈধভাবে বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীর মিরপুর, পল­বী, মুগদা, বাসাবো, হাজারীবাগ, জিগাতলা, কামরাঙ্গীরচর, দক্ষিণখান, মোহাম্মদপুর, তেজগাঁও, বাড্ডা, জুরাইন, যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, শনিরআখড়া, বাসাবো, মাদারটেকসহ রাজধানীর প্রায় সবএলাকাতেই ব্যাটারিচালিত রিকশা চলছে। সূত্র আরো জানায়, ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের প্রতিদিন মালিককে ৩২০ টাকা করে জমা দিতে হয়। আর গ্যারেজে চার্জ বাবদ ১২০ টাকা গ্যারেজ মালিকই বহন করে। পুলিশ ওসব রিকশা ধরলে টাকা না দিলে ডাম্পিং করে দেয়। আর ডাম্পিং থেকে ছাড়াতে হলে ৪ হাজার টাকার বেশি খরচ হয়। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বস্তি ও সরকারি খাস জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে অসংখ্য গ্যারেজ। প্রতিটি গ্যারেজে ৫০ থেকে ১০০ রিকশা রয়েছে। ওসব গ্যারেজে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হচ্ছে। একটি রিকশায় ৪টি ব্যাটারি থাকে। বৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে ওসব ব্যাটারি চার্জ দিলে মাসে অনেক টাকা বিল আসবে। কিন্তু তার বদলে গ্যারেজ মালিকরা বিদ্যুতের খাম্বা থেকে লাইন টেনে অবৈধভাবে গ্যারেজে ব্যাটারিচালিত রিকশা চার্জ দিচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় কতিপয় রাজনৈতিক নেতা ও অসাধু পুলিশকে মাসোহারা দিয়েই অবৈধভাবে গ্যারেজ পরিচালনা করা হচ্ছে। এদিকে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক প্রসঙ্গে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান জানান, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় কী পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ হয় তা সঠিক পরিসংখ্যান সরকারের কাছে নেই। ওসব অটোরিকশাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে অবৈধ গ্যারেজ বাণিজ্য। অবৈধ লাইন টেনে ওসব গ্যারেজ চালানো হচ্ছে। তাতে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। ঝুঁকিপূর্ণ ওসব যানবাহন পর্যায়ক্রমে বন্ধ করে দেয়া জরুরি। অন্যদিকে এ বিষয়ে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন সংশ্লিষ্টদের মতে, সিটি করপোরেশন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। যাতে লাইসেন্সবহির্ভূত রিকশা না চলে। আর আইনবহির্ভূত রিকশা পুলিশের সহায়তা নিয়ে ডাম্পিংয়ে দেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার ফারুক হোসেন জানান, সারা দেশে ৬০ লাখের বেশি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা রয়েছে। রাজধানীতে আছে প্রায় ১২ লাখ। প্রতিটি রিকশায় বৈধভাবে চার্জ দেয়ার জন্য মাসে বড় অঙ্কের টাকা ব্যয় হয়। ওসব রিকশা রাজধানীর অলিগলিতে চলে। তবে মূল সড়কে উঠলেই ডাম্পিং করা হয়। তাছাড়া ডিএমপি একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে অবৈধ গ্যারেজ বন্ধে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। বিভিন্ন অভিযানে ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলো আটক হলেও নির্দিষ্ট টাকায় ছাড়িয়ে এনে ফের সড়কে নামানো হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com